×

সারাদেশ

ঋণ মুক্ত হলেন সেই নারী অটো চালক জায়দা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১১ অক্টোবর ২০২১, ১০:৪০ পিএম

ঋণ মুক্ত হলেন সেই নারী অটো চালক জায়দা

অটোরিকশা চালক জায়দা। ছবি: ভোরের কাগজ।

ঋণ মুক্ত হলেন সেই নারী অটো চালক জায়দা

জীবন যুদ্ধে বেঁচে থাকার লড়াইয়ে বাঘা উপজেলায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালক জায়দা। ছবি: ভোরের কাগজ।

ঋণ মুক্ত হলেন সেই নারী অটো চালক জায়দা

নারী চালক জায়দার ঋন পরিশোধ করেন বাঘা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) পাপিয়া সুলতানা। ছবি: ভোরের কাগজ।

উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সহযোগিতায় ঋণমুক্ত হলেন ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার সেই নারি চালক জায়দা। গত ৯ অক্টোবর ‘গ্রামীন রাস্তায় চালকের আসনে নারী’ শিরোনামে দৈনিক ভোরের কাগজে সংবাদ প্রকাশের পর বিষয়টি নজরে এলে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন বাঘা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) পাপিয়া সুলতানা।

সোমবার (১১ অক্টোবর) তাকেসহ বাঘা শাখার এনজিওর কর্মকর্তাকে তার কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে এনজিওর কাছ থেকে নেওয়া ৫০ (পঞ্চাশ) হাজার টাকা পরিশোধ করে তাকে ঋন মুক্ত করেছেন ইউএনও। জীবন যুদ্ধে বেঁচে থাকার লড়াইয়ে ৫০ বছর বয়সের একজন নারির সাহসিকতায় মুগ্ধ হয়ে নিজস্ব তহবিল থেকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন বাঘা উপজেলা নির্বাহি অফিসার (ইউএনও) পাপিয়া সুলতানা।

এসময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ বাঘা শাখার সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম বাবুল, কৃষি অফিসার শফিউল্লাহ সুলতান, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার ডাঃ রাশেদ আহমেদ, মৎস্য অফিসার আমিরুল ইসলাম, বিআরডিবি অফিসার এমরান আলীসহ বিভিন্ন দপ্তরের প্রধানগন।

উল্লেখ্য, গত ৯ অক্টোবর ভোরের কাগজে ‘গ্রামীন রাস্তায় চালকের আসনে নারি’ শিরোনামে- দারিদ্র্য, শখের বশে নয়, জীবন জীবিকার তাগিদে পেশা বদলিয়ে জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখছে নারিরাও। পুরুষের পাশাপাশি তারাও আজ মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে শিখেছে। পেশা হিসেবে অনেক নারিই বেছে নিচ্ছেন গাড়ি চালানোকে। যাদের দেখা মেলে শহরে। তবে চালকের আসনে এখন গ্রামের রাস্তায় নেমেছে নারিরাও। তাদের একজন নারি চালক হচ্ছে জায়দা। স্বামী পরিত্যক্তা এই নারী ভ্যানের হেন্ডেল ধরে এখন চালকের আসনে বসে যাত্রী পরিবহন করছে। তার বাড়ি উপজেলার জোতকাদিরপুর গ্রামে। স্বামী শাহাজামাল আরেকটি বিয়ে করে অন্যত্র চলে যাওয়ার পর পেশা বদলিয়ে চালকের আসনে বসেছেন জায়দা।

[caption id="attachment_312263" align="aligncenter" width="1280"] নারী চালক জায়দার ঋন পরিশোধ করেন বাঘা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) পাপিয়া সুলতানা। ছবি: ভোরের কাগজ।[/caption]

