×

জাতীয়

কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় বাস্তবায়নযোগ্য নীতি প্রণয়নের তাগিদ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৫ অক্টোবর ২০২১, ০৯:২২ পিএম

কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় বাস্তবায়নযোগ্য নীতি প্রণয়নের তাগিদ

মঙ্গলবার ডিএসকে কনসোর্টিয়াম ও ভোরের কাগজের যৌথ আয়োজনে ‘কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও আমাদের করণীয়’ শীর্ষক ওয়েবিনারে আলোচকরা।

কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় বাস্তবায়নযোগ্য নীতি প্রণয়নের তাগিদ

মঙ্গলবার ডিএসকে কনসোর্টিয়াম ও ভোরের কাগজের যৌথ আয়োজনে ‘কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও আমাদের করণীয়’ শীর্ষক ওয়েবিনারে আলোচকরা।

জীবনযাত্রার উন্নতির সঙ্গে সমহারে বাড়ছে মানুষের ব্যবহার্য দ্রব্যাদির পরিমাণও। ফেলে দেয়া বর্জ্যের মধ্যে কঠিন বর্জ্য আমাদের পরিবেশ দূষণ, স্বাস্থ্য সমস্যাসহ বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন করছে। কিন্তু এর উৎপাদন সম্পর্কিত নীতি প্রণয়নের মাধ্যমে সঠিক বাস্তবায়ন করতে পারলে বর্জ্য সম্ভাবনার সম্পদ হিসেবে ব্যবহার হতে পারে, আর সঠিক ব্যবস্থাপনা করতে না পারলে পরিবেশ দূষণ বাড়বে। এমন বাস্তবতায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে এড়িয়ে পরিচ্ছন্ন দেশ গড়া অসম্ভব। এ অবস্থায় কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় একটি কার্যকর বাস্তবায়নযোগ্য নীতি প্রণয়নের দাবি জানিয়েছেন আলোচকরা। ওয়েবিনারে কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার পলিসি ব্রিফ উপস্থাপন করেন ঢাকা কলিং প্রকল্পের কারিগরি উপদেষ্টা সুমন আহসানুল ইসলাম।

মঙ্গলবার (৫ অক্টোবর) ইউএসএআইডিও এবং এফসিডিও এর আর্থিক সহযোগিতায়, কাউন্টারপার্ট ইন্টারন্যাশনাল এর কারিগরি সহায়তায়, ডিএসকে কনসোর্টিয়াম ও ভোরের কাগজের যৌথ আয়োজনে ‘কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও আমাদের করণীয়’ শীর্ষক এক ভার্চুয়াল ওয়েবিনারে এসব কথা বলেন বক্তারা। এছাড়া ওয়েবিনারে বর্জ্য ব্যস্থাপনা নিয়ে ওঠে আসে একগুচ্ছ সুপারিশ। এগুলো পর্যালোচনা করে একটি কার্যকর বাস্তবায়নযোগ্য নীতি প্রণয়নের তাগিদ দেন বক্তারা।

দুঃস্থ স্বাস্থ্য কেন্দ্রের (ডিএসকে) নির্বাহী পরিচালক ডা. দিবালোক সিংহের সভাপতিত্বে ও ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্তের সঞ্চালনায় ওয়েবিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে স্থানীয় সরকার বিভাগ (পানি সরবরাহ অনুবিভাগ) এর অতিরিক্ত সচিব মুহম্মদ ইবরাহিম, বিশেষ অতিথি ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা অতিরিক্ত সচিব মো. সেলিম রেজা, স্থানীয় সরকার বিভাগের (নগর উন্নয়ন শাখা) যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ নূরে আলম সিদ্দিকী, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াদুদ চৌধুরী, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা এয়ার কমোডর সিতওয়াত নাঈম প্রমুখ বক্তব্য দেন। ওয়েবিনারে ঢাকা কলিংয়ের কনসোর্টিয়াম সমন্বয়ক সানজিদা জাহান আশরাফী প্রজেক্ট পরিকল্পনা উপস্থাপনা করন।

