×

জাতীয়

তিস্তা চুক্তি স্বাক্ষরে মমতার বিলম্ব কেন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১০ অক্টোবর ২০২১, ১১:১৮ পিএম

তিস্তা চুক্তি স্বাক্ষরে মমতার বিলম্ব কেন

শুষ্ক মৌসুমে জল শূন্য তিস্তা। ফাইল ছবি

বাংলাদেশের জোরালো প্রচেষ্টা সত্ত্বেও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তিস্তা নদীর জল ভাগাভাগির বিষয়ে চূড়ান্ত চুক্তিতে সম্মতি দিতে প্রস্তুত নন। সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গের ভবানীপুরে বিধানসভা উপনির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়ী হন মমতা। এ জয়ের খবরে তাকে অভিনন্দনমূলক চিঠি পাঠান পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন। মমতা প্রথাগতভাবে ওই চিঠির জবাবে ‘অত্যন্ত যত্ন সহকারে বর্তমান সুসম্পর্ক বজায় রাখার’ প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তবে তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি নিয়ে কোনো ইঙ্গিত বা আভাস দেওয়া থেকেও তিনি বিরত ছিলেন।

রবিবার (১০ অক্টোবর) ইন্ডিয়া নিউজ স্ট্রিম অনলাইনে প্রকাশিত একটি কলামে এসব কথা বলা হয়।

কলামটির লেখক সাংবাদিক গৌতম লাহিড়ী বলেন, মমতার ঘনিষ্ট সূত্রে অনানুষ্ঠানিকভাবে আভাস দিয়েছেন, যতদিন ভারতের ক্ষমতায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আছেন অন্তত ততদিন তৃণমূল নেত্রী মমতা জল বণ্টন চুক্তি অনুমোদন করতে আগ্রহী নন। তিনি প্রায় একই ভূমিকা পালন করছেন, ২০১৩ সালে প্রধান বিরোধী দল হিসাবে যেমন করেছিল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)। সেসময় বাংলাদেশের সাথে স্থল সীমান্ত চুক্তি (এলবিএ) অনুমোদনের জন্য সংসদে সাংবিধানিক সংশোধনী পাসের জন্য তৎকালীন ইউপিএ দ্বিতীয় সরকারের প্রচেষ্টায় বিরোধীতা অব্যাহত রেখেছিল মোদির দল বিজেপি।

প্রেস ক্লাব অব ইন্ডিয়ার সাবেক সভাপতি গৌতম লাহিড়ী তার কলামে লিখেছেন, ২০১৪ সালের মে মাসে লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ-কে হটিয়ে ক্ষমতায় আসে বিজেপি। এর পরপরই দলটি ঐতিহাসিক এলবিএ’র জন্য সংবিধান সংশোধনী বিল পাসে আন্তরিক উদ্যোগ নেয়। ভারতের পার্লামেন্টের উভয় কক্ষের সকল রাজনৈতিক দল সর্বসম্মতিক্রমে বিলটি পাস করে। যা ভারতের ইতিহাসে এক বিরল ঘটনা। যদিও এর আগে ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে লোকসভায় তৎকালীন বিরোধী দল বিজেপির নেত্রী সুষমা স্বরাজ স্পষ্টভাবেই বলেছিলেন, সাধারণ নির্বাচন দ্বারে কড়া নাড়ছে। এ পরিস্থিতিতে এলবিএ-কে সমর্থন করা যাবে না।

[caption id="attachment_152173" align="aligncenter" width="700"] তিস্তা ব্যারেজ[/caption]

ভারতের এই বয়োজ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আরও লিখেছেন, ২০১৯ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অনানুষ্ঠানিকভাবে তিস্তা চুক্তির স্বাক্ষর হওয়ার আগে ভারতের লোকসভা সাধারণ নির্বাচন শেষ হওয়ার পর্যন্ত বাংলাদেশকে অপেক্ষা করার অনুরোধ জানিয়েছিলেন। কিন্তু নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে বিজেপি বৃহত্তর সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় ফিরে আসে। মমতার তৃণমূলসহ বিরোধী দলগুলি তা একেবারেই আশা করেনি। এ পরিস্থিতিতে তিস্তা চুক্তি স্থবির হয়ে পড়ে।

