×

সারাদেশ

নোয়াখালীতে লাইসেন্স নেই ২৫৬ হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৯ অক্টোবর ২০২১, ০৮:৫৮ পিএম

নোয়াখালী জেলায় ৩৪৪টি প্রাইভেট হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মধ্যে ২৫৬টিরই কোনো লাইসেন্স বা বৈধ অনুমতি নেই। এসব অবৈধ প্রাইভেট হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের অপচিকিৎসা ও রিপোর্টে বিপদে পড়েছেন রোগীরা। এতে সরকার কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে।

নোয়াখালী সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা গেছে, সর্বশেষ জরিপে জেলায় মোট ৩৪৪টি প্রাইভেট হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ৮৮টি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বৈধ কাগজপত্র ও সরকারি লাইসেন্স রয়েছে। বাকি ২৫৬টির কোনো বৈধ কাগজপত্র বা লাইসেন্স নেই। অবৈধ এসব প্রাইভেট হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের একাধিকের মালিকানায় বা অংশীদারত্বে রয়েছেন সরকারি দলের নেতাকর্মীরা এবং স্বাচিপ ও বিএমএম নেতারা। ফলে কর্তৃপক্ষ শত চেষ্টা করেও হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোকে নিয়মের ভেতর আনতে পারছে না।

সিভিল সার্জন অফিস সূত্র মতে, কোনো বৈধ অনুমতি ছাড়াই চলছে নিউ লাইফ হসপিটাল, নোয়াখালী ইনসাফ হসপিটাল, নোয়াখালী ডায়াগনস্টিক, মাদারল্যান্ড হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক, মাইজদী প্যাথলোজি, জেনুইন ল্যাব এন্ড ডক্টর, মেডিনোভা সেন্টার, নুর দন্ত চিকিৎসালয়, মাইজদী আই হাসপাতাল, ফেমাস ডায়াগনস্টিক এন্ড ডক্টরস, সেবা ডায়াগনস্টিক, জনসেবা ডায়াগনস্টিক, সেফা ডায়াগনস্টিক এন্ড ডক্টরস, পপুলার ডায়াগনস্টিক, মডেল ডায়াগনস্টিক, আদর ডায়াগনস্টিক এন্ড হাসপাতাল, নোয়াখালী প্যাথলোজি ক্লিনিক, হাজী জহুরুল দাতব্য চিকিৎসালয়, ডেল্টা হেলথ কেয়ার, জনতা জেনারেল হাসপাতাল, সেভ লাইফ ডায়াগনস্টিক, নোয়াখালী গ্রামীন কমিউনিটি, মেডিকেয়ার, সেন্ট্রাল হাসপাতাল, মানিক জেনারেল হাসপাতাল, প্রাইম হসপিটাল লি. ও প্যাথলোজি (ইউনিট-২ বেগমগঞ্জ), কমপোর্ট জেনারেল হসপিটাল, পাক মুন্সীরহাট ডায়াগনস্টিক, মালিহা ডায়াগনস্টিক, মানিক ডায়াগনস্টিক এন্ড কিডনি ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ইউনিক হাসপাতাল, গেøাবাল ডায়াগনস্টিক, হেলথ কেয়ার সার্ভিসেস, পপুলার ডায়াগনস্টিক (চৌমুহনী), ইজি ল্যাব, ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার, দি হেলথ কেয়ার, সিটি কম্পিউটার, কমপোর্ট জেনারেল হাসপাতাল, ডক্টর মেডিকেল সার্ভিস, চৌমুহনী নরমাল ডেলিভারি হাসপাতাল, মা ও শিশু হাসপাতাল (চৌমুহনী), স্বাস্থ্যসেবা, ইবনে সিনা (চৌমুহনী) এহছানিয়া হাসপাতাল, নিউ চৌধুরী ল্যাব, চাটখিল ফেমাস, চাটখিল ইসলামিয়া, চাটখিল শিশু কিশোর স্পেশালাইজড, এশিয়া ফিজিও, ইবনেসিনা ফিজিও, শাহীন হাসপাতাল, বাশার ডেন্টাল, সোবহান মেমোরিয়াল, বনানী মেডিনোভা, জাহাজমারা ডায়াগনস্টিক, ডা. ইকবাল মেডিকেল, তমরুদ্দি জিডিটাল, ডা. ইকবাল মেডিকেল, তারাল ডায়াগনস্টিক, হাতিয়া চক্ষু হাসপাতাল, কবিরহাট ইবনেসিনা, আলহেরা, ইউনাইটেড হাসপাতাল (সেনবাগ), নুর প্রাইভেট হাসপাতাল, সোনাপুর ডায়াগনস্টিক সেন্টারসহ ৯৮টি প্রাইভেট হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার লাইসেন্স ছাড়াই কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।

নাম প্রকাশ না করে এদের অধিকাংশ মালিক জানান, তারা প্রতি মাসে সিভিল সার্জন অফিস ও থানা পুলিশকে মাসোহারা দিচ্ছেন। তাই সেবা কার্যক্রমে তাদের কোনো সমস্যা হচ্ছে না।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের (সেবা)) একটি সূত্রে জানা গেছে, ১০ থেকে ৫০ শয্যার হাসপাতাল রেজিস্ট্রেশন করে লাইসেন্স নিতে ৪০ হাজার টাকা সরকারি ট্যাক্স ও ১৫ পারসেন্ট ভ্যাট দিতে হয় জেলা পর্যায়ে। আর উপজেলা পর্যায়ে দিতে হয় ২৫ হাজার টাকা ও ১৫ পারসেন্ট ভ্যাট। প্যাথলোজি বা ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে ট্যাক্স বা ফি দিতে হয় ১৫ হাজার টাকা আর ভ্যাট দিতে হয় ১৫ পারসেন্ট। এ টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দিয়ে চালানের ফর্মসহ আবেদন করার পর সিভিল সার্জন তদন্ত করে রিপোর্ট দিলে মহাপরিচালক লাইসেন্স দেন। কিন্তু কেউ কেউ আবেদন করেই হাসপাতাল চালু করছেন। কেউ ৪-৫ বছর ধরে হাসপাতাল চালালেও লাইসেন্স নিচ্ছেন না।

হিসাব অনুযায়ী এসব অবৈধ প্রাইভেট হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে প্রতি বছর অন্তত দুই কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। অন্যদিকে অবৈধ প্রাইভেট হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের অপচিকিৎসা ও রিপোর্টে বিপথগামী হচ্ছেন রোগীরা।

জেলা সিভিল সার্জন ডা. মাছুম ইফতেখার জানান, তিনি কোনো হাসপাতাল বা ডায়গনস্টিক থেকে কোনো অর্থ নেন না। কোনো কর্মচারীর ব্যাপারে কেউ লিখিত অভিযোগ করলে তা তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি জানান, অবৈধ প্রাইভেট হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App