আলোচনায় প্রধান অতিথি মুহম্মদ ইবরাহিম বলেন, আমরা উন্নত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের বর্জ্যরে পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। ফলে বর্জ্য থেকে সম্পদে রূপান্তর করার প্রক্রিয়া আমাদের খুঁজে বের করতে হবে। আমাদের এখানে বর্জ্য অপসারণের জন্য জমির পরিমাণ খুবই কম জানিয়ে তিনি বলেন, বর্জ্য অপসারণই আমাদের মূল লক্ষ্য। এ অবস্থায় বর্জ্য হ্রাস করার দিকে অগ্রসর হচ্ছি। বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন আমাদের লক্ষ্য নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা যদি বর্জ্য অপসারণ করতে গিয়ে বাই প্রডাক্ট হিসেবে বিদ্যুৎ পাই, এটা আমাদের জন্য একটা বাড়তি সুবিধা। এছাড়া আমরা পিপিপি’র মাধ্যমে বর্জ্য অপসারণের বিষয়টিও ট্রায়ালে রেখেছি। পাশাপাশি আমরা যদি জৈব বর্জ্যকে মাটির দিকে ফিরিয়ে দিতে পারি, আর অজৈব বর্জ্যটা প্রসেস করতে পারি, তাহলে আমাদের কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কাজটা হয়ে যায়। আমরা কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার যে বিধিটা করতে যাচ্ছি, এখানে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে, তার একটা গাইড লাইন আমরা এখান থেকে পেয়ে যাবো। স্থানীয় সরকার বিভাগ ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় সমন্বিতভাবে আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে বিধিমালা ফাইনাল করবো।

সভাপতির বক্তব্যে ডা. দিবালোক সিংহ বলেন, কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কার্যকরে আমাদের দেশে যে আইন আছে সেটা কতটা বাস্তবায়ন হবে এবং সরকারের বাজেটে এ বিষয়ে কতটুকু বরাদ্দ রাখা হয়, সে বিষয়ে সবার আগে নজর দিতে হবে। এছাড়া হতদরিদ্র এলাকায় বর্জ্য ব্যবস্থ্পনায় নজর দেয়া অর্থাৎ তারা যেহেতু অল্প শিক্ষিত তাই তাদের সচেতন করা জরুরী। একই সঙ্গে গণমাধ্যমকে এই কাজে সম্পৃক্ত করতে পারলে একদিন হয়তো বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় উন্নয়নশীল দেশ রাশিয়ার মতো জিরো টলারেন্সে নামিয়ে আনতে পারবো।

কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে ঢাকা কলিংয়ের নিজস্ব প্রজেক্ট প্রস্তাবনা তুলে ধরে ঢাকা কলিংয়ের কনসোর্টিয়াম সমন্বয়ক সানজিদা জাহান আশরাফী বলেন, পরিবেশবিদদের নিয়ে এই প্রজেক্টের আওতায় ঢাকা উত্তর এবং দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের দুটি করে ওয়ার্ড নিয়ে মোট চারটি ওয়ার্ডের বস্তিতে জরিপ চালানো হচ্ছে। পরিবেশ দূষণ আইনের মাধ্যমে এ কাজ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, সরকারের যে সকল কর্মকর্তারা এ কাজে নিয়েজিত আছেন তারা যদি সুষ্ঠুভাবে কাজগুলো শেষ করতে পারেন তাহলে বস্তির মানুষগুলোর মধ্যে আচরণগত অনেক পরিবর্তন আসবে এবং তারা স্বাস্থ্যকর পরিবেশে বাস করতে পারবে। তিনি বলেন, সিটি কর্পোরেশন এবং স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে এসব কাজ করা হবে যাতে সিটি কর্পোরেশেনের বাজেটে বস্তিবাসীদের জন্য পর্যাপ্ত বাজেট রাখবে। পাশাপশি মিডিয়াকে এ কাজে সম্পৃক্ত করে প্রচার করতে হবে।

ঢাকা উত্তর সিটি কপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম রেজা বলেন, বর্জ্য এখন বিশাল ব্যাবসার জায়গা। চায়না সিএমএসি কোম্পানির সঙ্গে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এবং বিদুৎ মন্ত্রণালয় ও উত্তর সিটি মিলে সমন্বয় করে ওয়েস্ট এনার্জি নামের একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে। সেখানে উত্তর সিটির গুরুত্বপূর্ণ দুটি স্টেক রয়েছে সেখানে কর্পোরেশনের নিজস্ব জমিতে ল্যান্ড ফিল্ড তৈরি করা হয়েছে। যেখানে নিরবিচ্ছিন্নভাবে ৫শ টন বর্জ্য সেখানে নিস্কাশন করা সম্ভব হবে। সিটি কর্পোরেশন বর্তমানে ২৫ থেকে ২৬শ টন বর্জ্য উৎপাদন করে জানিয়ে তিনি বলেন, উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে বর্জ্য উৎপাদনের পরিমাণও বেড়ে যাচ্ছে এবং এই পরিধি বেড়ে যওয়ার প্রেক্ষিতে এমন একটি অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে যে, একদিন যদি পরিস্কার করা না হয় পরের দিন এই নগর বসবাসের অযোগ্য হয়ে যাবে। এসব কিছু চিন্তা করেই আমরা পরিকল্পনা মাফিক কাজ করছি।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যাবস্থাপনা কর্মকর্তা সিতওয়াত নাঈম বলেন, দক্ষিণ সিটিতে বর্জ্য ব্যাবস্থাপনায় আমরা একটি মাস্টর প্ল্যান ফলো করছি। সেটি হলো- ২০১৮ থেকে ৩২ সাল পর্যন্ত। মেয়র ইতোমধ্যে এই প্ল্যানটি অনুমোদন দিয়েছেন। ফলে সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি প্রগ্রেসিভ ডেভেলপমেন্টের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। তবে কঠিন বর্জ্য ব্যাবস্থাপনাটি একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া যা সমন্বনিত প্ল্যান ছাড়া বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। ঢাকা দক্ষিণের ৭৫টি ওয়ার্ডের জনসংখ্যার সঙ্গে বর্জ্যের পরিমাণও বেড়েই চলছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বর্জ্য নিষ্কাশনের জন্য আমরা পরিকল্পনা মাফিক কাজ করছি। কোনো খোলা জায়গায় বর্জ্য থাকবে না। এর মধ্যে ২৪টি এসটিএস তৈরি হয়েছে। ২২টি এখনো প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

