×

জাতীয়

দেশে এক-চতুর্থাংশ প্রবীণ অপুষ্টিতে ভুগছেন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০১ অক্টোবর ২০২১, ১০:১৫ এএম

দেশে এক-চতুর্থাংশ প্রবীণ অপুষ্টিতে ভুগছেন

ছবি: সংগৃহীত

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক হেলথ ও ইনফরমেটিকস বিভাগের এক গবেষণায় বলা হয়, দেশের এক-চতুর্থাংশ প্রবীণ অপুষ্টিতে ভুগছেন এবং এর অর্ধেকেরও বেশি রয়েছেন পুষ্টিহীনতায়। তবে পুরুষের তুলনায় নারীদের অপুষ্টির হার বেশি। বিষণ্নতা, নানা ধরনের অসংক্রামক রোগ, খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তনসহ আরো কিছু কারণে প্রবীণদের মধ্যে এই পুষ্টিহীনতার মাত্রা বেশি।

বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠানটি জরিপের ফল প্রকাশ করে। জরিপে জানানো হয়, যে করোনা মহামারির প্রভাবে প্রবীণদের অবস্থা আরো খারাপ ও ঝুঁকিপূর্ণ হয়েছে। করোনায় সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে প্রবীণদের। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের করোনাসংক্রান্ত তথ্যে এই বক্তব্যের প্রমাণ মেলে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে, দেশে এ পর্যন্ত মোট মৃত্যুর ৫৬ শতাংশের বয়সই ৬০ বছরের ওপরে।

দেশে ষাটোর্ধ্বদের স্বাস্থ্যগত এমন পরিস্থিতির মধ্যেই আজ শুক্রবার পালিত হচ্ছে বিশ্ব প্রবীণ দিবস। প্রবীণ দিবস সামনে রেখে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিকস বিভাগের আয়োজনে গতকাল এক অনুষ্ঠানে 'বাংলাদেশে প্রবীণদের অপুষ্টির কারণসমূহ', 'বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলের প্রবীণদের বাতব্যথার ব্যাপকতা' এবং নিরাময় অযোগ্য রোগীদের জন্য হোম বেসড প্যালিয়েটিভ কেয়ার : বাংলাদেশে সম্ভাবনা' এই তিনটি গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ।

অনুষ্ঠানে প্রধান গবেষক ডা. কে এম তৌহিদুর রহমান ও তত্ত্বাবধায়ক গবেষক ডা. মো. খালেকুজ্জামান বাংলাদেশে প্রবীণদের অপুষ্টির কারণগুলো তুলে ধরে জানান, সারা বিশ্বেই অন্যদের তুলনায় প্রবীণদের মধ্যে অপুষ্টি বা পুষ্টিহীনতার ঝুঁকি বেশি। বাংলাদেশের এক-চতুর্থাংশ প্রবীণ অপুষ্টিতে ভুগছেন এবং অর্ধেকেরও বেশি পুষ্টিহীনতার ঝুঁকিতে রয়েছেন। পুরুষের (২২ শতাংশ) তুলনায় নারীদের (২৮.৮ শতাংশ) মধ্যে অপুষ্টির হার বেশি। জীবনসঙ্গীবিহীন (বিধবা, বিপত্নীক, অবিবাহিত) প্রবীণদের মাঝে অপুষ্টির হার ২৮.৬ শতাংশ ও পুষ্টিহীনতার ঝুঁকির হার ৬৫.৩ শতাংশ। প্রবীণদের অপুষ্টির জন্য চিহ্নিত প্রধান কারণগুলো হচ্ছে বিষণ্নতা, মুখ ও দাঁতের খারাপ স্বাস্থ্য, সুষম খাদ্য পরিহারের অভ্যাস এবং অসংক্রামক রোগের উপস্থিতি।

অন্যদিকে আরেক গবেষক ডা. মঈনুল হাসান সম্পাদিত বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলের প্রবীণদের বাতব্যথার ব্যাপকতা সম্পর্কে বলা হয়, প্রবীণদের জন্য বাতব্যথা একটি অন্যতম স্বাস্থ্য সমস্যা। কিন্তু বাংলাদেশের প্রবীণদের বেলায় এর ব্যাপকতা বিষয় তথ্যের ঘাটতি রয়েছে। ৫২ শতাংশ প্রবীণ বাতব্যথায় ভুগছেন, যাঁদের অর্ধেকেরও বেশি মাঝারি মাত্রায় শারীরিকভাবে অক্ষম, পুরুষদের (৪৩.৪ শতাংশ) তুলনায় নারীদের (৫৬.৬ শতাংশ) মধ্যে সমস্যাটি বেশি পাওয়া গেছে। বাতব্যথায় ভোগা প্রবীণদের মধ্যে কোমর ব্যথা (৪৩.৪ শতাংশ) এবং হাঁটুতে ব্যথার (৩৭.৪ শতাংশ) সমস্যা বেশি দেখা গেছে। বাতব্যথায় ভোগা প্রবীণদের মধ্যে রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস এবং ফ্রোজেন শোল্ডারে ভোগার হার যথাক্রমে ৪ শতাংশ ও ৪.৫ শতাংশ।

সহযোগী অধ্যাপক ডা. ফারিয়া হাসিনের নেতৃত্বে গবেষকদলের পরিচালিত 'নিরাময় অযোগ্য রোগীদের জন্য হোম বেসড প্যালিয়েটিভ কেয়ার : বাংলাদেশে সম্ভাবনা' শীর্ষক গবেষণায় বলা হয়, জীবন সীমিত ও নিরাময় অযোগ্য রোগে আক্রান্ত রোগী এবং তাঁর পরিবারের শারীরিক, মানসিক, সামাজিক এবং আত্মিক সেবা দেওয়া একটি সার্বিক প্রচেষ্টা 'প্যালিয়েটিভ কেয়ার' বা প্রশমন সেবা। বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ছয় লাখ নিরাময় অযোগ্য বা দীর্ঘমেয়াদি নানা রোগে আক্রান্ত রোগীর প্যালিয়েটিভ কেয়ার প্রয়োজন। ২০০৭ সাল থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যালিয়েটিভ মেডিসিন বিভাগ, হোমকেয়ার এবং কমিউনিটিভিত্তিক তিন ধরনের প্যালিয়েটিভ সেবা দিয়ে আসছে।

এছাড়া বিষণ্নতায় ভোগা প্রায় ৪০ শতাংশ প্রবীণ অপুষ্টিতে ভুগছেন। স্বাভাবিকের তুলনায় বিষণ্নতায় ভোগা প্রবীণদের অপুষ্টিতে ভোগার সম্ভাবনা ১৫.৬ গুণ বেশি। যেসব প্রবীণের মুখ ও দাঁতের স্বাস্থ্য খারাপ, তাঁদের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ অপুষ্টিতে ভুগছেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App