×

সারাদেশ

সোনালি আঁশের সোনালি দিনের অপেক্ষায় চাঁপাইয়ের চাষিরা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১১ অক্টোবর ২০২১, ০৮:১৯ এএম

সোনালি আঁশের সোনালি দিনের অপেক্ষায় চাঁপাইয়ের চাষিরা

পাটচাষি

সোনালি আঁশখ্যাত পাটের সুদিন ফিরতে শুরু করেছে চাঁপাইনবাবগঞ্জে। বাজারে ভালো দাম আর চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দিন দিন বাড়ছে পাটের চাষ। চলতি মৌসুমের শুরুতেই পাট বিক্রি করে ভালো দাম পাচ্ছেন কৃষকরা। ফলনও হয়েছে বেশ ভালো। ভালো ফলন ও আশানুরূপ দামে জেলার কৃষকদের মুখে হাসি ফুটেছে। স্থানীয় কৃষি বিভাগ বলছে- চাঁপাইনবাবগঞ্জে গত বছরের থেকে এবার দ্বিগুণ জমিতে পাটের চাষ হয়েছে। গত বছর শেষদিকে ভালো দাম পাওয়ায় এবার পাট চাষে ঝুঁকেছেন কৃষকরা।

আবহাওয়া ও পরিবেশ অনুকূলে থাকায় এ জেলায় পাটের আবাদ ও উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ফলনও হয়েছে বাম্পার। কৃষকরা জানায়, জেলার হাটবাজারে প্রতি মণ পাট ২৫০০-২৭০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ভালো ফলন ও আশানুরূপ দাম পেয়ে গেল বছর লোকসানে পড়া কৃষকদের মুখে সন্তুষ্টির হাসি দেখা গেছে। পাট কাটা, আঁশ ছাড়ানো, ধোয়া ও শুকাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন জেলার কৃষকরা। চাঁপাইনবাবগঞ্জের অনেক গ্রামে এখন এই দৃশ্য চোখে পড়ছে। পাট শুকানোর জন্য বেছে নেয়া হয়েছে বাঁশের আড়া ও ব্রিজের রেলিং। সম্প্রতি মহানন্দা নদীর উপর নির্মিত শেখ হাসিনা সেতুর দক্ষিণ পাশের সংযোগ সড়কের ব্রিজের রেলিংয়ে পাট শুকাতে দেখা গেছে।

জানা যায়, স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জে বিপুল পরিমাণ জমিতে পাটের আবাদ হতো। নৌপথে নিয়ে যাওয়া হতো বাজারে। অসংখ্য কৃষক পাট চাষে নির্ভরশীল ছিল। কিন্তু দীর্ঘদিন ভালো দাম না পাওয়ায় পাট চাষে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছিলেন জেলার অধিকাংশ কৃষক। তবে গত বছরের শেষ দিক থেকে পাটের বাজার মূল্য ভালো হওয়ায় জেলায় এবার আবাদ বেড়েছে। বর্তমান বাজারে নতুন পাট প্রকারভেদে আড়াই হাজার থেকে তিন হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে।

স্থানীয় পাটচাষি রবিউল ইসলাম বলেন, এ বছর দেড় বিঘা জমিতে পাট আবাদ করেছিলাম ১০ কাঠার পাট কেটে বিক্রি করে দাম পেয়েছি ১৩ হাজার টাকা। আর এক বিঘা জমির পাট কেটে জাগ দিচ্ছি। এবার পাটের ফলন ও দাম বেশ ভালো। আশা করছি, এক বিঘা জমির পাটে প্রায় আরো ২৫-৩০ হাজার টাকা পাব। আর আমার তিন বিঘা জমির পাট চাষে মোট খরচ হয়েছে ১৫ হাজার টাকা।

উপজেলার তোসিকুল ইসলাম নামে এক পাটচাষি বলেন, পাট চাষে খরচ খুবই কম, তাই প্রতি বছর পাট চাষ করি এবার তিন বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছিলাম। ফলন বেশি হওয়ায় সব কার্যক্রম শেষ করতে পারিনি। বর্তমানে এক বিঘা জমির পাট জাগ দিচ্ছি। আর দুই বিঘা জমির ২১ মণ পাট বিক্রি করেছি ২৭০০ টাকা মণ দরে।

হরিপুর এলাকার মাহবুব নামে আরও এক পাট চাষি বলেন, তিনি ১২ কাঠা জমিতে পাট চাষ করেছিলেন। এ বছর এতে পাট হয়েছে প্রায় পাঁচ মণ। বিক্রি করেছেন সাড়ে ১২ হাজার টাকায়। আর পাটখড়ি হয়েছে সাড়ে তিন মণ বিক্রি করেছেন এক হাজার টাকায়।

কানসাটের পাট আড়তদাররা জানায়, গত বছর এ সময় পাট কিনেছিলাম ১২০০-১৩০০ টাকা মণ, এবার করছি ২৫০০-২৭০০ টাকা মণ দরে। আর পাটখড়ি ক্রয় করছি ২৫০-৩০০ টাকা মণ দরে। পাটের দাম এ বছর প্রথম থেকেই ভালো।

এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শরিফুল ইসলাম জানান, এক সময় বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অর্থকরী পণ্য ছিল পাট। তবে কয়েকটি কারণে পণ্যটির উৎপাদন ও রপ্তানিতে ভাটা পড়ে। সরকারি নির্দেশনায় কৃষি অফিস পাটের সোনালি অতীত ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। চাষিদের প্রযুক্তিগত সহায়তা ও স্বল্প খরচে উচ্চ ফলনশীল পাট উৎপাদন করতে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। ফলে পাট চাষে আগ্রহ বাড়ছে ও পাটের ন্যায্যমূল্যও পাচ্ছেন কৃষকরা।

গত বছরের মতো এ বছরও কৃষকরা পাটের দাম ভালো পাবে বলে আশা করছি। এ ছাড়া আগামীতে আরও বেশি জমিতে পাটের চাষ হবে। তিনি জানান, পাটজাত দ্রব্যের চাহিদাও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। পাট থেকে ১৩১ ধরনের পণ্য উৎপাদন করা হচ্ছে। বিদেশে এ পণ্যগুলোর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। পলিথিন ব্যবহারের পরিবর্তে সব ক্ষেত্রে পাটের ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারলে আমাদের পরিবেশ রক্ষা পাবে, পাশাপাশি পাটের হারানো ঐতিহ্যও ফিরে আসবে।

এ ব্যাপারে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম ভোরের কাগজকে জানান, চলতি বছর জেলায় তিন হাজার ৯৫ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। জেলার পাঁচ উপজেলার মধ্যে সদর ও শিবগঞ্জ উপজেলায় এবার পাট চাষ বেশি। গত বছর শেষ দিকে ভালো দাম পাওয়ায় এবার পাট বেশি চাষ করেছিলেন চাষিরা। এবারো দাম বেশ ভালো, চাষিরা অনেক লাভবান হবেন। তিনি জানান, গত বছর এ জেলায় পাট চাষ হয়েছিল এক হাজার ৭৬৫ জমিতে। ধান আবাদের চেয়ে লাভজনক হওয়ায় পাট চাষে আগ্রহ বেড়েছে কৃষকদের।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App