জায়দার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, একদিকে দরিদ্র পরিবারে তার জন্ম। অন্যদিকে কালো চেহারার মেয়ে বলে কেই তাকে বিয়ে করতে চায়নি। একারণে ৩০ বছর বয়সে বিয়ে করে আর সন্তানের মা হয়েছেন ৩৫ বছর বয়সে। গর্ভের ছেলে ভূমিষ্ট হওয়ার আগে স্বামী শাহজামাল তাকে রেখে অন্যত্র চলে যায়, তখন জীবন জীবিকার তাগিদে গ্রামের বিত্তবানদের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে সংসার চালাতেন। এর মাঝে জন্ম নেয় একটি পুত্র সন্তান। টানপোড়নের সংসারে ভারতের সীমান্তবর্তী দূর্গম চর এলাকার বাংলাবাজার গ্রাম ছেড়ে ছেলে জায়দুলকে সঙ্গে নিয়ে ২০বছর আগে চলে আসেন উপজেলার পাকুড়িয়া ইউনিয়নের জোতকাদিরপুর গ্রামে। এই গ্রামে ৫ কাঠা জমি কিনে শুরু করেন নতুন জীবন। খেয়ে পরে বেঁচে থাকার তাগিদে কোন পেশাকেই ছোট করে দেখেননি কখনো। এভাবেই পার করেছেন জীবনের ৫০ বছর। এর মাঝে জানতে পারেন যোগ্যতা অনুসারে নারিরাও যে যার মতো চালকের আসনে বসেছে। লেখাপড়া না জানলেও সেই চিন্তা পেয়ে বসে তাকেও। চালকের আসনে বসে ব্যাটারি চালিত অটো উল্কার হ্যান্ডেল ধরে মাস দু’এক আগে নেমে পড়েন রাস্তায়।

এর আগে ঝিয়ের কাজসহ বিভিন্ন কাজ করতেন। সংসার খরচবাদে দিনে দিনে জমানো টাকা আর এনজিওর কাছ থেকে কিস্তিতে টাকা তুলে ৭০ হাজার টাকা দিয়ে একটি ব্যাটারি চালিত অটো উল্কা কিনেন। কয়েকদিনের প্রশিক্ষন নিয়ে ব্যাটারি চালিত অটো উল্কা কিনে বসেন চালকের আসনে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নিজ এলাকা জোতকাদিরপুর থেকে নারায়নপুর হয়ে বাঘা পর্যন্ত যাত্রী পরিবহন করে প্রতিদিন আয় হয় প্রায় সাড়ে তিন’শ থেকে চার’শ টাকা পর্যন্ত। প্রতিদিনের অটো উল্কার ব্যাটারি চার্জ বাবদ ৫০টাকাসহ দু’জনের সংসার খরচ চলে এই আয় থেকে। খরচবাদে বাড়তি কিছু টাকা জমাও করেন প্রতিদিন। আর্থিক অনটনের মধ্যেও ছেলেকে ভর্তি করেছিলেন স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। নিজে লেখাপড়া জানেন না। তার ইচ্ছা ১৫ বছর বয়সের ছেলে জায়দুলকে উচ্চ শিক্ষিত করে গড়ে তোলা।

নারী অটো চালক জায়দা বলেন, দেশে বিভিন্ন যানবাহনে পেশাদার নারী চালক আরও বেশি দরকার । কারণ নারীদের জন্য পরিবহনের বিশেষ কোন সুবিধা নেই। এছাড়াও সব ধরণের পেশাদার সুবিধাভূগী নারী ড্রাইভিংয়ে আরও এগিয়ে আসবে।

শাহদৌলা সরকারি কলেজের প্রভাষক আবু হানিফ বলেন, বর্তমানে রাস্তায় যে হারে গাড়ি দুর্ঘটনার কবলে পড়ছে, চালকের আসনে নারী থাকলে এ হার কমে যাবে। বাংলাদেশের রাস্তায় একটি ইতিবাচক পরিবর্তন হবে। সড়ক দুর্ঘটনা অনেক হারে কমে যাবে। কারণ মেয়েরা সহজে অধৈর্য হয় না। ওভারটেক করার প্রবণতা থাকবে না। এ পেশায় নারীরা এলে কমবে দুর্ঘটনার হার। গাড়ি চালক হিসেবে পুরুষের চেয়ে নারী বেশি নিরাপদ। গাড়ি চালক হিসেবে নারী ও পুরুষের ব্যবধান আছে। সে ক্ষেত্রে নারী চালকরাই এগিয়ে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App