×

মুক্তচিন্তা

সঠিক প্রজনন ও মা ইলিশ রক্ষার গুরুত্ব

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৭ অক্টোবর ২০২১, ০১:২৫ এএম

সঠিক প্রজনন ও মা ইলিশ রক্ষার গুরুত্ব

মা ইলিশের সংরক্ষণ ও সঠিক প্রজননের জন্য সরকারের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় প্রতি বছরের মতো চলতি বছরও ৪-২৫ অক্টোবর পর্যন্ত ২২ দিন ইলিশ ধরা, ক্রয় বিক্রয় ও পরিবহন নিষিদ্ধ করেছে। কারণ এ সময় মা-ইলিশের ৮০ শতাংশ ডিম পাড়ে। তারা ডিম পাড়ে মূলত মিঠাপানিতে। তাই আশ্বিনের পূর্ণিমার চার দিন আগে এবং পূর্ণিমার পর ১৮ দিন মোট ২২ দিন দেশের উপকূলীয় অঞ্চল, নদীর মোহনাসহ যেসব জেলা ও নদীতে ইলিশ পাওয়া যায়, সেখানে মাছ ধরা নিষিদ্ধ থাকবে। এর আগে একসঙ্গে টানা ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা বলবৎ ছিল। ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুম দুটি- সেপ্টেম্বর-অক্টোবর (ভাদ্র মাস থেকে মধ্য কার্তিক) ও জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারি (মধ্য পৌষ থেকে মধ্য ফাল্গুন) হলেও দ্বিতীয় মৌসুমের তুলনায় প্রথম মৌসুমে প্রজনন হার বেশি। মৎস্য বিশেষজ্ঞরা বলছে, বৃষ্টির ওপর নির্ভর করে ইলিশের গতিপথ। বৃষ্টিপাত বৃদ্ধি পেলে নদীতে পানি বৃদ্ধির সঙ্গে ইলিশের আমদানিও বাড়ে। দ্য প্রটেকশন এন্ড কনজারভেশন অব ফিশ রুলস ১৯৮৫ সংশোধন করে ৬টি ইলিশ অভয়াশ্রম ঘোষণা করে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। এ নিষেধাজ্ঞার সময় ইলিশ প্রজনন ক্ষেত্রের অন্তর্গত ৭ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকায় ইলিশ আহরণ নিষিদ্ধসহ দেশব্যাপী পরিবহন, বাজারজাতকরণ, ক্রয়-বিক্রয়, মজুত ও বিনিময় সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ থাকবে বলে সরকার ঘোষণা করেছে। নিষেধাজ্ঞা অমান্যকারীকে ১ বছর থেকে সর্বোচ্চ ২ বছর সশ্রম কারাদণ্ড অথবা ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা যাবে। যদিও ইলিশ লবণাক্ত পানির মাছ বা সামুদ্রিক মাছ, বেশিরভাগ সময় সাগরে থাকে, কিন্তু বংশবিস্তারের জন্য দীর্ঘপথ অতিক্রম করে নদীতে পাড়ি জমায়। বঙ্গোপসাগর থেকে বাংলাদেশে নদীর সাধারণ দূরত্ব ৫০-১০০ কিমি। ইলিশ প্রধানত বাংলাদেশের পদ্মা, মেঘনা এবং গোদাবরী নদীতে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায় এবং প্রজননের জন্য এ এলাকাটিকে বেছে নেয়। ইলিশ মাছ সাগর থেকেও ধরা হয় কিন্তু সাগরের ইলিশ নদীর মাছের মতো সুস্বাদু হয় না। চাঁদপুর জেলার ৩ নদীর মিলনস্থলে ইলিশ মাছ বেশি পাওয়া যায়। এজন্য চাঁদপুর জেলা ইলিশের জন্য বিখ্যাত এবং চাঁদপুরকে ইলিশের বাড়ি বলা হয়। বিশ্বের মোট ইলিশের ৮৬ শতাংশ বাংলাদেশে উৎপাদন হচ্ছে। মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) ইলিশের অবদান ১ শতাংশ এবং দেশের মোট মৎস্য উৎপাদনে ইলিশের অবদান সর্বোচ্চ প্রায় ১২ শতাংশ। মৎস্যবিজ্ঞানীদের মতে বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়ে যদি এসব নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়, তবে প্রতি বছরই ইলিশ মাছ এভাবেই সবার জন্য সহজলভ্য হবে। এজন্য মাঠ প্রশাসনের সুষ্ঠু তদারকির পাশাপাশি কঠোর নজরদারি করা যেমন দরকার, ঠিক একই সঙ্গে ক্রেতা-বিক্রেতা ও জেলেদের সচেতন হওয়া একান্ত জরুরি। একটি মা ইলিশ প্রতি প্রজনন মৌসুমে একবারে সর্বোচ্চ ১ থেকে ২.৩ মিলিয়ন অর্থাৎ ১০ থেকে ২৩ লাখ পরিমাণ ডিম পাড়ে এবং যদি ৫০ শতাংশ ডিমও যথার্থভাবে বেড়ে উঠতে পারত, তাহলে বিভিন্ন নদী ও বঙ্গোপসাগরের অর্ধেকটা ইলিশের দখলে চলে যেত। এজন্য মা ইলিশ রক্ষার গুরুত্ব ও তাৎপর্য অনেক, দেশের অর্থনীতি ও আমিষের জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ।

মো. জিল্লুর রহমান : গেণ্ডারিয়া, ঢাকা। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App