×

জাতীয়

পূজার লগ্ন শুরু, উচ্ছ্বসিত ভক্তরা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১১ অক্টোবর ২০২১, ০৯:০১ এএম

পূজার লগ্ন শুরু, উচ্ছ্বসিত ভক্তরা

মহাষষ্ঠীর মাধ্যমে আজ শুরু হচ্ছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসব। ইতোমধ্যেই শেষ হয়েছে বিভিন্ন পূজামণ্ডপের সাজসজ্জা। গতকাল চট্টগ্রাম নগরীর হাজারী গলি থেকে তোলা ছবি।

মন্দির ও মণ্ডপের আশপাশে ঠুকঠাক শব্দে এখন কান পাতা দায়। আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা পরই সপরিবারে মণ্ডপে অধিষ্ঠান করবেন দেবী দুর্গা। আয়োজনে বিন্দুমাত্র কমতি রাখতে রাজি নন ভক্তরা। আর প্রতিমা শিল্পী ও ডেকোরেটরের কর্মীদের যেন ফুরসতই নেই। প্রতিমাকে আরও বেশি দৃষ্টিনন্দন আর মণ্ডপ ও মন্দিরকে আরও বেশি আকর্ষণীয় করে তুলতে আলোকসজ্জা ও বিষয়বস্তুকে ফুটিয়ে তুলতে কাজ চলছে। ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির, রমনা কালীমন্দির, সিদ্ধেশ্বরী মন্দিরের দুর্গামণ্ডপে প্রতিমা স্থাপনের কাজ হয়ে গেছে। পুরান ঢাকার শাঁখারীবাজার, তাঁতীবাজার ও সূত্রাপুরসহ বিভিন্ন এলাকার অস্থায়ী মণ্ডপে প্রতিমা স্থাপন করা হবে আজ সোমবার।

শাঁখারীবাজারের প্রতিদ্বন্দ্বী ক্লাবের দুর্গা পূজায় বরাবই থাকে ব্যতিক্রমী আয়োজন। প্রতিমা ও মণ্ডপে প্রতিবারই এক একটি থিম নিয়ে পূজার আয়োজন করে এই ক্লাবটি। এ বছর ক্লাবের পূজার ৫০ বছর পূর্তি হতে যাচ্ছে। তাই আয়োজনেও থাকছে ভিন্নতা। বিশ্ব্যাবপী যুদ্ধ, মহামারিকে প্রাধান্য দিয়ে প্রতিমা ও মণ্ডপ সাজাচ্ছে ক্লাবটি।

প্রতিদ্বন্দ্বী ক্লাবের উৎপল কুমার ঘোষ ভোরের কাগজকে বলেন, প্রতি বছর একেকটা থিম নিয়ে পূজার আয়োজন করা হয়। আমরা দেবী দুর্গাকে দেখতে পাই অসুরদের সঙ্গে যুদ্ধরত অবস্থায়। বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন বিষয়েও কিন্তু যুদ্ধ চলছে। এই যুদ্ধকে প্রাধান্য দিয়েই এ বছর আমরা প্রতিমা নির্মাণ করেছি। মণ্ডপ সাজানো হয়েছে এমনভাবে যে, সেখানে দেখানো হবে যুদ্ধ করতে করতে জঙ্গলের মধ্য দিয়ে দেবী সপরিবারে মর্তে আসছেন। গণেশ ও কার্তিক মায়ের সঙ্গে যুদ্ধে অবর্তীণ হয়েছেন। সেখানে থাকবে ৫টি অসুর। মণ্ডপ জঙ্গলের থিম তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। আমাদের থিমকে তুলে ধরতে থাকবে ব্যতিক্রমী আলোকসজ্জা। স্টেজও সাজানো হয়েছে ভিন্ন আঙ্গিকে।

এদিকে এ বছর কলাবাগন মাঠে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে না। গত কয়েক দিন যাবত এই মাঠে পূজা অনুষ্ঠিত হওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। গতকাল বিকালে অবশ্য জানানো হয়, কলাবাগন মাঠের পূজাটি গ্রীনরোডের স্টাফ কোয়ার্টার মাঠে করার অনুমতি দিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। ধানমন্ডি সার্বজনীন পূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক সমেন সাহা ভোরের কাগজকে জানান, অনেকটা দেরিতে অনুমতি পেয়েছি। পূজা হবে। সেই অনুযায়ী কাজ হবে।

বোধনের মধ্য দিয়ে আজ শুরু হচ্ছে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসব। তিথি অনুযায়ী আজ সায়ংকালে (সন্ধ্যায়) অনুষ্ঠিত হবে দেবী দুর্গার বোধন, আমন্ত্রণ ও অধিবাস। মন্দির ও মণ্ডপে স্থাপন করা হবে বোধনের ঘট। ভক্তের ভক্তি, নিষ্ঠা আর পূজার আনুষ্ঠানিকতায় মাতৃরূপে দেবী দুর্গা অধিষ্ঠিত হবেন মণ্ডপে মণ্ডপে। ভক্তের প্রার্থনার মধ্য দিয়ে জাগরিত হবে বিশ্ব থেকে অশুভকে বিদায় দেয়ার পণ। দুর্গোতিনাশিনী দেবী দুর্গার আগমনে উচ্ছ্বসিত ভক্তকুল। সারাদেশে এখন চলছে উৎসবের আমেজ।

