×

জাতীয়

নির্বাচন কমিশনের পুনর্গঠনে আইন প্রণয়নের দাবি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৪ অক্টোবর ২০২১, ০৮:১৩ পিএম

সংবিধান মেনে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হলে নির্বাচন কমিশনের পুনর্গঠনের জন্য একটি আইন প্রণয়নের কোনো বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেছেন নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা।

সোমবার (৪ অক্টোবর) নাগরিক সংগঠন সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিক-এর পক্ষ থেকে ‘নির্বাচন কমিশন নিয়োগ আইন ও প্রাসঙ্গিক ভাবনা’ শিরোনামে একটি অনলাইন গোলটেবিল বৈঠকে এমন মন্তব্য করেছেন তারা।

সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সভাপতি জনাব এম হাফিজউদ্দিন খান -এর সভাপতিত্বে ও সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারের সঞ্চালনায় এই অনলাইন গোলটেবিল বৈঠকে বক্তব্য রাখেন সংবিধান প্রণয়ন কমিটির অন্যতম সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার আমীরুল ইসলাম, বিচারপতি এম এ মতিন, সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন, সাবেক সচিব জনাব আবদুল লতিফ ম-ল, অ্যাডভোকেট ড. শাহদীন মালিক, সাবেক মন্ত্রীপরিষদ সচিব জনাব আলী ইমাম মজুমদার, বিশিষ্ট জনস্বাস্থ্য ব্যক্তিত্ব ও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা রুহিন হোসেন প্রিন্স, বিশিষ্ট আলোকচিত্রী ড. শহিদুল আলম, বিশিষ্ট অধ্যাপক জনাব আসিফ নজরুল, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক জনাব অজয় দাশগুপ্ত, নির্বাচন পর্যবেক্ষণকারী ও ব্রতীর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন মুর্শিদ, মানবাধিকারকর্মী এবং নারীনেত্রী শিরিন হক, ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের ড. আব্দুল আলিম, আর্টিকেল নাইনটিনের জনাব ফারুক ফয়সাল প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, শুধু আইন প্রণয়ন করলেই হবে না, আইনটি হতে হবে জনস্বার্থে- দলীয় বা কোটারি স্বার্থে নয়। যাতে কয়েকজন সৎ, নির্ভীক ও গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি নির্বাচন কমিশনে নিয়োগ পান। এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, আমাদের সংবিধানের ধারাগুলোর সাথে সামঞ্জস্য রেখে আইনটি নিয়ে কাজ করতে হবে। এখন আমাদের এমন একটি খসড়া আইন প্রণয়ন করা উচিত যেটি দূরদর্শী হবে, শুধু বর্তমান প্রেক্ষাপটে নয়।

ব্যারিস্টার আমীরুল ইসলাম বলেন, সংবিধানের ওকুপায়েড এরিয়েঅকে সম্মান দেখিয়েই এই কাজটি করতে হবে। অন্যান্য দেশের প্র্যাকটিসগুলো কিভাবে হচ্ছে, আমরা সে বিষয়ে আবারও চিন্তা করতে পারি। ড. শাহদীন মালিক বলেন, অনুসন্ধান কমিটিতে প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি উল্লেখ না করে আপিল বিভাগ কর্তৃক মনোনীত একজন অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি বা বিচারপতি বলা যায়। কমিশনের কাজের ধারাবাহিকতা রক্ষার্থে প্রথম চারজন নিয়োগ দিয়ে এক বছর পর আরেকজন কমিশনয়ার নিয়োগ দেওয়ার বিধান রাখা যেতে পারে। তবে প্যানেল নির্বাচনের ক্ষেত্রে সংসদকে পাশ কাটানোর কোনো সুযোগ নেই। সরকার চাইলে এরকম একটি আইন পাশ করতে বেশি সময় লাগার কথা না। বর্তমানে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক গঠিত সার্চ কমিটির ব্যাপারে বলব, এটির মাধ্যমে জনগণকে ধোকা দেয়ার প্রক্রিয়া চালু হয়েছে।

