×

সারাদেশ

‘ওয়ান সিটি টু টাউনের’ চট্টগ্রাম আর বেশি দূরে নয়

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৮ অক্টোবর ২০২১, ১০:২৫ পিএম

‘ওয়ান সিটি টু টাউনের’ চট্টগ্রাম আর বেশি দূরে নয়

ওয়ান সিটি টু টাউনের চট্টগ্রাম বেশিদূরে নয়

‘ওয়ান সিটি টু টাউনের’ চট্টগ্রাম আর বেশি দূরে নয়। চীনের সাংহাইয়ের আদলে চট্টগ্রামও হয়ে উঠবে তেমনই একটি আধুনিক অর্থনৈতিক ব্যবসা-বাণিজ্যের নগরী হিসেবে। নদীর উভয় তীরেই থাকছে দুটি শহর যা মূলত একটি নগরীতেই পরিণত হতে যাচ্ছে অল্প কিছুদিনের মধ্যে। মাঝখানে কর্ণফুলী নদী থাকলেও তারই তলদেশ দিয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে নির্মাণাধীন দেশের প্রথম টানেল সড়কটির নির্মাণকাজ বেশ দ্রুতই এগিয়ে চলেছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মাণাধীন টানেলের দ্বিতীয় সুড়ঙ্গের খননকাজ শেষ হওয়াতে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ এর স্বপ্ন বাস্তবায়ন যেন আরও কাছে এসে গেল। এখন বাকি আছে শুধু সড়ক তৈরি ও অন্যান্য কাজ। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে, কিন্তু তার আগেই কাজ শেষ করে টানেল চালুর আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এই প্রকল্পের পরিচালক হারুনুর রশিদ চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেছেন, আনোয়ারা প্রান্ত থেকে শুরু হওয়া এই টিউব এসে যোগ হয়েছে নগরের পতেঙ্গা প্রান্তে। দ্বিতীয় টিউবের খননকাজ শেষ হলেও অন্যান্য কাজ বাকি রয়েছে। আশা করছি, জানুয়ারি মাসে কাজ শুরু করা যাবে। ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত এই প্রকল্পের মেয়াদ। এই সময়ের মধ্যেই কাজ শেষ করার চেষ্টা রয়েছে। টানেল বোরিং মেশিন (টিবিএম) ব্যবহার করে এটি খনন করতে সময় লেগেছে ১০ মাস। এর আগে প্রথম টিউবের খননকাজ করতে সময় লেগেছিল ১৭ মাস। তাই আমরা আরও বেশি আশাবাদী।

নগর পরিকল্পনাবিদ ও অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এ টানেল চালু হলে চট্টগ্রামে পরিবহনব্যবস্থার উন্নয়ন এবং বাংলাদেশের আঞ্চলিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন আরও বেগবান হবে। এর মাধ্যমে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের মধ্যে আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে ওঠার পাশাপাশি এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গেও সংযোগ স্থাপিত হবে। টানেলটি চালু হলে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা কক্সবাজার ও দক্ষিণ চট্টগ্রামগামী যানবাহনকে আর চট্টগ্রাম শহরে ঢুকতে হবে না। সিটি আউটার রিং রোড হয়ে এই সুড়ঙ্গপথে দ্রুততম সময়ের মধ্যে গন্তব্যে পৌঁছতে পারবে। এতে চট্টগ্রাম শহর যানবাহনের চাপ থেকে অনেকটা রেহাই পাবে। যদিও প্রকল্পটির বড় ভূমিকা দেখা যাবে কক্সবাজারের মহেশখালীতে গভীর সমুদ্রবন্দর ও অর্থনৈতিক অঞ্চল চালু হওয়ার পর। শুধু তাই নয় আনোয়ারাতে নির্মাণাধীন অর্থনৈতিক জোনও গতিশীল হয়ে উঠবে এই টানেলের কারণে।

চট্টগ্রাম নগর প্রান্তের নেভাল একাডেমির পাশ দিয়ে শুরু হওয়া এ সুড়ঙ্গ কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ পারে আনোয়ারার সিইউএফএল (চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেড) ও কাফকো (কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার লিমিটেড) কারখানার মাঝামাঝি এলাকায় গিয়ে শেষ হয়েছে। টানেলের প্রথম ও দ্বিতীয় সুড়ঙ্গের মধ্যে দূরত্ব ১২ মিটার। দুই সুড়ঙ্গে দুটি করে চারটি লেন হবে। নদীর তলদেশের ১৮ মিটার থেকে ৩৪ মিটার গভীরতায় সুড়ঙ্গ খনন করা হয়েছে। তিন দশমিক ৩২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের মূল টানেল ছাড়াও পতেঙ্গা ও আনোয়ারা প্রান্তে পাঁচ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক এবং আনোয়ারা প্রান্তে ৭২৭ মিটার একটি উড়াল সেতু হচ্ছে। ২০২০ সালের ১২ ডিসেম্বর আনোয়ারা প্রান্ত থেকে টিউবের খননকাজ শুরু হয়। ভার্চুয়ালি খননকাজ উদ্বোধন করেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এর আগে নগরের পতেঙ্গা এলাকা থেকে প্রথম টিউবের খননকাজ শেষ হয় গত বছরের ২ আগস্ট।

২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্ণফুলী নদীর তলদেশে দেশের প্রথম টানেলের নির্মাণকাজ উদ্বোধন করেন। ১৮ থেকে ৩১ মিটার গভীরে প্রতিটি টানেলের প্রশস্ততা ৩৫ ফুট। এতে ব্যয় হচ্ছে ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা। ২০১৪ সালে প্রকল্প বাস্তবায়নে বাংলাদেশ ও চীনের সরকারি পর্যায়ে টানেল নির্মাণে সমঝোতা হয়। চুক্তি স্বাক্ষর হয় ২০১৫ সালের ২৪ নভেম্বর। টানেল নির্মাণে আছে চায়না কমিউনিকেশন অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন কোম্পানি (সিসিসিসি) লিমিটেড।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App