×

জাতীয়

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন না হওয়ার নেপথ্যে আন্তর্জাতিক নিষ্ক্রিয়তা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৫ অক্টোবর ২০২১, ০৮:৫২ এএম

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন না হওয়ার নেপথ্যে আন্তর্জাতিক নিষ্ক্রিয়তা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

** মানুষ কেন বিএনপিকে ভোট দেবে **

** তালেবান নিয়ে ভয়ের কিছু নেই **

 **ইসি গঠনে সার্চ কমিটি **

রোহিঙ্গা ইস্যুতে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর নিষ্ক্রিয়তায় উষ্মা প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন নিয়ে আমরা কাজ করছি। কিন্তু আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো এই বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে না। যেন কোনো একটি দেশে শরণার্থী থাকলে অনেক সংস্থার উপার্জনের পথ তৈরি হয়। সেটা বোধহয় কারো কারো জন্য ব্যবসা হয়ে দাঁড়ায়। আন্তর্জাতিক অনেক সংস্থাই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে আন্তরিক। তবে কোনো কোনো সংস্থার জন্য এটি ব্যবসা। শরণার্থী না থাকলে তো তাদের চাকরিই থাকবে না!

গণভবনে গতকাল সোমবার বিকালে আয়োজিত জাতিসংঘ সফরপরবর্তী এক সংবাদ সম্মেলনে এমন কথা বলেন তিনি। প্রায় সোয়া দুই ঘণ্টাব্যাপী সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য শেষে সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের জবাব দেন প্রধানমন্ত্রী। সংবাদ সম্মেলনের অন্যপ্রান্ত প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমের কর্মীরা অংশ নেন। বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতারসহ বিভিন্ন টেলিভিশন সংবাদ সম্মেলন সরাসরি সম্প্রচার করে। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সংবাদ সম্মেলন সঞ্চালনা করেন। এ সময় গণভবনপ্রান্তে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।

সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গারা যখন এলো প্রথম কয়েক মাস তো তাদের জন্য সবকিছু আমরাই করলাম। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো পরে যুক্ত হয়েছে। অনেকের কাছ থেকেই অনেক প্রস্তাবনা পাই, এদের জন্য এটা করা হোক, ওটা করা হোক। আমাদের কাছে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো যখনই কোনো কিছু করার কথা বলে, আমরা বলি যা করার মিয়ানমারে করেন। সেখানে হাসপাতাল করেন, স্কুল করেন, ঘর করে দেন। আমাদের এখানে যা করার আমরা করে দিয়েছি। আমার ধারণা কিছু কিছু শ্রেণির কাছে সব কিছুকেই ব্যবসা মনে হয়। তবে কেউ কেউ তো আন্তরিকও রয়েছে। তাদের কাছ থেকে ভালো সাড়া পাই। কেউ কেউ শুধু শুনেই যান, সমস্যা এখানেই। ১৯৯১ সালে একসঙ্গে অনেক রোহিঙ্গা এসেছিল। তখন আলোচনার মাধ্যমে কিছু ফেরত গেল, তিন লাখ থেকে গেল। রোহিঙ্গাদের নেতা মহিবুল্লাহ সেই সময়ই আসে। আর কখনো ফেরত যায়নি। এবার আরো আট লাখ রোহিঙ্গা এলো। সব মিলিয়ে ১১ লাখ রোহিঙ্গা এখন বাংলাদেশে আছে। উখিয়া এলাকা এখন পুরো বদলে গেছে। তার চেয়েও বড় কথা সেখানে এখন সন্ত্রাস, নারী পাচার, শিশু পাচার, মাদক পাচারের মতো অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে অনেকেই। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি এগুলো থামানোর। এর জন্যও অনেকে কাজ করে যাচ্ছে। আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কেও বলেছি, এদের ফেরত না দিলে অনেক সমস্যা হবে। আমরা আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থাকে বলছি, এখন আপনারা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য চাপ দিন।

