×

মুক্তচিন্তা

সুন্দরবন ও উপকূল রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ হই

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০১:০৬ এএম

বিগত বছরগুলোয় সাক্ষী হয়ে থাকা আইলা, সিডর, আম্ফান, ইয়াশের ক্ষতবিক্ষত জায়গাগুলোয় দাঁড়িয়ে কিছুটা অনুধাবন করা যায় সুন্দরবন ছাড়া আমাদের আগামীর ভবিষ্যৎ কতটা ভয়ানক হবে। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য যে, এত বড় উদার মন নিয়ে সুন্দরবন যে আমাদের পাশে থেকে বেঁচে থাকতে সাহায্য করছে; কিন্তু তার প্রতি আমাদের সামান্যতম হলেও দায়িত্ববোধ নেই। নেই কোনো কৃতজ্ঞতাবোধ। জলবায়ু পরিবর্তন, ক্ষতিকর কর্মকাণ্ড, বন উজাড়, আমাদের অসচেতনতা, লোভী মানসিকতা ও বন বিভাগের দুর্নীতির কারণে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় উপকূলীয় বনাঞ্চল আমাদের সুন্দরবন আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের (টিআই) জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত বৈশ্বিক দুর্নীতি শীর্ষক প্রতিবেদনের এক তথ্য তুলে ধরে বলা হয়েছে, ‘সুন্দরবন থেকে বছরে ১৩৫ কোটি টাকার কাঠ পাচার হয়। কিছু ব্যবসায়ী, অসাধু বন কর্মকর্তা ও স্থানীয় প্রশাসনের যোগসাজশে নির্দ্বিধায় সুন্দরবনে অবৈধভাবে গাছ কাটা হয়ে থাকে। যার ফলে প্রতি বছরই একটু একটু করে কমে যাচ্ছে সুন্দরবনের গাছের পরিমাণ। হুমকির মুখে পড়ছে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বিরূপ প্রভাব সংক্রান্ত আন্তঃসরকারি প্যানেলে এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগামী কয়েক বছরের মধ্যে বাংলাদেশের সমগ্র দক্ষিণাঞ্চল মানুষের বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়বে। যা ইতোমধ্যে লক্ষণীয়। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় জেলা খুলনা, সাতক্ষীরার উপকূল এখন বসবাসের উপযুক্ত নেই। জোয়ার-ভাটার পানির সঙ্গে লড়াই করতে করতে তারা আজ ক্লান্ত। জোয়ারের পানি বাড়ার সঙ্গে ডুবে যায় তাদের আশ্রয়স্থল। অপেক্ষা করতে হয় ভাটায় পানি কখন নেমে যাবে। নিজেদের বসতভিটার সঙ্গে গৃহপালিত পশুর থাকা-খাওয়ায় সংকট উপলব্ধি করার মতো। এদিকে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ক্রমাগত বেড়ে লবণাক্ততার আগ্রাসনে জমির স্বাভাবিক উর্বরতা বিপন্ন হয়ে ফসলি জমিতে সম্ভব হচ্ছে না ফসল ফলানোর। নিজেদের দুমুঠো আহারের সঙ্গে দেখা দিয়েছে মারাত্মক সুপেয় পানির সংকট। সেই আইলা-সিডর থেকে আজ এক যুগেও সম্ভব হয়নি এই সুপেয় পানির সংকট কাটানোর। কিছু কিছু এলাকাভিত্তিক সুপেয় পানির সংকট সামান্য মিটলেও তার পরিমাণ খুবই কম। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় সাধারণ টিউবওয়েল থেকেও পাওয়া যাচ্ছে না পানি। দেশের উপকূলীয় এসব জেলা, উপজেলায় এখন স্বাভাবিক জোয়ারের পানিতেই বাঁধের ওপর দিয়ে পানি ছাপিয়ে প্লাবিত হচ্ছে বিস্তীর্ণ জনপদ। এর ওপর উপকূলীয় বাঁধ তথা বেড়িবাঁধ অধিকাংশ স্থানেই দুর্বল অথবা জরাজীর্ণ তো আছেই। বাঁধের ভাঙা অংশ দিয়ে জোয়ারের পানি সহজেই চলে গেছে লোকালয়ে, প্লাবিত করেছে জনবসতি, ফসলের মাঠ। মাটি ক্ষয়ের ফলে অধিকাংশ জায়গায় বাঁধের উচ্চতা কমে গেছে। সেখান থেকেও পানি ঢুকছে জনপদে। ফলে জনজীবনে বিরাজ করছে চরম উৎকণ্ঠা। ইতোমধ্যে এসব অঞ্চল থেকে উদ্বাস্তু হয়েছে হাজার হাজার পরিবার। কেউ জেলা শহরে উঠছে, কেউ রাজধানীতে পাড়ি জমাচ্ছে। পরিবার-পরিজন নিয়ে গ্রামাঞ্চলে খেটে-খাওয়া মানুষগুলো শহরে উঠে বেঁচে থাকতে রিকশা চালাচ্ছে কেউবা ফুটপাতে অনাহারে দিন কাটাচ্ছে। এর মধ্যে শত শত পরিবার অপেক্ষায় আছে ভিটেমাটিতে ফেরার। অপেক্ষায় আছে টেকসই বেড়িবাঁধের। এই বিপন্ন উপকূল রক্ষায় ইতোমধ্যে ‘সাতক্ষীরা জেলার পোল্ডার নং-১৫ (শ্যামনগর) পুনর্বাসন’ শীর্ষক একটি প্রকল্প একনেকে অনুমোদন হয়েছে। যেখানে উপকূলীয় এলাকায় পুরনো বাঁধ সংস্কারের পাশাপাশি টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণে এক হাজার ২৩ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। বলা হয়েছে চলতি বছরেই বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) প্রকল্পটির কাজ শুরু করবে। পাশাপাশি উপকূলীয় জেলা খুলনার কয়রা উপজেলায় একটি প্রকল্প অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে বলে জানা গেছে, যার পোল্ডার নং-১৪/১। এটিও দ্রুত একনেকে পাস হোক, এটা আশা রাখি। পাশাপাশি সুন্দরবনকে রক্ষায় আমাদের সবাইকে আরো বেশি সচেতন হতে হবে। সুন্দরবনের পাশে বসবাসরত জনগোষ্ঠীকে সরিয়ে অন্য জায়গায় স্থানান্তরিত করতে হবে, যাতে সুন্দরবনে এসব মানুষের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব না পড়ে। সেই সঙ্গে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্যকে রক্ষা করতেই হবে, কারণ এসব পশুপাখি বন্যপ্রাণীই সুন্দরবনকে টিকিয়ে রেখেছে। আমরা শতভাগ আশাবাদী উপকূলীয় এসব জনপদের মানুষকে বাঁচাতে, তাদের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটাতে ইতোমধ্যে যেসব প্রকল্প পাস হয়েছে এবং আগামীতে আসছে সেগুলো সুপরিকল্পিতভাবে এবং স্বচ্ছতার সঙ্গে বাস্তবায়ন হবে। পাশাপাশি সুন্দরবনকে টিকিয়ে রাখতে সরকার দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট সব পদক্ষেপ গ্রহণ করবে, এটাই কাম্য রইল।

রিয়াদ হোসেন : শিক্ষার্থী, সরকারি বিএল কলেজ, খুলনা। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App