×

সারাদেশ

চট্টগ্রামের নদীতে প্রতিদিন মিলছে ডলফিনের মরদেহ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৭ অক্টোবর ২০২১, ০৮:৪৩ এএম

চট্টগ্রামের নদীতে প্রতিদিন মিলছে ডলফিনের মরদেহ

সোমবার সকালে চট্টগ্রামের হালদা নদী থেকে একটি ডলফিন মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। ছবি: ভোরের কাগজ

চট্টগ্রামের হালদা এবং কর্ণফুলী নদীতে একের পর এক ডলফিন মারা যাচ্ছে। মূলত, মাছ ধরার জালে আটকে এবং নদী থেকে বালি উত্তোলনে ব্যবহৃত ড্রেজারের আঘাতেই ডলফিনগুলো মারা যাচ্ছে বলে মনে করছেন গবেষকরা। গত ৪ বছরে শুধু এই দুই নদীতেই অর্ধশতাধিক ডলফিনের মৃত্যু হয়েছে, যার অধিকাংশই জালে আটকে বা ড্রেজারের আঘাতে মারা যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে বাংলাদেশ থেকে এই প্রাণিটি বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

সোমবার সকালে চট্টগ্রামের হালদা নদী থেকে একটি ডলফিন মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। হালদা নদীর বাঁশখালী উপজেলার কালীপুর ইউনিয়নের রামদাস মুন্সীহাট এলাকা থেকে ডলফিনটি উদ্ধার করা হয়। স্থানীয়রা জানান, মৃত ডলফিনটিকে ভাসতে দেখে নৌপুলিশকে খবর দেয়া হয়। ডলফিনটি পচে যাওয়ায় সংশ্লিষ্ট সবাইকে জানানোর পর নৌপুলিশের সহযোগিতায় সেটিকে মাটিচাপা দেয়া হয়। ডলফিনটির দেহ পচে যাওয়ায় কোনো আঘাতের চিহ্ন শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি বলে জানান গবেষকরা। তবে তারা ধারণা করছেন, জেলেদের

জালে আটকা পড়ে শ্বাসরোধ হয়ে মারা গেছে ডলফিনটি। এর আগে ৩০ সেপ্টেম্বর একই এলাকার হালদা নদী থেকে ৫৯ ইঞ্চি দৈর্ঘ্যরে একটি মৃত ডলফিন উদ্ধার করা হয়েছিল। এর আগে ১ আগস্ট কর্ণফুলী হামিদচর, ৬ জুলাই হাটহাজারী মেখল, ১৫ জুলাই কর্ণফুলী শাখা খাল বোয়ালখালী পূর্বগোমদণ্ডী এলাকা থেকে মৃত ডলফিন উদ্ধার করা হয়।

চট্টগ্রামের কর্ণফুলী ও হালদা নদীতে গাঙ্গেয় ডলফিনের বাস। ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচার-আইইউসিএনের তালিকা অনুযায়ী, একসময় এ দুটি নদীতে নিয়মিত ডলফিনের দেখা মিলত। তবে কর্ণফুলী ও হালদা নদীতে দূষণ-দখল বেড়ে যাওয়ায় ও বেশি সংখ্যায় নানা ধরনের নৌযানের চলাচলের কারণে সা¤প্রতিক বছরগুলোতে ডলফিনের দেখা মেলে খুব কম। প্রজনন সময়ে এই দুই নদীর বেশির ভাগ ডলফিন কর্ণফুলী-হালদা মোহনাসংলগ্ন হালদা নদীতে বিচরণ করে বলে নদী তীরের বাসিন্দা ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরির কো-অর্ডিনেটর অধ্যাপক মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, নদী রক্ষা বা ডলফিন রক্ষায় সরকার যতই উদ্যোগ গ্রহণ করুক না কেন, স্থানীয় এলাকাবাসী এবং জেলেরা যদি সচেতন না হলে প্রশাসনিক উদ্যোগ সফল হবে না। এভাবে নিধন হতে থাকলে বিপন্ন প্রজাতির ডলফিন হারিয়ে যাবে।

অধ্যাপক কিবরিয়া বলেন, ডলফিন পানির নিচে শ্বাস নিতে পারে না, উপরে ভাসতে হয়। এ কারণে নদী বা সাগরে সবখানেই ডলফিনকে একটু পরপর ভেসে উঠতে দেখা যায়। নদীতে বিচরণ করতে করতে অনেক সময় পেতে রাখা কারেন্টজাল, ফাঁস বা চান্দিজালে ঠোঁট, পাখনা জড়িয়ে আটকা পড়ে ডলফিন। জালে আটকা পড়লে নিঃশ্বাস নেয়ার জন্য পানির ওপর মাথা তুলতে না পেরে দম বন্ধ হয়ে মারা যায়। সাম্প্রতিক সময়ে উদ্ধার করা ডলফিনগুলোর গায়ে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে, উদ্ধার করা বেশির ভাগ মৃত ডলফিন জালে আটকে দম বন্ধ হয়ে মারা গেছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App