×

সম্পাদকীয়

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অপরাধ প্রবণতা : প্রত্যাবর্তনের মধ্যেই রয়েছে সংকটের সমাধান

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০২ অক্টোবর ২০২১, ১২:৪৬ এএম

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অপরাধ প্রবণতা : প্রত্যাবর্তনের মধ্যেই রয়েছে সংকটের সমাধান

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অপরাধ প্রবণতা দিন দিন বাড়ছেই। আমরা শুরু থেকেই এ বিষয়ে শঙ্কার কথা জানিয়ে আসছি। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন না হলে স্বাভাবিকভাবেই সন্ত্রাসবাদের উত্থান হবে। খুন, ধর্ষণ, মাদক পাচার, শিশু পাচার, ডাকাতি, অপহরণ, পতিতাবৃত্তিসহ সব ভয়ংকর অপরাধের আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে রোহিঙ্গারা। সর্বশেষ রোহিঙ্গাদের শীর্ষ নেতা মুহিবুল্লাহকে হত্যার ঘটনায় আবারো আলোচনায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সশস্ত্র গ্রুপগুলো। গতকাল ভোরের কাগজে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে উঠে এসেছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে সক্রিয় ১০-১৫টি সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপের খবর। ঘনবসতিপূর্ণ ক্যাম্পের মধ্যে মুহিবুল্লাহকে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যাওয়ায় প্রশ্ন উঠেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা নিয়েও। পুলিশের পক্ষ থেকে ঘটনাটিকে বিচ্ছিন্ন বলা হলেও সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনবিরোধী কোনো সন্ত্রাসী গ্রুপ এ ঘটনা ঘটিয়েছে। সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোকে প্রতিহত করতে গিয়ে প্রায়ই ঘটছে বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা। এখন পর্যন্ত ৩০টির মতো বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটেছে বলেও র‌্যাব ও পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। এর মধ্যে ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর থেকে চলতি বছরের এপ্রিল মাস পর্যন্ত র‌্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে ১৮ জন রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী ও মাদক কারবারি। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে রোহিঙ্গা ক্যাম্প অপরাধ জগতে পরিণত হয়েছে। এটা আমাদের জন্য উদ্বেগের খবর। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সংঘাত-সংঘর্ষের ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটেই চলেছে। বিশেষ করে মাদক, অস্ত্র ও স্বর্ণ ব্যবসা নিয়ে অভ্যন্তরীণ বিরোধ চরম আকার ধারণ করেছে। প্রতি রাতে ক্যাম্পগুলোতে শোনা যায় গুলির শব্দ। জানা গেছে, রোহিঙ্গা ক্যাম্পভিত্তিক একাধিক সন্ত্রাসীগোষ্ঠীর হাতে হাতে পৌঁছে গেছে অস্ত্র। অস্ত্রের ব্যবহারের মাধ্যমে তারা ক্যাম্পের ভেতরে-বাইরে ডাকাতি, অপহরণ, খুন, ধর্ষণসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধ সংঘটিত করছে। রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের অস্ত্র সরবরাহ করতে এ দেশের অস্ত্র কারবারিদের সম্পৃক্ততায় পাহাড়ের গহিন অরণ্যে স্থাপন করা হয়েছে অস্ত্র তৈরির কারখানা। জাতিগত নির্মূল অভিযানের ফলে ২০১৯ সালের আগস্ট থেকে মিয়ানমারের ৭ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। এর আগেও এখানে অবস্থান করছিল ৩ লাখের বেশি রোহিঙ্গা। অবৈধ অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের কারণে আমাদের সীমান্তবর্তী জেলাগুলোয় আর্থ-সামাজিক ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি ঘটছে। অনেক রোহিঙ্গা বাংলাদেশি পাসপোর্ট ব্যবহার করে বিদেশ গিয়ে নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছে এবং এর দায়ভার বর্তাচ্ছে বাংলাদেশের ওপর। এত বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গাকে নিয়মশৃঙ্খলার মধ্যে রাখা কঠিন কাজ বটে। শুধু ক্যাম্পের অভ্যন্তরে নয়, ক্যাম্পের বাইরেও রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা স্থানীয় গ্রামবাসীদের সঙ্গেও বিভিন্ন সময় সংঘর্ষে লেগে যায়। স্থানীয় অনেকে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীর হাতে অপহরণ ও হত্যার শিকার হয়েছে। নানাভাবে তারা অপরাধ প্রবণতায় জড়িত। এরা আক্রোশী মনোভাবের। সব বিবেচনা করেই প্রশাসনকে অত্যন্ত কঠোর হতে হবে। অন্যথায় আরো অপরাধ বাড়তে পারে। যা আমাদের নিরাপত্তার জন্য হুমকি বটে। আশা করছি, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সব ধরনের অপরাধ দমনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের দক্ষতার পরিচয় দেবে। পাশাপাশি বাড়াতে হবে গোয়েন্দা নজরদারি। স্থায়ীভাবে পুলিশ ক্যাম্প বসাও এখন সময়ের দাবি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App