×

খেলা

টাইগাররা বিশ্বকাপে ডার্ক হর্স

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৯:৩৬ পিএম

টাইগাররা বিশ্বকাপে ডার্ক হর্স

প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানকে সাজঘরে ফিরিয়ে টাইগার ফিল্ডারদের উল্লাস।

অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ২০১৫ সালে হওয়া ওয়ানডে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে খেলে বাংলাদেশ। এরপর ২০১৭ সালে ইংল্যান্ডের মাটিতে হওয়া চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিতে খেলে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। এ দুটি প্রতিযোগিতাই ছিল ৫০ ওভারের। সাম্প্রতিক সময়ে ওয়ানডে বা ৫০ ওভারের খেলায় বাংলাদেশ বেশ শক্তিশালী অবস্থানে পৌঁছেছে।

তবে ২০ ওভার অর্থাৎ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের চিত্রটা পুরোপুরি ভিন্ন। ২০০৭ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত হওয়া ছয়টি বিশ্বকাপের সবগুলোতে খেলেছে বাংলাদেশ। কিন্তু সাফল্য একেবারে শূন্য। বাংলাদেশ ছয়টি বিশ্বকাপে মোট ২৫টি ম্যাচ খেলেছে। এর মধ্যে জয় পেয়েছে পাঁচটি ম্যাচে। আবার এ পাঁচটি ম্যাচের মধ্যে চারটিই হলো বাছাইপর্বে। বাকি একটি ম্যাচ বিশ্বকাপের মূল পর্বে। মূল পর্বে একমাত্র জয়টি টাইগাররা পেয়েছিল ২০০৭ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে।

এ ম্যাচটি আবার বিশ্বকাপে বাংলাদেশের অভিষেক ম্যাচ। প্রথম ম্যাচেই চমক দেখিয়ে ভালো কিছুর স্বপ্ন দেখালেও পরবর্তীতে সেটি আর ধরে রাখতে পারেনি লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। এমনকি শেষ দুটি বিশ্বকাপের মূল পর্বেও সরাসরি খেলতে পারেনি বাংলাদেশ। বাছাইপর্বের বাধা টপকে তবেই তাদের খেলতে হয়েছে মূল পর্বে।

তবে এবার বাংলাদেশ বিশ্বকাপে ভালো কিছু করবে। এমনকি বাংলাদেশকে এবারের বিশ্বকাপের ডার্ক হর্স হিসেবেও অভিহিত করেছে ক্রিকেটের জনপ্রিয় ম্যাগাজিন উইজডেন। এছাড়া গত দুই বিশ্বকাপে বাছাইপর্বে খেলতে হলেও টি-টোয়েন্টি দলের বর্তমান অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ জানিয়েছেন এখন থেকেই তারা চেষ্টা করবেন বিশ্বকাপের মূল পর্বে সরাসরি খেলার জন্য।

টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের পারফরমেন্স ভালো। সর্বশেষ অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে পাঁচটি পাঁচটি করে দশটি ম্যাচ খেলেছেন সৌম্য-মুশফিরকরা। এর মধ্যে জয় তুলে নিয়েছেন সাতটি ম্যাচে। দুই দেশের বিপক্ষেই সিরিজ জিতেছে তারা। এর আগে জিম্বাবুয়ে সফরে টি-টোয়েন্টি সিরিজে ২-১ ব্যবধানে জিতেছে টাইগাররা।

সর্বশেষ ১৩ ম্যাচে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদবাহিনী জয় পেয়েছে ৯ ম্যাচে। আর এসব বিষয় বিবেচনা করেই উইজডেন বাংলাদেশকে ডার্ক হর্স হিসেবে অভিহিত করেছে। তারা বাংলাদেশকে ডার্ক হর্সের তকমা দেয়ার চারটি কারণ দেখিয়েছে।

প্রথম কারণ হিসেবে তারা উল্লেখ করেছে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স। অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টানা তিনটি সিরিজে জয় পেয়েছে টাইগাররা। আর বিশ্বকাপের আগে তিনটি সিরিজ জয়ই এখন বাংলাদেশকে অনেক এগিয়ে রাখবে।

দ্বিতীয় কারণ হিসেবে বাংলাদেশের স্পিন বোলিং অলরাউন্ডারদের উদাহরণ দিয়েছে তারা। সম্প্রতি স্পিন বোলিংয়ে কার্যকরী ভূমিকা রেখেছেন সাকিব আল হাসান-মেহেদি হাসানের মতো অলরাউন্ডাররা। শুধু বোলিংয়েই নয়, ব্যাট হাতেও তারা পারফরম্যান্স দেখিয়েছেন। তাই বিশ্বকাপে বাংলাদেশের অন্যতম আস্থার জায়গা এটি। সাকিব-মেহেদির পাশাপাশি নাসুম আহমেদ, আফিফ হোসেন ধ্রুবরাও আস্থার প্রতীক হয়ে উঠেছেন। তাই এটিকে শক্তির জায়গা হিসেবে দেখছে তারা।

