×

চিত্র বিচিত্র

বারবার ভেসে আসে জুতা পরা কাটা পা, রহস্য কী?

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০১ অক্টোবর ২০২১, ০৬:৩৪ পিএম

বারবার ভেসে আসে জুতা পরা কাটা পা, রহস্য কী?

পানি ঢুকতে পারে না বলে বুটের ভিতরে সেই অংশটুকুতে সহজে পচন ধরে না। সংগৃহীত ছবি

১৮৮৭ সালে এক নারী কলম্বিয়ার ভ্যাঙ্কুভারের সমুদ্রসৈকতে হেঁটে বেড়ানোর সময় ঝোপের মধ্যে মানুষের কাটা পা দেখতে পান। বুটের ভেতর কেউ যেন যত্ন করে সাজিয়ে রেখেছিল ওই খণ্ডিত পা। এরপর থেকেই ওই জায়গার নাম হয়ে যায় লেগ ইন বুট স্কয়ার। সেই ঘটনায় তাৎক্ষণিক চাঞ্চল্য তৈরি হলেও সেভাবে মানুষের মনে প্রভাব ফেলেনি।

১৯১৪ সালেও একই ঘটনা ঘটে। সমুদ্রসৈকত থেকে আবার বুটের ভেতর থেকে মানুষের খণ্ডিত পা উদ্ধার হয়। এভাবে একের পর এক জুতাসহ মানুষের পা উদ্ধার হয় ব্রিটিশ কলম্বিয়ার সমুদ্রসৈকত থেকে। পর পর একইভাবে এতগুলি মানুষের পা উদ্ধার স্বাভাবিকভাবেই আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।

২০১৮ সালে পশ্চিম ভ্যাঙ্কুভারের সমুদ্রসৈকতে নাইকির জুতোর মধ্যে ভেসে এসেছিল পা। নীল রঙের মোজাও পরা ছিল। এটি কোন ব্যক্তির পা ছিল তার সন্ধান পাওয়া যায়নি। পরীক্ষার পর শুধু জানা গিয়েছিল, পায়ের মালিকের ৫০ বছর বয়স ছিল।

২০০৭ সালে আবারও ওয়াশিংটন থেকে ওই সমুদ্রসৈকতে ঘুরতে আসা একজন কিশোরী একটি অ্যাডিডাসের জুতো পড়ে থাকতে দেখেন। সেটি হাতে নিয়েই আঁতকে ওঠেন তিনি। ভিতরে তখনও রয়ে গিয়েছে মানুষের পা। ওই পা কার তাও জানা যায়নি। কিন্তু ২০০৩ সালে অ্যাডিডাস সংস্থা ভারতে ওই জুতা প্রস্তুত করত এবং ভারতেই এই জুতা পাওয়া যেত। তাই ওই ব্যক্তিকে ভারতীয় বলেই অনুমান করা হয়েছিল।

তেমনই আবার জানা যায়, ২০০৮ সালে নাইকির জুতোর মধ্যে উদ্ধার হওয়া পা ২১ বছরের এক কিশোরের ছিল। যিনি আত্মহত্যা করেছিলেন। তবে বেশির ভাগেরই খোঁজ মেলেনি।

বছরের পর বছর ধরে রহস্যজনকভাবে সমুদ্রসৈকতে জুতার মধ্যে মানুষের পা ভেসে আসায় আতঙ্ক তৈরি হয় মানুষের মনে। ওই সৈকতে ঘুরতে আসা পর্যটকেরা ঝিনুক কিংবা নানা রকম সামুদ্রিক প্রাণীর খোঁজ করতেন না, তাঁদের সমস্ত ইন্দ্রিয় বরং সজাগ থাকত ভেসে আসা জুতা খুঁজে পেতে।

বহু দিন ধরেই এই রহস্যের কোনও উত্তর খুঁজে পাওয়া যায়নি। প্রথম প্রথম তদন্তকারীদের অনুমান ছিল, এটা কোনও ধারাবাহিক খুনির কাজ। খুন করে পা কেটে এ ভাবেই হয়তো দেহাংশ সমুদ্রে ভাসিয়ে দিত। স্রোতের সঙ্গে ভেসে যা পৌঁছে যেত ব্রিটিশ কলম্বিয়ার সমুদ্রসৈকতে।

পরবর্তীকালে বহু তদন্তের পর তদন্তকারীরা জানান, বিভিন্ন সময়ে সমুদ্রে ঘটা দুর্ঘটনা কিংবা আত্মহত্যার কারণে মৃতদেহগুলি সমুদ্রেই পড়ে থাকে। সমুদ্রের নোনা জলে সেগুলিতে পচন ধরে যায়। কিন্তু পায়ের যে অংশ বুটের ভিতর ঢাকা থাকে সেগুলিতে নোনা জল সহজে ঢুকতে পারে না।

পানি ঢুকতে পারে না বলে বুটের ভিতরে সেই অংশটুকুতে সহজে পচন ধরে না। তার উপর বুট পানিতে ভেসে থাকায় ভিতরে জল ঢোকার সম্ভাবনা কমে যায়। সে কারণেই হয়তো শুধুমাত্র বুটের মধ্যে সযত্নে রয়ে যাওয়া পায়ের অংশ ভেসে চলে আসে সমুদ্রসৈকতে। দেহের অন্য কোনও অংশ কখনও এভাবে উদ্ধার হয়নি।

এর পরেও একটি প্রশ্ন রয়ে যায়। কেন ব্রিটিশ কলম্বিয়াতেই বার বার ভেসে আসে এগুলি? যার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে ইনস্টিটিউট অব ওসিয়ান সায়েন্সেসের সমুদ্রবিদ রিচার্ড থম্পসন জানিয়েছেন, এটা সম্পূর্ণভাবেই সমুদ্র স্রোতের কারণে হয়ে থাকে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App