×

জাতীয়

কিডনি বেচার জন্য শতাধিক মানুষকে পাশের দেশে পাচার

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১২ অক্টোবর ২০২১, ০৩:২৮ পিএম

কিডনি বেচার জন্য শতাধিক মানুষকে পাশের দেশে পাচার

মঙ্গলবার কিডনি কেনাবেচা চক্রের অন্যতম হোতা শাহরিয়ার ইমরানসহ গ্রেপ্তার ৫ সদস্য। ছবি: ভোরের কাগজ

কিডনি বেচার জন্য শতাধিক মানুষকে পাশের দেশে পাচার

অবৈধভাবে কিডনি কেনাবেচা চক্রের ৫ সদস্য গ্রেপ্তারের পর মঙ্গলবার র‌্যাবের সংবাদ সম্মেলন। ছবি: ভোরের কাগজ

চক্রটি এ পর্যন্ত শতাধিক মানুষকে কিডনি বেচার জন্য পাশের দেশে পাচার করেছে। কিডনি কেনাবেচার এই চক্রের অন্যতম হোতাসহ ৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব।

র‍্যাব-২ ও ৫ এবং র‍্যাব সদরদপ্তরের গোয়েন্দা শাখার যৌথ অভিযানে সোমবার (১১ অক্টোবর) দিবাগত রাত থেকে মঙ্গলবার (১২ অক্টোবর) সকাল পর্যন্ত জয়পুরহাট ও রাজধানীর নর্দা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়।

গ্রেপ্তার পাঁচ জন হলো- চক্রের হোতা মো. শাহরিয়ার ইমরান আহম্মেদ, মো. মেহেদী হাসান, মো. সাইফুল ইসলাম, মো. আব্দুল মান্নান, ও মো. তাজুল ইসলাম ওরফে তাজু।

অভিযানের সময় তাদের কাছ থেকে ভুক্তভোগীদের ৪টি পাসপোর্ট, মেডিকেল চিকিৎসার জন্য পাসপোর্ট, ভিসা সম্পর্কিত বেশকিছু কাগজপত্র, ৫টি মোবাইল ও দেশি-বিদেশি মুদ্রা জব্দ করা হয়।

চক্রটি প্রতিটি কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য রোগীদের কাছ থেকে নিত ১৫-২০ লাখ টাকা। তবে কিডনি দাতাদের ৩-৪ লাখ টাকা দেয়ার কথা বললেও দেয়া হতো ২ লাখ টাকা। চক্রটি এ পর্যন্ত প্রায় শতাধিক মানুষকে কিডনি বিক্রির জন্য পার্শ্ববর্তী দেশে পাচার করেছে। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের গরীব ও অভাবী মানুষরাই তাদের টার্গেট। তাদের অর্থনৈতিক দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে টাকার লোভ দেখিয়ে কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশনের জন্য প্রলুব্ধ করা হতো।

[caption id="attachment_312349" align="aligncenter" width="700"] অবৈধভাবে কিডনি কেনাবেচা চক্রের ৫ সদস্য গ্রেপ্তারের পর মঙ্গলবার র‌্যাবের সংবাদ সম্মেলন। ছবি: ভোরের কাগজ[/caption]

এ চক্রকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে মঙ্গলবার (১২ অক্টোবর) দুপুরে কারওয়ান বাজার র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে র‍্যাবের লিগ্যাল আ্যন্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, সদস্যরা অনলাইনে বিভিন্ন প্রচার প্রচারণার মাধ্যমে গ্রাহক ও ডোনারদের আকৃষ্ট করছে। একইসঙ্গে অপরাধের নেটওয়ার্ক বিস্তৃত করছে। ফলে র‍্যাব গোয়েন্দা নজরদারী বাড়িয়ে তাদের গ্রেপ্তারের আওতায় আনা হয়।

আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে তিনি আরো জানান, চক্রের মোট সদস্য সংখ্যা ১৫-২০ জন। তারা ৩টি ভাগে বিভক্ত হয়ে অবৈধ কিডনি কেনাবেচার সম্পূর্ণ কার্যক্রম সম্পন্ন করে। চক্রের প্রথম গ্রুপ ঢাকায় অবস্থান করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশন প্রয়োজন এমন বিত্তশালী রোগীদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে। চক্রের দ্বিতীয় দলটি প্রথম দলের চাহিদা মোতাবেক দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের গরীব ও অভাবী মানুষদের চিহ্নিত করে এবং তাদের অর্থনৈতিক দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে অর্থের বিনিময়ে কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশনের জন্য ডোনাদের প্রলুব্ধ করে ঢাকায় নিয়ে আসে। পরবর্তীতে তৃতীয় গ্রুপ প্রলোভনের শিকার ভুক্তভোগী কিডনি ডোনারদের ঢাকায় বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশন রোগীর সঙ্গে ব্লাড ম্যাচিং ও অন্যান্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা সম্পন্ন করে। ব্লাড ম্যাচিং ও অন্যান্য ডায়াগনস্টিক টেস্টে কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশনের উপযুক্ততা নিশ্চিত হওয়ার পর তার পাসপোর্ট, ভিসা প্রসেসিং ও ভুয়া কাগজপত্র তৈরির মাধ্যমে ভক্তভোগী ডোনারকে পার্শ্ববর্তী দেশে পাঠানোর জন্য প্রস্তুত করা হয়। মঈন বলেন, এই চক্রের সঙ্গে পার্শ্ববর্তী দেশে অবস্থানকারী আরেকটি চক্র পারস্পরিক যোগসাজশে ভুক্তভোগী কিডনি ডোনারকে বিদেশের এয়ারপোর্ট অথবা স্থলবন্দরে রিসিভ করা থেকে শুরু করে হাসপাতালের ডকুমেন্টেশন, অস্ত্রোপচারসহ যাবতীয় কার্যক্রম শেষে ভিকটিমদের বৈধ কিংবা অবৈধ উপায়ে বিমান ও উত্তর পূর্বাঞ্চলের সীমান্ত এলাকার মাধ্যমে দেশে ফেরত পাঠায়।

চক্রের মূলহোতা ও অন্যতম আসামি শাহরিয়ার ইমরান আহম্মেদ পার্শ্ববর্তী দেশে অবস্থানরত কিডনি কেনাবেচা চক্রের সঙ্গে পারস্পরিক সহযোগিতায় একটি দালাল চক্র প্রতিষ্ঠা করে অনলাইনের মাধ্যমে আগ্রহী বিত্তশালী কিডনি রোগী এবং বিভিন্ন এলাকা থেকে স্থানীয় দালালদের মাধ্যমে কিডনি ডোনার সংগ্রহসহ যাবতীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করতেন। ইমরান ফেসবুকে ‘বাংলাদেশ কিডনি ও লিভার পেশেন্ট চিকিৎসা সেবা’ এবং ‘কিডনি লিভার চিকিৎসা সেবা’ নামের দুটি পেজের এডমিন। এ পর্যন্ত তিনি কিডনি বিক্রির জন্য শতাধিক মানুষকে পার্শ্ববর্তী দেশে পাচার করেছেন। চক্রের অন্যতম সদস্য আব্দুল মান্নান মূলত ভুক্তভোগী কিডনি ডোনারদের অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে এই অনৈতিক কাজে প্রলুব্ধ করত। ইতোপূর্বেও এই অপরাধের জন্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে গ্রেফতার হন তিনি। তার বিরুদ্ধে মানবদেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন আইনে ৬টির বেশি মামলা রয়েছে।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে কমান্ডার মঈন বলেন, দেশের হাসপাতালের তথ্য আমরা পায়নি। তবে তারা পার্শ্ববর্তী দেশে কোন হাসপাতাল-ক্লিনিকে কিডনি প্রতিস্থাপন করতেন সে বিষয়ে জানতে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে আসামিদের।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App