×

মুক্তচিন্তা

সেরা শিক্ষার্থীরাই বলুক- ‘আমি শিক্ষক হতে চাই’

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০১:০২ এএম

সেরা শিক্ষার্থীরাই বলুক- ‘আমি শিক্ষক হতে চাই’

শিক্ষক দিবসে পৃথিবীর সব শিক্ষককে বুকভরা শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও শুভেচ্ছার মাধ্যমে স্মরণ করা হয়। শিক্ষকতা পেশা পৃথিবীর মহান পেশা। তবে শুনতে খারাপ লাগলেও এটা ঠিক যে, শিক্ষকরাও মানমর্যাদার দিক দিয়ে অবহেলিত! কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কোনো ক্লাসে যদি জিজ্ঞেস করা হয়, কে কে শিক্ষকতা পেশায় আসতে চান? এটা নিশ্চিত, ১০০ শিক্ষার্থীর মধ্যে ৪-৫ জনের বেশি এ পেশায় আসার আগ্রহের কথা বলবেন না! আর যদি নির্দিষ্টভাবে প্রশ্ন করা হয়, কে কে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হতে চান? তাহলে একজনও আগ্রহ দেখাবে কিনা সন্দেহ! দেশসেরা শিক্ষার্থীরা এখন আর বলেন না- ‘আমি শিক্ষক হতে চাই’! বাস্তবতা হলো, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকতার চাকরিটাকে এখনো মেধাবী চাকরিপ্রত্যাশীদের ন্যূনতম আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করা যায়নি। কিন্তু আদিকাল থেকেই দেশ-বিদেশে শিক্ষকতা মহান ও আদর্শ পেশা হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। পৃথিবীর উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের যেভাবে সম্মানের চোখে দেখা হয় আর মানমর্যাদা দেয়া হয়, আমাদের দেশে তার অর্ধেকও মূল্য দেয়া হয় না! প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা দিনের পর দিন অবহেলিত হয়ে আসছেন। এ পেশায় বেতন-ভাতা ও সুযোগ-সুবিধার ব্যাপক সংকট রয়েছে। পুরো চাকরিকালে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের স্বাভাবিকভাবে পদোন্নতির কোনো সুযোগ নেই বললেই চলে! আরো উল্লেখ্য, স্বাভাবিকভাবে পুরো শিক্ষকতা জীবনে সহকারী শিক্ষকদের পদোন্নতির ব্যবস্থা নেই। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে সহকারীদের বর্তমান বেতন গ্রেডের পার্থক্য রয়েছে। শিক্ষাজীবনের ভিত্তি হলো প্রাথমিক শিক্ষা। আর এই ভিত্তি যদি মজবুত না হয় তাহলে শিশুর জীবনে দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। এমনকি শিক্ষাজীবনও থেমে যেতে পারে! ২০২৩ সাল থেকে নতুন শিক্ষাক্রম তথা মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করার জন্য দরকার মানসম্মত ও যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষক। এখন প্রাথমিক শিক্ষায় শিক্ষক হিসেবে মেধাবীরা আসতে শুরু করেছে। মেধাবীদের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকতা পেশায় টানতে প্রধান ও সহকারী শিক্ষকের মধ্যে কোনো প্রকার বেতনবৈষম্য রাখা উচিত নয়। প্রায় ২ কোটির বেশি শিশু শিক্ষার্থী ও তাদের পরিবারের স্বপ্নের জায়গা হলো এদেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়। মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে হলে এ পেশায় দেশের সর্বোচ্চ মেধাবীদের নিয়োগ দিতে হবে। শিশুদের মানুষের মতো মানুষ করা সবচেয়ে কঠিন কাজগুলোর একটি। ধারণা করা হয়, গরিব ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত ঘরের সন্তানরাই প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়তে আসে। তাই শিক্ষার ভিত্তি যদি মজবুত হয় তাহলে উপযুক্ত শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে উঠবে দেশের কোমলমতি সন্তানরা। আর এজন্য শিক্ষক নিয়োগের বিধিমালাও সংশোধন করা জরুরি। কলেজ-মাধ্যমিক-প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকতা পেশায় একই যোগ্যতা, মাপকাঠি অনুসরণ করে প্রথম শ্রেণির মর্যাদা দিয়ে শিক্ষক নিয়োগ দেয়ার পরিকল্পনা করতে হবে। এভাবে একইসঙ্গে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা নিয়ে তারপর তাদের একই মানমর্যাদা ও সুযোগ-সুবিধা দিয়ে প্রাথমিক, মাধ্যমিক বা কলেজগুলোতে শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত করতে হবে। সহজ কথায়, একই মাপকাঠি ও যোগ্যতা মেনে সবাই শিক্ষকতা পেশাই আসবেন। তবে বর্তমান বাস্তবতায় শিক্ষকদের যোগ্যতাভিত্তিক স্কেল দেয়ার কথাও বিবেচনা করা যেতে পারে। শিক্ষকরা তাদের যোগ্যতা তথা ডিগ্রি অনুসারে বেতন পাবেন। ডিগ্রি উচ্চতর হলে বেতনও বেশি হবে। শিক্ষকতা পেশাকে সেরা পেশা বললেও অত্যুক্তি হবে না। শিক্ষা সর্বজনীন। আর শিশুর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষা। সবচেয়ে দুঃখের বাস্তবতা হলো, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা এদেশের তৃতীয় শ্রেণির চাকরিজীবী! শিক্ষকরা কেন তৃতীয় শ্রেণির নাগরিক হবে? অথচ সরকার সেবাটা চায় প্রথম শ্রেণির! তিলে তিলে যারা সন্তানের মতো ছোট ছোট শিশুকে মানুষ গড়ার মহৎ কাজটি করে যান, তারা দিন শেষে যদি প্রাপ্য মর্যাদা না পান তাহলে আর দুঃখের অন্ত থাকে না। শিক্ষকদের স্বতন্ত্র বেতন স্কেলের কথাও বিবেচনা করতে হবে। কেননা সবথেকে শিক্ষকতা পেশা সম্পূর্ণ ভিন্ন। সর্বশেষ পে-স্কেলের সুপারিশেও শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র পে-স্কেলের কথা ছিল। দেশের সর্বোচ্চ মেধাবীদের শিক্ষকতা পেশায় আনতে এ পেশায় সব ধরনের বৈষম্য দূর করে মানমর্যাদা বৃদ্ধি করতে হবে। অচিরেই প্রাথমিকের শিক্ষকতা পেশায় বেতনবৈষম্য দূর করা হোক। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের স্বার্থে চাকরির ক্ষেত্রে মেধাবীদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হোক শিক্ষকতা। মেধাবীরা অনায়াসে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা পেশায় আসলে এক একটি বিদ্যালয় হয়ে উঠবে স্বপ্ন তৈরির কারখানা, প্রতিটি শিশুর শিক্ষার ভিত্তি হবে মজবুত ও যুগোপযোগী।

সাধন সরকার : ৫/এ নারিন্দা লেন, সূত্রাপুর, ঢাকা-১১০০। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App