ইউএসএআইডির বাংলাদেশের পলিটিক্যাল প্রসেস এন্ড সিএসও টিম লিডার স্লাভিসা রাদোসেভিচ্ বলেন, এই কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থানার সঙ্কটটা একটা বৈশ্বিক সমস্যা। ঢাকা কলিং প্রজেক্ট ঢাকার ক্ষেত্রে অত্যন্ত যুগোপযোগী। মানুষের জীবনমান উন্নয়নে এই প্রজেক্ট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। আলোচনায় খুবই গুরুত্বপূর্ণ পর্যালোচনা উঠে এসেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশে অনেকগুলো ভালো ভালো নীতি আছে। এই নীতিগুলো বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অনেক চ্যালেঞ্জও আছে। চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করে যেন বাস্তবায়নযোগ্য একটি নীতি বের করা যায়, সেদিকে জোর দেয়া উচিত। এখান থেকে ভালো একটা মডেল তৈরি করা যেতে পারে, যাতে বস্তি এলাকার মানুষ কিভাবে এই বর্জ্যগুলোর ব্যবস্থাপনা করবে এই মডেলটি অনুসরণ করা যেতে পারে বাংলাদেশের অন্যান্য জায়গায়ও।

বস্তিবাসীর পক্ষে কড়াইল বস্তি থেকে অনলাইনে সংযুক্ত হয়ে স্মৃতি আক্তার বলেন, সবচেয়ে বড় এই কড়াইল বস্তিতে জনসংখ্যার ঘনত্ব অনেক বেশি। এখানে সবাই ময়লা যেখানে সেখানে ফেলে রাখে বা ঢিল মেরে ঝিলে ফেলে দেয়। কাছাকাছি যে এসটিএস রয়েছে, সেখানে ময়লা ফেলার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই। তাই সিটি কর্পোরেশনের বরাদ্দে বস্তিবাসীর উন্নয়নে বিশেষ বরাদ্দ রাখার অনুরোধ জানান তিনি।

ওয়েবিনারে আরও অংশ নেন, কাউন্টারপার্ট ইন্টারন্যাশনালের চিফ অব পার্টি মাঈনুদ্দিন আহমেদ, ওয়াটারএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর হাসিন জাহান, বিল এন্ড মিলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের সিডব্লিউআইএস-এফএসএম সাপোর্ট সেল ডিপিএইচই এর সিটি সাপোর্ট ইউনিট এর চিফ অপারেটিং অফিসার ড. আব্দুল্লাহ আল-মুয়ীদ,  ওয়াটার কিপারস বাংলাদেশ এর কোঅর্ডিনেটর শরীফ জামিল, আইটিএন-বুয়েট এর প্রজেক্ট ম্যানেজার আলাউদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ এনভায়রনমেন্ট লয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন (বেলা) এর প্রোগ্রাম হেড  খোরশেদ আলম, ব্র্যাক এর আরবান ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম এর প্রোগ্রাম ম্যানেজার (ওয়াশ) রাজু বসাক, ডেইলি অবজার্ভারের জেষ্ঠ প্রতিবেদক বনানী মল্লিক, হাজারীবাগ বউবাজার বস্তির ইয়ুথ অ্যাডভোকেট আব্দুর রহিম, করাইল বস্তির ইয়ুথ অ্যাডভোকেট শাহিদা বেগম এবং মোল্লার বস্তির ইয়ুথ অ্যাডভোকেট শাহিদা আক্তার।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App