×

জাতীয়

ভুঁইফোঁড় রুখতে অ্যাকশন : তথ্য সংগ্রহে গোয়েন্দারা, পৃষ্ঠপোষকদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০২ অক্টোবর ২০২১, ০৮:৩৫ এএম

নামের আগে ‘আওয়ামী’ এবং পরে ‘লীগ’- রাজধানীতেই এরকম সংগঠনের সংখ্যা রয়েছে প্রায় তিন শতাধিক। বঙ্গবন্ধু, বঙ্গমাতা, জাতির পিতা, জননেত্রী, শেখ রাসেল নামজুড়ে সংগঠনের সংখ্যা আরো প্রায় দুই শতাধিক। কেন্দ্রীয় নেতাদের পেছন পেছন ঘোরা, সেলফিবাজি, দিবসকেন্দ্রিক ব্যানার-ফেস্টুন আর মাঝে মধ্যে কেন্দ্রীয় নেতাদের অতিথি করে আলোচনা সভার আয়োজন করাই এদের মূল কাজ। মূলত, চাঁদাবাজি-ধান্দাবাজি-তদ্বির বাণিজ্যসহ নানা রকম ফন্দি-ফিকির করতেই এসব রাজনৈতিক দোকানগুলোর যাত্রা শুরু।

গত এক যুগে দলের নাম ভাঙিয়ে গড়ে ওঠা ভুঁইফোঁড় সংগঠনগুলোর বিব্রতকর কর্মকাণ্ডে ক্ষুব্ধ কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ। ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা এসব সংগঠনের লাগাম টেনে ধরতে অ্যাকশনে যাচ্ছে দলটি। ভুঁইফোঁড়দের তথ্য সংগ্রহ করতে গোয়েন্দাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে এসব ‘রাজনৈতিক দোকানের’ অতিথি হতে কেন্দ্রীয় নেতাদের নিষেধ করা হয়েছে। ভুঁইফোঁড়দের পৃষ্ঠপোষক নেতাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।

সম্প্রতি (৯ সেপ্টেম্বর) আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে এ ব্যাপারে কঠোর দিকনির্দেশনা দিয়েছেন দলীয়প্রধান শেখ হাসিনা। এর পরপরই বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ‘মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম লীগ’ নামে ভুঁইফোঁড় সংগঠনের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠান বন্ধ করে দেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগের নাম জড়িয়ে গড়ে ওঠা ভুঁইফোঁড় সংগঠনগুলোতে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের অতিথি হয়ে না যাওয়ার নির্দেশনাও দেন তিনি।

আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রের ২৫ (২) ধারা অনুযায়ী, দলটির আটটি সহযোগী ও দুটি ভ্রাতপ্রতিম সংগঠন রয়েছে। সহযোগী সংগঠনগুলো হলো- যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, মহিলা লীগ, যুব মহিলা লীগ, কৃষক লীগ, তাঁতী লীগ, মৎস্যজীবী লীগ ও আওয়ামী লীগ আইনজীবী পরিষদ। আর ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন দুটি হলো- ছাত্রলীগ ও শ্রমিক লীগ। গঠনতন্ত্রে না থাকলেও চিকিৎসকদের পেশাজীবী সংগঠন স্বাধীনতা চিকিৎসা পরিষদ, বঙ্গবন্ধু পরিষদ, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, শেখ রাসেল শিশু-কিশোর, বঙ্গবন্ধু শিশু-কিশোর মেলার মতো সংগঠনের কর্মকাণ্ডে রাজনৈতিক স্বীকৃতি রয়েছে আওয়ামী লীগের। অন্যদিকে বঙ্গবন্ধু ও লীগ শব্দ যুক্ত বৈধ সংগঠন মাত্র ১৭টি। বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্ট এই ১৭টি সংগঠনকে অনুমোদন দিয়েছে। অবশ্য ট্রাস্ট অনুমোদিত ১৭টি সংগঠনের মধ্যে ১২টিই অঞ্চলভিত্তিক এবং একটি বিদেশে।

