×

সম্পাদকীয়

ভাসানচর সমাধান নয়, প্রত্যাবাসনে গুরুত্ব দিতে হবে

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১১ অক্টোবর ২০২১, ১২:৪৮ এএম

ভাসানচর সমাধান নয়, প্রত্যাবাসনে গুরুত্ব দিতে হবে

রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের একমাত্র পথ তাদের দ্রুত মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো। এর বিকল্প কিছু নেই। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে এ উদ্যোগ কাজে দিচ্ছে না। বরং ভাসানচরকে রোহিঙ্গা পুনর্বাসনে জাতিসংঘ বেছে নিয়েছে। রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থান দেয়া এটি স্থায়ী কোনো সমাধান নয়। যদি তাদের সেখানে বা কুতুপালংয়ে বা কক্সবাজারের অন্যান্য জায়গায় বা বাংলাদেশের অন্য কোথাও স্থায়ী বসবাসের ব্যবস্থা করা হয়, তার অর্থ দাঁড়ায় মিয়ানমারের অপকর্মকে প্রশ্রয় দেয়া। এটা মেনে নেয়া ভুল হবে। জানা গেছে, সরকার কক্সবাজারের ওপর থেকে চাপ কমাতে এক লাখ রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে সরিয়ে নেয়ার লক্ষ্য ঠিক করেছে। এ পর্যন্ত ছয় দফায় ১৮ হাজার ৫২১ জন রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে নেয়া হয়েছে। কক্সবাজার থেকে প্রায় ৮০ হাজার রোহিঙ্গাকে আগামী তিন মাসের মধ্যে ভাসানচরে স্থানান্তর করা হবে। স্থানান্তরের এ প্রক্রিয়া সাময়িক। আমাদের স্থায়ী সমাধানের দিকে জোর দিতে হবে। বর্তমানে বাংলাদেশে ১১ লাখ রোহিঙ্গা আশ্রিত। তাদের প্রতি সমবেদনা এবং মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ার জন্য বাংলাদেশের প্রতি সংহতি এবং রোহিঙ্গাদের স্বদেশে প্রত্যাবাসনের তাগিদ জানিয়ে আসছে বিশ্ব সম্প্রদায়। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে রাজি হয়েছে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ। দুই দফা সময় দিয়েও তারা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়নি। রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে ভারত, চীন, রাশিয়ার উদ্যোগ নেই বললেই চলে। এ অবস্থায় বাংলাদেশ নিয়মিত কূটনীতির অংশ হিসেবে বিশ্বের বিভিন্ন ফোরামে রোহিঙ্গা সংকটের বিষয়টি জোরালোভাবে উত্থাপন করলেও সবাই চুপচাপ শুনছে, কোনো প্রতিক্রিয়া বা পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না। বাংলাদেশ শান্তিপূর্ণ পরিবেশে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে চায়। বাংলাদেশ এ সংকটের একটি স্থায়ী সমাধানের আশা করছে। সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের ফাঁকে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে একটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠক করেছেন। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, রোহিঙ্গা সংকট একটি আন্তঃসীমান্ত এবং আঞ্চলিক সমস্যা। সুতরাং এ মানবিক সংকটের সমাধান করা বিশ্বের দায়িত্ব। বিশ্ব নেতাদের ভূমিকা না থাকায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের অগ্রগতি অনেকটা থেমে গেছে। এর মধ্যে রোহিঙ্গারা ক্যাম্পে নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। তা আমাদের জন্য অবশ্যই উদ্বেগের। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন না হলে স্বাভাবিকভাবেই সন্ত্রাসবাদের উত্থান হবে। খুন, ধর্ষণ, মাদক পাচার, শিশু পাচার, ডাকাতি, অপহরণ, পতিতাবৃত্তিসহ সব ভয়ংকর অপরাধের আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে রোহিঙ্গারা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মূলত চারটি কারণেই প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া ঝুলে আছে। মিয়ানমার নিজেরাই রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে চায় না, রোহিঙ্গাদের নিয়ে কাজ করা এনজিওগুলো চায় না, ইসলামী মৌলবাদী গোষ্ঠী চায় না এবং রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়ার বিষয়টি মিয়ানমার যেভাবে এড়িয়ে যাচ্ছে তাতে গোপনে সমর্থন জানাচ্ছে চীন-রাশিয়ার মতো বৃহৎ শক্তি। এমনকি বিশ্বব্যাংকের মতো বৈশ্বিক সংস্থাও রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশের মূল জনগোষ্ঠীর সঙ্গে আত্তীকরণের উদ্ভট প্রস্তাব দিয়েছে। এই হাওয়ায় তাল দিচ্ছে জাতিসংঘও। তাদের অনাগ্রহের কারণে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া ঝুলে আছে। এর দায় কেউ এড়াতে পারবে না। মানবিক কারণেই প্রতিবেশী মিয়ানমারের নাগরিকদের বাংলাদেশে আশ্রয় দেয়া হয়েছে। এই বিপুলসংখ্যক মানুষের বাড়তি দায়িত্ব বাংলাদেশের জন্য অবশ্যই বড় বোঝা। এ অঞ্চলে দীর্ঘস্থায়ী শান্তি, স্থিতি এবং নিরাপত্তার জন্য রোহিঙ্গা ইস্যুর রাজনৈতিক সমাধান অপরিহার্য।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App