এই অভিজ্ঞ সাংবাদিক তার কলামে আগামী বছরে শেখ হাসিনার সম্ভাব্য ভারত সফরের প্রসঙ্গও উল্লেখ করেছেন। তিনি এ প্রসঙ্গে লিখেছেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের জন্য কূটনৈতিক আলোচনা চলছে। তিনি ২০২২ সালের শুরুর দিকেই দিল্লি সফর করতে পারেন। দুই প্রতিবেশি দেশের কূটনৈতিক সুসম্পর্কের ৫০ বছর উদযাপন করবে ভারত ও বাংলাদেশ। তবে মুলতুবি হয়ে থাকা তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তির চূড়ান্ত সমাধানের লক্ষ্যে ঢাকা এবার জোর তৎপরতা চালাচ্ছে। এটি বাংলাদেশের মানুষের কাছে বড় স্পর্শকাতর বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

[caption id="attachment_312075" align="aligncenter" width="600"] শুষ্ক মৌসুমে জল শূন্য তিস্তা। ফাইল ছবি[/caption]

এই সাংবাদিক তার কলামে আরও জানান, ঢাকার কূটনীতিক মহল ভারতের দক্ষিণ ব্লকেও জানিয়েছেন, চীন তিস্তা ব্যারেজ প্রকল্পের জন্য বাংলাদেশকে চাপ দিচ্ছে। বেইজিং এ প্রকল্পের কাজ করবে। বাংলাদেশ বন্যা মৌসুমে পানি ধরে রাখেতে তিস্তা বদ্বীপের সংলগ্ন এলাকায় একটি মহাপরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে। বিশেষজ্ঞরা এই ব্যারেজ প্রকল্প বাংলাদেশের জন্য দীর্ঘমেয়াদে উপকারী হবে বলেই মনে করে।

এই কলামিস্ট তিস্তা চুক্তি নিয়ে বিজেপির বর্তমান ভূমিকা সম্পর্কে লিখেছেন, ২০১৪ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত সুষমা স্বরাজ ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন। এ সময়ে মমতার সঙ্গে তাঁর ব্যক্তিগত ব্যক্তিগত সম্পর্ক ছিল। কিন্তু ২০১৯ সাল থেকে, দ্বিতীয় দফায় মোদী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে পৌঁছানোর কোনো চেষ্টাই করা হয়নি। তৃণমূল কংগ্রেস নেতারা সংলাপের মধ্যস্থতাকারীদের কাছে জানতে চেয়েছেন, তিস্তা চুক্তি নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি নেতারা আসলেই সিরিয়াস কিনা। ২০১৯ সালে বিজেপি পশ্চিমবঙ্গ থেকে ১৮টি লোকসভা আসন জিতেছে। এর মধ্যে বেশিরভাগই পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের উত্তরবঙ্গ এলাকার।

[caption id="attachment_293199" align="aligncenter" width="700"] তিস্তা নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে ফসলি জমি।[/caption]

গৌতম লাহিড়ী কলামে তিস্তা চুক্তি প্রসঙ্গে মমতার বর্তমান অবস্থান নিয়েও লিখেছেন। তিনি জানান, শুরুর দিকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তিস্তা চুক্তি স্বাক্ষরিত হলে উত্তরবঙ্গের কৃষকদের সেচের পানির ঘাটতি হতে পারে বলে বোঝানোর চেষ্টা করতেন। এ নিয়ে প্রায়ই উদ্বেগ-আশংকা প্রকাশ করতেন। এখন, পরিস্থিতি অবশ্য ভিন্ন। ২০২৪ সালে লোকসভা ভোটের আগে, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বিজেপি নেতারা তিস্তার জল বণ্টন চুক্তি করতে চাইবে না। কারণ পশ্চিমবঙ্গে এটি তাদের জন্য একটি নেতিবাচক রাজনৈতিক ইস্যু হয়ে দাঁড়াতে পারে। আগামী লোকসভা নির্বাচনে তাদের এ জন্য কিছু আসনও খোয়াতে হতে পারে। মমতার তৃণমূল এখন তিস্তা চুক্তি নিয়ে অগ্রসর না হওয়ার জন্য ক্ষমতাসীন বিজেপিকেই দায়ী করছে। তৃণমূলের প্রভাবশালী এক নেতা বলেছেন, এখন, তৃণমূলের নামে ধুয়া তুলে বিজেপি তিস্তা চুক্তি থেকে সরে যাচ্ছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App