মানুষ কেন বিএনপিকে ভোট দেবে: সংবাদ সম্মেলনে অপর এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, অনেকগুলো নির্বাচন হচ্ছে। ভোটারদের উপস্থিতিও স্বতঃস্ফূর্ত। নির্বাচনে কোনো সমস্যা নেই। অনেক চেষ্টা হয়েছে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার। নির্বাচন ঠেকাতেও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করা হয়েছে। কিন্তু পারেনি। যারা নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তোলে, সেই বিএনপির জন্মটা কীভাবে? জনগণ ভোট দিতে পারছে না বলে তারা যে অভিযোগ করছেন, তাদের কে ভোট দেবে? তারা জানে, তাদের আর কোনো ‘সম্ভাবনা নেই’; সে কারণেই তারা নির্বাচনকে ‘বিতর্কিত করার চেষ্টা’ করছে। একটা দল কীভাবে জিতবে, তার নেতৃত্বটা কোথায়? একজন এতিমের টাকা চুরি করে সাজাপ্রাপ্ত আসামি। আরেকজন গ্রেনেড হামলার মামলায় কারাদণ্ড নিয়ে দেশান্তরী, সাজাপ্রাপ্ত আসামি। জনগণ কোন ভরসায় ওই দলকে ভোট দেবে? জনগণ কখন ভোট দেয়? মানুষ দেখে ওই দলকে ভোট দিলে ক্ষমতায় কে যাবে। তারা তো ইলেকশনও করতে পারবে না। জানে যে তাদের কোনো সম্ভাবনা নাই। সম্ভাবনা যখন নাই, যেভাবে হোক নির্বাচনটা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করা অর্থাৎ গণতন্ত্রের যে ধারাবাহিকতা অব্যাহত আছে, সেটা নষ্ট করা। আবারো বলছি, জনগণ ভোট দিতে পারছে না- এই কথাটা যারা বলে, মানুষ তাদের ভোট কেন দেবে? কারা, কেন, কোন সুখের স্বপ্নে বা কোন আশার আলো দেখে বিএনপিকে ভোট দেবে? সেটাও একটু জিজ্ঞেস করেন।

তালেবান নিয়ে ভয়ের কিছু নেই: আফগানিস্তানে তালেবান শাসন নিয়ে বাংলাদেশে ভয়ের কোনো কারণ আছে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ভয় পেলেই ভয়, ভয় না পেলে কিছুই নয়। প্রথম কথা হচ্ছে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। হ্যাঁ, এক সময় যখন তালেবান আফগানিস্তানে অবস্থান সৃষ্টি করেছিল, তখন আমাদের দেশের বহু লোক সেখানে গিয়ে ট্রেনিং নিয়ে আসে। অর্থ-সম্পদ বানিয়ে নিয়ে আসে। যার জন্য একটা সময় আমাদের দেশে জঙ্গিবাদ সৃষ্টি হয়েছিল। আমরা সেটাকে সুন্দরভাবে নিয়ন্ত্রণ করেছি। তবে আমি মনে করি এখন প্রয়োজন মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করা। আমরা তৃণমূল থেকে সর্বস্তরের মানুষকে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে এক করতে কাজ করে যাচ্ছি।

বাংলাদেশেই ভ্যাকসিন উৎপাদন হবে: অপর এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ভ্যাকসিনকে গোটা বিশ্বের জন্য সর্বজনীন করতে আন্তর্জাতিক মহলকে বলেছি। এখনো অনেক দেশ ভ্যাকসিন পায়নি। কেউ এক ডোজ ভ্যাকসিন পেয়েছে, দ্বিতীয় ডোজ পায়নি। এসব দেশের কথা আমি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বলেছি। আমি বলেছি, সবার জন্য ভ্যাকসিনের ব্যবস্থা করতে হবে। সেই সঙ্গে বাংলাদেশেও করোনা ভ্যাকসিন উৎপাদনে আমরা ব্যবস্থা নিয়ে রেখেছি। ভ্যাকসিন উৎপাদন নিয়ে আমরা ইতিবাচক সাড়া পেয়েছি। আমি আশাবাদী, শিগগিরই ভ্যাকসিন উৎপাদন করতে পারব। আমরা ১০ একর জায়গা নিয়ে রেখেছি। বৈশ্বিক ভ্যাকসিন জোট আছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আছে। তাদের সঙ্গে আলোচনা চলছে। আমরা বলেছি, আমরা ফর্মুলা চাই। আমরা ফর্মুলা পেলে দেশেই ভ্যাকসিন প্রস্তুত করতে পারব।

