×

মুক্তচিন্তা

বর্তমান চলচ্চিত্র শিল্পের গ্রহণযোগ্যতা

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৭ অক্টোবর ২০২১, ০১:২৮ এএম

বর্তমান চলচ্চিত্র শিল্পের গ্রহণযোগ্যতা

মানুষ সামাজিক জীব। বেঁচে থাকার জন্য মানুষকে বহুমুখী চাহিদা পূরণ করতে হয়। খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসার পাশাপাশি চিত্তবিনোদনও মৌলিক মানবিক চাহিদার একটি উপাদান। তথ্যপ্রযুক্তির আধুনিক বিশ্বে চিত্তবিনোদনের অনেক মাধ্যম রয়েছে, তবে এর মধ্যে অন্যতম মাধ্যম হলো চলচ্চিত্র। চলচ্চিত্র যেমন একদিকে শিল্প অন্যদিকে সুষ্ঠু সামাজিকীকরণের গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ। গঠনমূলক চিত্তবিনোদনের অভাব ও দেশীয় সংস্কৃতির সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ চলচ্চিত্র নির্মাণের কারণে প্রতিদিনই যুব অসন্তোষ, কিশোর অপরাধ, মূল্যবোধের অবক্ষয়, নৈতিক শিথিলতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশে সর্বপ্রথম চলচ্চিত্র প্রদর্শনী হয় ১৮৯০ সালে। এরই সূত্র ধরে এই অঞ্চলে ১৯০০-এর দশকে নির্বাক এবং ১৯৫০-এর দশকে সবাক চলচ্চিত্র নির্মাণ ও প্রদর্শন শুরু হয়। চলচ্চিত্রের উৎপত্তি ১৯১০-এর দশকে হলেও এখানে পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নিয়ে আগ্রহের সৃষ্টি হয়েছে ১৯৫০-এর দশকেই। ১৮৯৮ সালের ৪ এপ্রিল দেশে সর্বপ্রথম বায়োস্কোপ প্রদর্শনী হয়। এই বায়োস্কোপের ছোট ছোট বিচ্ছিন্ন অংশের আধুনিক সংস্করণ আজকের চলচ্চিত্র শিল্প। ঢাকার জগন্নাথ কলেজ বর্তমান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ভিক্টোরিয়া পার্ক বর্তমান বাহাদুর শাহ পার্ক, আহসান মঞ্জিল এবং ঢাকার বাইরে তৎকালীন মানিকগঞ্জ মহকুমার বগজুরি গ্রামে, জয়দেবপুরে ভাওয়াল এস্টেটের রাজপ্রাসাদে, ফরিদপুর জেলার মাদারীপুর মহকুমার পালংয়ে বায়োস্কোপ প্রদর্শনীর আয়োজন করা হতো। বিশ শতকের গোড়ার দিকে চলচ্চিত্র শিল্পের বিকাশ হলেও পঞ্চাশের দশকে সবাক চলচ্চিত্রের নির্মাণ ও প্রদর্শন শুরু হয়। বিশ্লেষকদের মতে এখানকার সাংস্কৃতিক পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতেই চলচ্চিত্রের প্রায় ৫০ বছর লেগে গেছে। ১৯৯০-এর দশকে বাংলাদেশে প্রতি বছর গড়ে ৮০টির মতো পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র মুক্তি পেত। আর ২০০৪ সালের হিসাব মতে ঢাকায় বছরে গড়ে ১০০টির মতো চলচ্চিত্র মুক্তি পায়। এ হিসাবে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্পকে বেশ বড়ই বলা যায়, যদিও আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র শিল্পে তা অনেকটাই উপেক্ষিত। সমাজ-সংস্কৃতির উন্নয়নের পাশাপাশি জাতির ইতিহাস ঐতিহ্যকে সমুন্নত রাখতে চলচ্চিত্র শিল্পের যে অগ্রযাত্রা শুরু হয়েছিল তা এখন অত্যন্ত শোচনীয় হয়ে পড়েছে। বিগত দশকে নির্মিত চলচ্চিত্রগুলোতে বিজাতীয় সংস্কৃতির অবাধ চর্চা, বাণিজ্যিক প্রতিযোগিতা, যৌথ প্রযোজনা, দুর্নীতিসহ নানা কারণে চলচ্চিত্র শিল্পে যে ধস নেমেছে তা সত্যিই দুঃখজনক। উন্নত সংস্কৃতির নামে নোংরা পোশাক-পরিচ্ছদ, নিচু রুচিশীলতা, বিদেশি শিল্পীদের অন্ধ অনুকরণের কারণে বাংলা চলচ্চিত্রের দর্শক সংখ্যা যেমন কমেছে একইভাবে শিল্পী ও পরিচালকদের সঙ্গে জনসাধারণের দূরত্ব তৈরি হয়েছে। এর অন্যতম কারণ হলো সংস্কৃতি সেবার পরিবর্তে শিল্পীরা বাণিজ্যিক প্রতিযোগিতায় নেমেছে এবং এককালের জমজমাট সিনেমা হলগুলো ভেঙে এখন শপিং কমপ্লেক্স তৈরি করা হচ্ছে। চলচ্চিত্র শিল্পকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্ত থেকে রক্ষা করতে প্রবীণ পরিচালক, প্রযোজক, শিল্পীদের এগিয়ে আসতে হবে। বিজাতীয় সংস্কৃতির পরিবর্তে নিজস্ব সংস্কৃতির চর্চা করতে হবে। পাশাপাশি ইতিহাস ঐতিহ্যের ওপর ভিত্তি করে যুগোপযোগী চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে হবে। তবেই চলচ্চিত্র শিল্পের গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি পাবে। বাণিজ্যিক সফলতার পাশাপাশি সামাজিক অবক্ষয় রোধেও সহায়ক হবে এ শিল্প।

রাকিবুল ইসলাম রাকিব : শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App