×

জাতীয়

রাজনৈতিক দলের ভোট ভাবনা: চারটি বিষয়ে ১৩ দফা প্রস্তাব দেবে বিএনপি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১২ অক্টোবর ২০২১, ০৮:২৭ এএম

রাজনৈতিক দলের ভোট ভাবনা: চারটি বিষয়ে ১৩ দফা প্রস্তাব দেবে বিএনপি

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)

নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনকে নিরপেক্ষ করার ওপর জোর দিচ্ছে বিএনপি। এ লক্ষ্যে ৪ বিষয়ে ১৩ দফার একটি মাইলফলক প্রস্তাব দেবে দলটি। বিষয়গুলো হচ্ছে- নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে চলমান পার্লামেন্ট ভেঙে দেয়া, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন, নির্বাচনে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতাসহ সেনাবাহিনী মোতায়েন ও দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ সব পর্যায়ের নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার। এ বিষয়গুলোর ভিত্তিতে নিজ অবস্থান থেকে নির্বাচন কমিশনকে ডজনখানেকের বেশি প্রস্তাব দেয়া হবে। বিএনপির সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে আলাপ করে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

বিশ্লেষকরা বলেছেন, জাতীয় সংসদে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের রয়েছে নিরষ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা। সে তুলনায় বিএনপি জোটের প্রতিনিধিত্ব নামমাত্র। তাই আওয়ামী লীগ রাজি না হলে ইসির পক্ষে প্রয়োজনীয় আইনের সংশোধনসহ বিরোধী প্রস্তাবের প্রতি গুরুত্ব দেয়া সহজ হবে না। তবে বিএনপির নেতারা মনে করছেন, নিরপেক্ষ লোক দিয়ে কমিশন গঠন হলেই নির্বাচনকালীন সরকারের দাবি অনেকাংশে মিটে যাবে। কমিশন শক্তিশালী থাকলে সরকারের প্রভাব বলয় থেকে দূরে থাকা যাবে। এ কারণেই সব প্রস্তুতি আগাম সেরে রাখতে চান তারা।

জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সরকার চাইলে বিএনপি আলোচনায় বসতে রাজি। তবে তা হতে হবে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের এক এজেন্ডাতেই। তিনি বলেন, নির্বাচনকালীন সরকারের নাম নিয়ে আপত্তি নেই, তবে নির্বাচনকালীন যে সরকার থাকবে তা কোনো দলীয় সরকার হবে না।

ফখরুল বলেন, নির্বাচন কমিশন যদি ভালোও হয়, সরকার তাদের সহযোগিতা না করলে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। এর আগেও সার্চ কমিটি দিয়ে কমিশন গঠন করা হয়েছে। সার্চ কমিটির নামে নিজস্ব লোক দিয়ে কমিশন গঠন করা হয়। সার্চ কমিটি একটি ধোঁকা। তিনি বলেন, আমরা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াগুলো কাজে লাগাতে চাই। ইসি বাস্তবতা উপলব্ধি করে সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা নেবে বলে আমরা আশা করি। ইসির সংলাপে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে সব সমস্যা সমাধান হওয়া অত্যন্ত জরুরি। সূত্র জানায়, সম্প্রতি বিএনপির নির্বাহী কমিটির বৈঠক শেষে গত ২৫ সেপ্টেম্বর বিকালে ইসিকে একটি প্রস্তাব দেয়ার বিষয়ে সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সবার সম্মতিতে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এবং সরাসরি বিএনপির রাজনীতিতে যুক্ত নন এমন তিনজন ব্যক্তি এই প্রস্তাব নিয়ে কাজ করছেন।