এগুলো হলো- বঙ্গবন্ধু প্রকৌশল পরিষদ (সেগুনবাগিচা), বঙ্গবন্ধু প্রকৌশল পরিষদ (ধানমন্ডি), মুজিব সেনা পরিষদ (বনানী), বঙ্গবন্ধু একাডেমি, বঙ্গবন্ধু যুব পরিষদ (ধানমন্ডি), বঙ্গবন্ধু শিশু কল্যাণ কেন্দ্র, বঙ্গবন্ধু শিশু কিশোর মেলা, বঙ্গবন্ধু সমাজ কল্যাণ পরিষদ (ঝিগাতলা), বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন (আমেরিকা), বঙ্গবন্ধু শিশু একাডেমি (খিলগাঁও), শেখ রাসেল মেমোরিয়াল সমাজ কল্যাণ সংস্থা (রামপুরা), বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন (পল্টন), বাংলাদেশ মহিলা ক্রীড়া সংস্থা, শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র (রায়েরবাগ), শেখ রাসেল স্মৃতি পাঠাগার (পিরোজপুর), বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা মঞ্চ (ফরিদপুর) ও শহীদ শেখ রাসেল স্মৃতি সমাজ কল্যাণ পাঠাগার (বরগুনা)।

এর বাইরে নামের আগে-পরে ‘আওয়ামী’, ‘লীগ’ ও ‘বঙ্গবন্ধু’ যুক্ত করে ২০০৯ সালের পর যেসব সংগঠন গড়ে উঠেছে, এর প্রায় সবই ভুঁইফোঁড় বলে মনে করছে ক্ষমতাসীনরা। এসব সংগঠনের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে সরকার। জানতে চাইলে দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম ভোরের কাগজকে বলেন, এরা সবাই নেতা! ধান্দাবাজি, চাঁদাবাজিই এদের প্রধান কাজ। ভুঁইফোঁড় কয়েকশ সংগঠন রয়েছে। সবই অবৈধ। এদের বিরুদ্ধে গোয়েন্দা সংস্থা অভিযানে নেমেছে। এদের কোনো অস্তিত্ব থাকবে না আর।

আওয়ামী লীগ নেতারা জানিয়েছেন, প্রথমে এসব ভুঁইফোঁড় সংগঠনের উদ্যোক্তাদের কর্মকাণ্ড ও সম্পদের খোঁজ নেয়া হবে। সরকার বা আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের মধ্যে কারা এসব সংগঠনের পেছনে পৃষ্ঠপোষকতা করছেন, সেটাও খোঁজা হবে। পৃষ্ঠপোষকদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ ব্যাপারে দলের সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক ভোরের কাগজকে বলেন, কেন্দ্রীয় কমিটির অনুমোদন নেই, এমন সংগঠনের কোনো অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় নেতাদের যাওয়া নিষেধ করা হয়েছে। যারা এসব অবৈধ সংগঠনকে পৃষ্ঠপোষকতা করবেন, তাদের শাস্তির ব্যবস্থাও করা হবে।

একাধিক নেতা জানিয়েছেন, কঠোর ব্যবস্থা না নেয়ার কারণে দলে রিজেন্টের সাহেদ, জেকোজির সাবরিনা কিংবা ব্যবসায়ী হেলেনা জাহাঙ্গীরদের দৌরাত্ম্য বেড়েছে। এতে দলের সুনাম বিনষ্ট হয়েছে। মাশুল গুনতে হয়েছে সরকারকে। আখের গোছাতে অনুপ্রবেশকারীদের দাপটে ম্লান হচ্ছে সরকারের অর্জন। এ ব্যাপারে দলের সাংগঠনিক সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন শফিক ভোরের কাগজকে বলেন, ভুঁইফোঁড়দের কর্মকাণ্ডে বিব্রত হচ্ছে দল।

আমরা বিশ্বাস করি, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম ছাড়া অমুক লীগ, তমুক লীগের দরকার আমাদের নেই। এদের আচরণে সরকার বিব্রত। এদের আর বাড়তে দেয়া হবে না। দলীয়প্রধান এ ব্যাপারে কঠোর দিকনির্দেশনা দিয়েছেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App