×

মুক্তচিন্তা

সাফল্যের মুকুটে আরো একটি নতুন পালক

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০১:৪৪ এএম

সাফল্যের মুকুটে আরো একটি নতুন পালক
টেকসই উন্নয়নে বাংলাদেশের অর্জনের জন্য ‘এসডিজি প্রোগ্রেস অ্যাওয়ার্ড’ পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নিউইয়র্কে টেকসই উন্নয়ন বিষয়ে নবম বার্ষিক আন্তর্জাতিক কনফারেন্সে এ পুরস্কার নেন প্রধানমন্ত্রী। জাতিসংঘের সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট সল্যুশন নেটওয়ার্ক (এসডিএসএন), গেøাবাল মাস্টার্স অব ডেভেলপমেন্ট প্র্যাকটিস এবং যুক্তরাষ্ট্রের কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থ ইনস্টিটিউট ও সেন্টার ফর সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট যৌথভাবে শেখ হাসিনাকে এ পুরস্কার দেয়। জাতিসংঘের সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট সল্যুশনস নেটওয়ার্ক দারিদ্র্য দূরীকরণ, পৃথিবীর সুরক্ষা ও সবার জন্য শান্তি-সমৃদ্ধি নিশ্চিত করতে বাংলাদেশকে সঠিক পথে এগিয়ে নেয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এসডিজি অগ্রগতি পুরস্কারে ভূষিত করা করেছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে এই অনন্য অর্জন মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। জাতিসংঘের মহাসচিবের অধীনে ২০১২ সালে এসডিএসএন প্রতিষ্ঠা করা হয়। টেকসই উন্নয়নের জন্য বাস্তবভিত্তিক সমাধানে বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত দক্ষতা বাড়াতে সহায়তা করে এসডিএসএন। এসডিএসএন জাতিসংঘের সংস্থাগুলো, বহুপাক্ষিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান, প্রাইভেটরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে। ২০১৫-২০২০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের অর্জনের জন্য এসডিএসএনসহ কয়েকটি সংস্থা প্রধানমন্ত্রীকে পুরস্কৃত করেছে। সংস্থাগুলো বাংলাদেশের অবস্থা বিশ্লেষণ করেছে এবং মূল্যায়ন করে দেখেছে- বাংলাদেশ বিস্ময়কর সাফল্য অর্জন করছে। এ পুরস্কার দেশের জনগণকে উৎসর্গ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। এ পুরস্কার এসডিজি অর্জনে আমাদের প্রচেষ্টার স্বীকৃতি। এসডিজির মূল বিষয় হচ্ছে কেউ পেছনে থাকবে না। আমরা আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখব, যাতে অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির যাত্রায় কেউ পেছনে না থাকে। সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট সল্যুশন নেটওয়ার্কের (এসডিএসএন) প্রেসিডেন্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক জেফরি ডি. স্যাক্স করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করে তাকে ‘জুয়েল ইন দ্য ক্রাউন অব দ্য ডে’ হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেন। ২০৩০ সাল নাগাদ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের জন্য একটি বৈশ্বিক রোডম্যাপের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘে পাঁচ দফা প্রস্তাবনা তুলে ধরেছেন। কোভিড-১৯ পরিস্থিতি থেকে স্থায়ীভাবে উত্তরণ নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেছেন, আমাদের এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পথে ফিরে যাওয়ার জন্য একটি সাহসী ও উচ্চাভিলাষী বৈশ্বিক রোডম্যাপ প্রণয়ন করা প্রয়োজন- যাতে কেউ পেছনে পড়ে না থাকে। এসডিজি অর্জনে একটি সাহসী ও উচ্চাভিলাষী রূপরেখা তৈরির প্রস্তাবনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নিউইয়র্কে টেকসই উন্নয়ন বিষয়ে নবম বার্ষিক আন্তর্জাতিক কনফারেন্সে শেখ হাসিনা বলেন, কোভিড-১৯ মহামারির আগেই অনেক দেশ এসডিজি অর্জনের পথ থেকে ছিটকে পড়ে। এই মহামারি তাদের আরো পেছনে ফেলে দিয়েছে। এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে পিছিয়ে পড়া দেশগুলোকে ফিরিয়ে আনতে আমাদের একটি সাহসী ও উচ্চাভিলাষী বৈশ্বিক রোডম্যাপ তৈরি করতে হবে, যাতে কেউ পেছনে পড়ে না থাকে। তিনি বলেন, কোনো দেশ একা এসডিজি অর্জন করতে পারে না। এই এজেন্ডাকে এগিয়ে নিতে আমাদের বৈশ্বিক সহযোগিতা ও সংহতি প্রয়োজন। এসডিজি অর্জনের পথে পিছিয়ে