ভক্তরা মনে করেন, শারদীয় এই উৎসবের মাধ্যমে কন্যাস্থানীয় দেবী সপরিবারে পিতৃগৃহে আগমন করেন। দেবীর ১০ হাত। দেবীকে আমরা দেখি যুদ্ধের সাজে। যুদ্ধের সময় দেবীর ডানদিকের পাঁচটি বাহুতে উপর থেকে নিচে থাকে ত্রিশূল, খড়গ, চক্র, তীক্ষ্ম বান ও শক্তি নামক অস্ত্র। বাম দিকের পাঁচটি বাহুতে নিচ থেকে উপরে খেটক (ঢাল), ধনুক, নাগপাশ, আঙ্কুশ, ঘণ্টা। অস্ত্র দিয়ে তিনি যুদ্ধ করে দুষ্টের দমন আর শিষ্ঠের পালন করেন। দেবী যখন মমতাময়ী মায়ের রূপ নেন তখন তার হাতে থাকে কল্যাণের প্রতীক পদ্ম, শঙ্খসহ ১০টি অস্ত্র। দেবীর গায়ের রং অতসী ফুলের মতো উজ্জ্বল। পূর্ণিমার চাঁদের মতো তার মুখ। তিনি ত্রিনয়না। মাথার একপাশে বাঁকা চাঁদ। সিংহ তার বাহন। দেবীর ডানে ধনদাত্রী লক্ষ্মী, পাশে সিদ্ধিদাতা গণেশ। দেবীর বামপাশে বিদ্যাদায়িনী সরস্বতী এবং তার পাশে শৌর্য-বীর্যের প্রতীক কার্তিক।

পুরাণ মতে, রাজা সুরথ প্রম দেবী দুর্গার আরাধনা শুরু করেন। বসন্তকালে তিনি এই পূজা আয়োজন করেছিলেন বলে দেবীর এ পূজাকে বাসন্তী পূজা বলা হয়। কিন্তু রাজা রাবণের হাতে স্ত্রী সীতাকে উদ্ধারের জন্য রাজা দশরথের পুত্র রামচন্দ্র শরৎকালে দুর্গাপূজার আয়োজন করেছিলেন। তাই শরৎকালের এই পূজাকে হিন্দুমতে অকাল বোধনও বলা হয়। বাঙালির হৃদয়ে শরৎকালের দুর্গার অধিষ্ঠান কন্যারূপে।

বিশুদ্ধ পঞ্জিকা অনুযায়ী, ১১ অক্টোবর সোমবার ষষ্ঠী, ১২ অক্টোবর সপ্তমী, ১৩ অক্টোবর অষ্টমী, ১৪ অক্টোবর নবমী এবং ১৫ অক্টোবর দশমী। অষ্টমী পূজার অন্যতম আকর্ষণ ঢাকা রামকৃষ্ণ মিশনের কুমারী পূজা। করোনা সংক্রমণের কারণে গত বছরের মতো এ বছরও কুমারী পূজা অনুষ্ঠিত হবে না বলে জানিয়েছেন রামকৃষ্ণ মঠ ও রামকৃষ্ণ মিশনের সহসম্পাদক স্বামী শান্তিকরানন্দ।

প্রতি বছর বিভিন্ন বাহনে সপরিবারে শ্বশুরবাড়ি কৈলাসকে কন্যারূপে দেবী মর্ত্যলোকে (পৃথিবী) আসেন বাপের বাড়ি বেড়াতে। দেবী দুর্গা এবার মর্ত্যলোকে আসবেন ঘোটকে (ঘোড়া) চড়ে। এর ফল হচ্ছে ছত্রভঙ্গ। আর দেবী সপরিবারে স্বর্গালোকে বিদায় নেবেন দোলায় (পালকি) চড়ে। যার ফল হচ্ছে মড়ক। দেবীর আসা এবং যাওয়ার লক্ষণ শুভ না হলেও ভক্তের বিশ্বাস, দেবী মঙ্গলময়ী। তিনি জগতের মঙ্গলই করবেন। সন্তানদের আশীষ দেবেন দু’হাত ভরে। বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের ত্য অনুযায়ী, চলতি বছর সারাদেশে ৩২ হাজার ১১৮টি ম-পে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে।

এদিকে শারদীয় দুর্গোৎসবের দিনগুলোতে আকাশে থাকবে রোদ-বৃষ্টির খেলা। আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাবে বলা হয়েছে, আজ সকাল ৯টা পর্যন্ত চট্টগ্রাম বিভাগের দুয়েক জায়গায় বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়া আগামী বুধ ও বৃহস্পতিবার র্আৎ অষ্টমী ও নবমীর দিন দেশের দক্ষিণাঞ্চলের কোথাও কোথাও বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা রয়েছে। শুক্রবার দশমীর দিনও বৃষ্টিপাত হতে পারে। আর পূজার পর আগামী শনিবার থেকে বৃষ্টিপাত বেড়ে যেতে পারে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App