সার্চ কমিটির মাধ্যমেই নির্বাচন কমিশন গঠন: সার্চ কমিটি না কি অন্য কোনো উপায়ে নির্বাচন কমিশন গঠন হবে- এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাষ্ট্রপতি একটা সার্চ কমিটি করবেন। সার্চ কমিটির মাধ্যমেই নির্বাচন কমিশন গঠন করা হবে। টিউলিপের ওপর হামলা, নিশ্চয়ই ব্রিটেন সরকার দেখবে : লন্ডনে টিউলিপ সিদ্দিকীর ওপর হামলা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাজাপ্রাপ্ত আসামি, যুদ্ধাপরাধীদের ছেলে-মেয়েসহ বহু অপরাধীর আবাস ইংল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে। আমি যেখানে গিয়েছি, সেখানেও আমার বিরুদ্ধে সেøাগান, পতাকা দেখানোসহ বহুকিছু। আর সেখানে ব্রিটিশ এমপির গাড়িতে হামলা। টিউলিপ শুধু বঙ্গবন্ধুর নাতনি নয়, ব্রিটিশ এমপি। এটা ব্রিটিশ সরকারের দায়িত্ব, তারা নিশ্চয়ই সেটা দেখবে। তবে এ ধরনের ঘটনা যারা ঘটায়, তারা কী জাতীয় লোক, সেটা বিচার করবে বাংলাদেশের মানুষ। যে ইংল্যান্ডের মতো একটা সভ্য দেশে সেখানে কারা এ ধরনের অসভ্য ঘটনা ঘটায়। আর কিছু লোক আছেই, সারাক্ষণ বিরুদ্ধে লেগে থাকে। কিছু নেতার মেয়ে-জামাইরাও সেখানে থাকে। আর কিছু লোক সেখানে বসে ডিজিটাল সুযোগ নিয়ে অপকর্ম করেই যাচ্ছে।

প্রতারণা করে টাকা কামানোর উপযুক্ত শান্তি হবে: ডেসটিনি, যুবক, ইউনিপেসহ বিভিন্ন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের প্রতারণা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ ব্যাপারে সরকারের যেটুকু করার দরকার আমরা সেটা করে যাচ্ছি। তবে এ ধরনের ঘটনা যখন সৃষ্টি হয়, সাংবাদিকদেরও দায়িত্ব আছে। শুরুতেই যদি আপনারা বিষয়গুলো ধরিয়ে দিতে পারেন। আর মানুষকে সচেতন করতে পারেন। আর তারা টাকা কোথায় লুকিয়ে রেখেছে, পাচার করেছে- এগুলো নিয়ে তদন্ত হচ্ছে। আমরা চেষ্টা করছি, সেই টাকা ফেরত আনার। করোনার কারণে কিছু সমস্যা হয়েছে। নইলে অনেকের টাকা আমরা আনতে পারতাম। এখন আবার সেগুলো আমরা দেখছি। তিনি বলেন, মানুষের দুঃসময়ের সুযোগ নিয়ে কিছু মানুষ টাকা বানানোর জন্য প্রতারণা করে। এটার উপযুক্ত শাস্তি অবশ্যই হবে। অনেককেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

কোথাও অশান্তি হলে আমরা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়ি: সার্কভুক্ত দেশ আফগানিস্তান নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা সব সময় শান্তি চাই। আমাদের পররাষ্ট্রনীতি হলো সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়। আমরা সেটাই মেনে চলি, সেটাই করি। কোথাও অশান্তি হলে সত্যি আমরা খুব দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে যাই। আমার ভয় হয় যে এগুলো যেন আমাদের ওপর না পড়ে। কারণ অতীত ইতিহাস তো খুব ভালো নয়। কারণ নানা ষড়যন্ত্র-চক্রান্তের মধ্য দিয়ে আমরা চলছি। ২০০৮ সালের পর থেকে আমরা দেশটাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। এর মধ্যেও বারবার আঘাত এসেছে। আমরা সব সামাল দিয়েছি। কিছুটা হলেও মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতে পেরেছি। আমি যখন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যাই, তখন এগুলো তুলে ধরি। সমাধান যেন খুঁজে পায়, সেটাও আমি তুলে ধরি। আফগানিস্তানের বিষয়টা সব জায়গায় তুলে ধরা হয়েছে। এটার একটা শান্তিপূর্ণ সমাধান হোক- সেটাই আমরা চেয়েছি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App