তৃতীয় কারণ হিসেবে মোস্তাফিজুর রহমানের ফর্মে ফেরাকে উল্লেখ করেছে সংবাদমাধ্যমটি। ইনজুরি কাটিয়ে ফেরার পর নিজের ছন্দ ফিরে পেতে খানিকটা বেগ পেতে হলেও বর্তমানে রয়েছেন দারুণ ফর্মে। তার স্লোয়ার আর কাটারে দিশেহারা প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানরা। আইপিএলেও দারুণ বোলিং করছেন মোস্তাফিজ। ফলে মোস্তাফিজ হতে পারেন আরব আমিরাতে বাংলাদেশের অন্যতম অস্ত্র।

চতুর্থ ও সর্বশেষ কারণে হিসেবে মাহমুদউল্লাহর অধিনায়কত্বকে সামনে এনেছে তারা। যেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, চাপের মুখে দারুণভাবে নেতৃত্ব দিতে পারেন মাহমুদউল্লাহ। এছাড়া ক্রিকেটারদের উজ্জীবিত রাখতেও বেশ পারদর্শী তিনি।

এদিকে বিশ্বকাপের শেষ দুটি আসরে বাছাইপর্বের বাধা পার করে মূল পর্বে জায়গা করে নিতে হয়েছে বাংলাদেশকে। এবারো মূল পর্বে খেলার আগে বাংলাদেশকে নিচের সারির দলগুলোর বিপক্ষে খেলতে হচ্ছে। বাংলাদেশ ক্রিকেটের বড় দল হয়েও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে হচ্ছে বাছাইপর্বের বাধা পেরিয়ে। ব্যাপারটা ভাবাচ্ছে অধিনায়ককেও। ২০২২ অস্ট্রেলিয়া বিশ্বকাপে তাই মূল মঞ্চে সরাসরি খেলার প্রত্যাশা। এ  বিষয়ে অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ বলেন, ‘একজন ক্রিকেটার হিসেবে আমি চাই সরাসরি বিশ্বকাপে অংশ নিতে। ভবিষ্যতে বাছাইপর্ব খেলতে চাই না আমরা।’

বাংলাদেশ বর্তমানে টি-টোয়েন্টি র‌্যাঙ্কিংয়ের ষষ্ঠস্থানে আছে। সেরা আটে থাকতে পারলেই পরবর্তী বিশ্বকাপে সরাসরি খেলতে পারবে তারা। এজন্য ২০২২ সালে অস্ট্রেলিয়ায় হতে যাওয়া বিশ্বকাপের আগ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ধারাবাহিক থাকতে হবে বাংলাদেশকে।

এবারের বিশ্বকাপে বাংলাদেশ তাদের প্রথম ম্যাচ খেলবে ১৭ অক্টোবর। গ্রুপ ‘বি’তে পরেছে টাইগাররা। এই গ্রুপে তাদের প্রতিপক্ষ হলো স্কটল্যান্ড, ওমান ও পাপুয়া নিউ গিনি। আসরের উদ্বোধনী ম্যাচে টাইগারদের প্রতিপক্ষ স্কটল্যান্ড। এরপর ১৯ অক্টোবর ওমানের বিপক্ষে খেলবে দ্বিতীয় ম্যাচ। ২১ অক্টোবর পাপুয়া নিউ গিনির বিপক্ষে লড়বেন মুশফিক-মাহমুদউল্লাহরা। আর সবগুলো ম্যাচই হবে ওমানের মাটিতে।

বাছাইপর্বের এ তিনটি ম্যাচ খেলার আগে বাংলাদেশ দুটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলবে। ওমানে বাছাই খেললেও টাইগাররা প্রস্তুতি ম্যাচ খেলবে সংযুক্ত আরব আমিরাতে। প্রস্তুতি ম্যাচ বাংলাদেশ খেলবে যথাক্রমে শ্রীলঙ্কা ও আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে।

এর আগে বিশ্বকাপে অংশ নিতে আগামী ৩ অক্টোবর ওমানের উদ্দেশে দেশ ছাড়বেন রাসেল ডমিঙ্গোর শিষ্যরা। সেখানেই একদিন কোয়ারেন্টিনসহ তিনদিন অনুশীলন করবে বাংলাদেশ। এরপর মাহমুদউল্লাহ-মুশফিকরা আরব আমিরাতে যাবেন প্রস্তুতি ম্যাচ খেলতে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App