×

মুক্তচিন্তা

নারী শ্রমিকদের নিরাপত্তা প্রসঙ্গে

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১০ অক্টোবর ২০২১, ০২:০১ এএম

নারী শ্রমিকদের নিরাপত্তা প্রসঙ্গে
পরিবারে একটু সচ্ছলতা আনতে অনেক নারীই বিদেশে গেছেন, এখনো অনেকে যাওয়ার প্রক্রিয়ায় আছেন। কিন্তু কষ্টের প্রবাস থেকে ফিরেও জীবনখাতায় শূন্য দেখছেন বেশিরভাগ। গত ৫ বছরে প্রবাস থেকে ৪৮৭ নারীর মৃতদেহ এসেছে দেশে। এর মধ্যে আত্মহত্যা করেন ৮৬ জন। স্ট্রোকে মারা যান ১৬৭ জন ও দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান ৭১ জন, ১১৫ জনের স্বাভাবিক মৃত্যুর কথা বলা হয়েছে। লাশ হয়ে ফেরা ছাড়াও শারীরিক, মানসিক ও যৌন নির্যাতনসহ প্রতারণার শিকার হয়ে অনেক নারীই দেশে ফিরে আসেন বলে জানায় বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক ও মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন (এমজেএফ)। সম্প্রতি সরকার থেকে প্রকাশিত এক তথ্য বিবরণীতে এ সংখ্যা পাওয়া যায়। ২০১৭ সালে বাংলাদেশ থেকে গৃহপরিচারিকার কাজ করতে জর্ডান গিয়েছিলেন মৌসুমী আক্তার। সম্প্রতি তার মৃতদেহ ফিরেছে বাংলাদেশে। ডেথ সার্টিফিকেটে লেখা ছিল স্ট্রোক করে মারা গেছেন মৌসুমী। পরিবার বলছে নির্যাতিত হয়ে মারা গেছেন তিনি। মৌসুমীর চাচা মোহাম্মদ ইমরান খান বলেন, মৌসুমীর মৃতদেহে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। প্রবাস ফেরত এক নারীর তথ্য প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে বাংলাদেশ সংবাদ মাধ্যমে। তাতে বলা হয়েছে, ৭ মাস আগে গৃহকর্মী হিসেবে সৌদি আরবে গিয়ে নির্যাতনের ক্ষত নিয়ে দেশে ফিরেছেন। সম্প্রতি রিয়াদ বিমানবন্দরের উড়োজাহাজে বসে এক আরব নাগরিককে নির্যাতনের বর্ণনা দেন তিনি। তার বক্তব্য ভিডিও করেন ওই এক আরব নাগরিক। ভিডিওতে ওই নারীর এক হাতে ক্ষত চিহ্ন, আরেক হাতে গোটা গোটা ফোস্কা দেখা যায়। এক প্রশ্নের জবাবে ওই নারী বলেন, সৌদি আরবে কাজে আসার পর প্রতিদিন তাকে ৬-৭ বার গরম কিছু দিয়ে ছ্যাঁকা দেয়া হতো। ওই ছ্যাঁকাতেই হাতে ফোস্কা হয়েছে। নির্যাতনের কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাংলাদেশে কারো সঙ্গে, বিশেষ করে স্বামীর সঙ্গে কথা বলতে চাইলে মালিক দিত না। দেশে ফিরতে চাইলে নির্যাতন করা হতো। এভাবে নির্যাতনের পর সৌদি মালিক তাকে বিমানবন্দরে রেখে চলে যায়। এই কয় মাস তাকে কোনো বেতন দেয়া হয়নি। কিন্তু বিমানবন্দরে রেখে যাওয়ার সময় বেতন দিয়েছেন মর্মে স্বাক্ষর নিয়ে গেছে মালিক। ভিসা ও পাসপোর্টের তথ্য অনুযায়ী, নির্যাতিত ওই নারীর বাড়ি চুয়াডাঙ্গায়। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কিশোরী উম্মে কুলসুম (১৪) পাসপোর্টে বয়স ২৬ দেখিয়ে সৌদি আরব যান ২০১৯ সালে। প্রবাসে নির্যাতনের মাত্রা এত বেশি যে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে দেশে ফিরেছেন অনেকে। আবার অনেকে বিদেশে মারাও যাচ্ছেন। এরপরও মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে নারীরা যাচ্ছেন পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর স্বপ্ন নিয়ে, নিজেদের ভবিষ্যৎ বদলের আশায়। নারীদের চেয়ে পুরুষদের আয় বেশি হলেও পুরুষ শ্রমিকরা আয়ের ৭০-৮০ শতাংশ দেশে পাঠান। তবে নারী কর্মীরা তাদের আয়ের প্রায় পুরোটাই পাঠান। রিফিউজি ইউনিটের তথ্যমতে, কোভিড ১৯-এর সময় নারী শ্রমিকরা বেশি হারে টাকা পাঠিয়েছেন যা ৬৯ শতাংশ। সংসারে নিদারুণ কষ্ট আর অভাব না থাকলে কোনো মা-বাবা তার আদরের সন্তানকে, স্বামী তার স্ত্রীকে, সন্তান তার মাকে প্রবাসের অচেনা-অজানা স্থানে পাঠাতে চায় না। ভাতের কষ্ট, কাপড়ের কষ্ট, টাকার কষ্ট! সে কষ্টের কি আর শেষ আছে! এসব প্রবাসী নারীর পাশে ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’ শেখ হাসিনার সরকারকে দাঁড়াতে হবে। অসাধু ট্রাভেল এজেন্সি, লোভী, অসৎ ও অসাধু দালালদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে। পুরুষ শ্রমিকদের শ্রমবাজার পেতে নারী শ্রমিকদের যেন আমরা ব্যবহার না করি সে বিষয়ে তৎপর হতে হবে। বয়স বিবেচনা করে উপযুক্ত দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ এবং সঠিক কর্মসংস্থান সৃষ্টির ওপর জোর দিতে হবে, উপযুক্ত পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা প্রবর্তন যা দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করবে এবং ক্রমান্বয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ নীতি কাঠামো প্রণয়নে প্রশাসনকে উদ্যোগী হতে হবে। ফারজানা আক্তার বিথী শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App