বিএনপির নেতারা জানান, প্রস্তাব দিলেই সরকার তা বিবেচনায় নিয়ে নির্বাচন কমিশন (ইসি) পুনর্গঠনে কাজে লাগাবে এমনটি তারা বিশ্বাস করেন না। তবুও বিএনপি কী চায়- তা সবার কাছে পরিষ্কার করতে চায়। বিএনপি বর্তমান কমিশনকে অথর্ব আখ্যা দিয়ে একাধিকবার বলেছে, এ ধরনের কমিশন দিয়ে কখনো সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। তাহলে কেমন কমিশন বিএনপি প্রত্যাশা করে, সে প্রশ্নও সামনে আসে। এ জন্য একটি রূপরেখা দলটি প্রস্তাব করতে যাচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ‘নির্বাচন কমিশনকে অধিকতর শক্তিশালী করার লক্ষ্যে করণীয়’ শিরোনামে প্রস্তাবনার খসড়া তৈরি হচ্ছে। এ লক্ষ্যে ৬৪ জেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কাছে ভোটার তালিকা সংশোধন, সীমানা পুনর্নির্ধারণ, ভুয়া ভোটার চিহ্নিতকরণসহ বেশ কিছু বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ শুরু হয়েছে। সূত্র মতে, নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠনে পাঁচ সদস্যের সার্চ কমিটি গঠনের প্রক্রিয়ার ব্যাপারে বিএনপি কিছু পরামর্শ দেবে। এছাড়া নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর প্রশাসনের করণীয়, নির্বাচনী আইন সংস্কার, ভোট দেয়ার কিছু নিয়ম পরিবর্তন, ইভিএম বাতিল, পর্যবেক্ষকদের জন্য নীতিমালা সংশোধনসহ ভোট নেয়া থেকে গণনা পর্যন্ত কিভাবে নির্বিঘ্নে করা যায় তার একটি রূপরেখা থাকবে ওই প্রস্তাবে।

এ ছাড়া নির্বাচনের সময় স্বরাষ্ট্র, অর্থ, তথ্য, জনপ্রশাসন, স্থানীয় সরকার, শিক্ষা, পররাষ্ট্র এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় যাতে ইসির চাহিদা অনুযায়ী কার্যকরী ব্যবস্থা নেয়- তা নিশ্চিত করার দাবি থাকবে প্রস্তাবে। রাজনৈতিক দলের নেতা কিংবা দলের প্রতি আনুগত্য আছে, এমন কোনো সংস্থার প্রতিনিধিকে পর্যবেক্ষক হিসেবে নিয়োগ না দেয়া, তফসিল ঘোষণার ৩০ দিন আগে পর্যবেক্ষকের তালিকা প্রণয়ন এবং সাতদিন আগে তাদের নাম ও পরিচয় তুলে ধরার প্রস্তাব দেয়া হবে। প্রস্তাবটি ঘষাঁমাজা করে রেখে দেয়া হবে। ইসির সংলাপে আমন্ত্রণ পেলে সেখানে তুলে ধরা হবে। তা না হলে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে উপস্থাপন ধরা হবে। এর একটি কপি রাষ্ট্রপতির কাছেও দেয়া হতে পারে।

জানা গেছে, শুধু প্রস্তাব নয়; পাঁচ সদস্যের সার্চ কমিটিতে অবসর নেয়ার পর লাভজনক কোনো পদে ছিলেন না আপিল বিভাগের এমন এক বা একাধিক বিচারপতি, অবসর নেয়ার পর সরকারের লাভজনক কোনো পদে ছিলেন না প্রশাসনের এমন এক বা একাধিক আমলা ও বিতর্কিত নন সুধীসমাজের এমন প্রতিনিধিকে অন্তর্ভুক্ত করার পরামর্শ দেবে বিএনপি। এক্ষেত্রে একটি পদের বিপরীতে সার্চ কমিটি কর্তৃক দুজনকে বাছাই এবং চার নির্বাচন কমিশনার পদে আটজনের নাম প্রস্তাব করার পরামর্শ দিতে চায় বিএনপি। এদের মধ্যে সাবেক প্রধান বিচারপতি, বিচারপতি, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি এবং একজন নারী ব্যক্তিত্ব থাকতে পারেন।

এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার বলেন, নির্বাচন কমিশন শক্তিশালী ও নিরপেক্ষ করার জন্য রাষ্ট্রপতিকে জোরালো সুপারিশ করা ছাড়া উপায় নেই। নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করার বিষয়ে আগেও বিএনপি মতামত দিয়েছে। তার সঙ্গে এবার হয়তো আরো কিছু যোগ হবে।

দলের আরেক নীতিনির্ধারক ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, সুষ্ঠ নির্বাচনের স্বার্থে নিরপেক্ষ কমিশন গঠন জরুরি। গত নির্বাচনের মতো এবারো বিএনপির পক্ষ থেকে প্রস্তাব দেয়ার আলোচনা থাকলেও এ বিষয়ে এখনো দলীয় সিদ্ধান্ত হয়নি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App