আলী ইমাম মজুমদার বলেন, আমাদের মূল উদ্দেশ্য কিন্তু নির্বাচন করা এবং সে নির্বাচন অবশ্যই সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হতে হবে। সেই লক্ষ্যে এ ধরনের একটি আইন হলে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে বলে আমি মনে করি। কিন্তু এই সরকার ব্যবস্থাই সুষ্ঠু নির্বাচন করা অসম্ভব। গত তের বছর ধরে পুলিশ ও প্রশাসনকে যেভাবে সাজানো হয়েছে এতে কোনো শক্তিশালী কমিশনের পক্ষেও ফাংশন করা সম্ভব হবে না। তাই সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আইন করার পাশাপাশি সরকার ব্যবস্থা নিয়েও কথা বলতে হবে।

রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, আমাদের ধাপে ধাপে এগুতে হবে। এখন নির্বাচন কমিশন নিয়ে আলাপ হচ্ছে, এরপর নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কার ও নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা নিয়ে আলাপটাই ধাপে ধাপে করতে হবে। জাফর উল্লাহ চৌধুরী বলেন, সাম্প্রতিককালে বিচারপতির বিভিন্ন কার্যাকলাপে তাঁদের প্রতি পুরোপুরি শ্রদ্ধা রাখা কষ্টকর হয়ে দাঁড়াচ্ছে, তাই অনুসন্ধান কমিটি বিচারপতিদের একতরফা যাতে না হয়। আর নাম অনুসন্ধান করার ক্ষেত্রে জনগণের হাতে ছেড়ে দিতে হবে, সাধারণ জনগণই নাম প্রস্তাব করুক।

বিচারপতি এম এ মতিন বলেন, অনুসন্ধান কমিটিতে বিচারপতিদের না আনাই ভালো মনে হয়। কারণ কমিটি নিয়োগ দেওয়ার পর কমিশন ভালো না হলে বিচারপতিদের নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হতে পারে। তাঁদেরকে এই বিতর্কের ঊর্দ্ধে রাখাই উত্তম।

অনুষ্ঠানে সুজন-এর পক্ষ থেকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন ২০২১ নামে একটি আইনের খসড়া উপস্থাপণ করা হয়। খসড়ায় নির্বাচন কমিশনে নিয়োগের লক্ষ্যে প্রাক্তন একজন জেষ্ঠ্যতম প্রধান বিচারপতিকে আহ্বায়ক করে ছয় সদস্যের একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠনের কথা বলা হয়েছে। খসড়ায় আরও বলা হয়েছে, কমিশনে নিয়োগ দেওয়ার জন্য ধারা ৪ এর অধীন যোগ্যতা ও গুণাবলীসম্পন্ন ব্যক্তিদের সমন্বয়ে প্যানেল তৈরির লক্ষ্যে ধারা ৪ এর অধীন যোগ্যতা ও গুণাবলীসম্পন্ন ব্যক্তিদের অনুসন্ধান করবে। একইসঙ্গে কমিশনে নিয়োগ দেওয়ার লক্ষ্যে নাগরিকদের নিকট হইতে নাম আহ্বান করবে।

প্রাপ্ত নামগুলো থেকে কমিটি যাচাই বাছাই করে ন্যূনতম ৫ জন নারীসহ ২০ জনের একটি প্রাথমিক তালিকা ও তাঁদের যোগ্যতা সম্পর্কে একটি প্রতিবেদন গণবিজ্ঞপ্তি আকারে প্রকাশ করার কথা খসড়ায় বলা হয়। এরপর প্রাথমিক তালিকায় থাকা ব্যক্তিদের সম্পর্কে অনুসন্ধান কমিটি গণশুনানির আয়োজন ও তাঁদের সাক্ষাতকার নিয়ে সর্বসম্মতভাবে ন্যূনতম ২ জন নারীসহ ৭ জনের একটি প্যানেল তৈরি করে রাষ্ট্রপতিকে জমা দেয়ার কথা উল্লেখ করা হয়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App