থাকা দেশগুলোকে সামনে আনতে শেখ হাসিনা পাঁচটি প্রস্তাবনা পেশ করেন। প্রথম প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এসডিজি অর্জনের সফলতা নির্ভর করছে মহামারি থেকে টেকসই উত্তরণের ওপর। এ সময়ে সত্যিকারের জরুরি বিষয় হলো- সবার জন্য টিকা নিশ্চিত করা। দ্বিতীয় প্রস্তাবে ২০৩০ এজেন্ডা বাস্তবায়নে সম্পদের বিশাল ব্যবধান কমিয়ে আনার কথা বলেন তিনি। তৃতীয় প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, চলমান বৈশ্বিক মহামারির আঘাতে ১৯৯৮ সালের পর এই প্রথম ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক দারিদ্র্য নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। এ পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে কর্মসংস্থান সৃষ্টি, সামাজিক সুরক্ষা ও নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের ওপর গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন। চতুর্থ প্রস্তাবনায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন পরিস্থিতি মোকাবিলায় পদক্ষেপগুলোর সমন্বয় করে কোভিড-১৯ থেকে পুনরুদ্ধারে পদক্ষেপ নেয়া উচিত, যাতে ভবিষ্যতে যে কোনো দুর্যোগ-দুর্বিপাকে শক্তিশালী প্রতিরোধ গড়ে তোলা যায়। পঞ্চম প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রী এসডিজি বাস্তবায়নে মনিটরিং ও সহায়তা বাড়ানোর কথা বলেন। এসজিডি বাস্তবায়নে জাতিসংঘকে সমন্বয় বাড়ানোর আহ্বান জানান তিনি। ২০৩০ এজেন্ডাকে একটি বৈশ্বিক চুক্তি হিসেবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এসডিজি টেকসই বৈশ্বিক উন্নয়নের একটি ব্লু-প্রিন্ট। কোনো দেশ একা এই এজেন্ডা অর্জন করতে পারবে না। এই এজেন্ডা অর্জনে আমাদের বৈশ্বিক সহযোগিতা ও সংহতি বাড়াতে হবে। আমরা সবুজ উন্নয়নের মাধ্যমে সমৃদ্ধি অর্জন, লবণাক্ততা সহিষ্ণুতা ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিকে প্রাধান্য দিয়ে ‘মুজিব ক্লাইমেট প্রোসপারিটি প্ল্যান’ গ্রহণ করেছি। ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশিত সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট রিপোর্টের বরাত দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৫ সাল থেকে এসডিজি সূচকে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি অগ্রগতি লাভ করেছে। বাংলাদেশ বর্তমানে বিশ্বে প্রথম পাঁচটি দ্রুত অর্থনৈতিক অগ্রগতির দেশের মধ্যে অন্যতম ও জিডিপিতে বাংলাদেশের অবস্থান ৪১তম বলে জানান তিনি। জাতিসংঘ এ বছর বাংলাদেশকে এসডিজি ক্যাটাগরি থেকে উত্তরণের স্বীকৃতি দিয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০৩১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উচ্চ-মধ্য-আয়ের দেশে ও ২০৪১ সালের মধ্যে উচ্চ-আয়ের দেশে রূপান্তরিত করার পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করছে সরকার। ডেল্টা প্ল্যান ২১০০ গ্রহণ করা হয়েছে। আমরা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি সমৃদ্ধ ও জলবায়ু স্থিতিস্থাপক বদ্বীপ তৈরি করে যেতে চাই। বাংলাদেশের অগ্রগতির কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, পদ্মা সেতু, ঢাকা মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেল ও রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মতো মেগা অবকাঠামো প্রকল্প চালু করেছি। ডিজিটালাইজেশন ও সংযোগে বাংলাদেশের বিনিয়োগ ডিজিটাল অর্থনীতি, তরুণদের নেতৃত্বে উদ্ভাবন ও রূপান্তরমূলক আর্থসামাজিক পরিবর্তনকে উৎসাহিত করেছে। এটি এখন আমাদের কোভিড-১৯ মহামারিকে আরো ভালোভাবে মোকাবিলা করতে সহায়তা করছে। আমাদের তরুণদের সংখ্যা অনেক। ডিজিটাল অর্থনীতি ও প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের সর্বাধিক সুবিধা পেতে তাদের সহায়তার জন্য আমরা শিক্ষা ও দক্ষতা বিকাশে প্রচুর বিনিয়োগ করেছি। এ সময় বিগত বছরগুলোতে টেকসই উন্নয়নসহ বিভিন্ন সেক্টরে বাংলাদেশের অগ্রগতির কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। এসবই বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনার অসাধারণ দূরদর্শিতা। তিনি বরাবরই দেশের সার্বিক উন্নয়ন এবং সমৃদ্ধির লক্ষ্যে বিচক্ষণ পদক্ষেপ গ্রহণে দূরদর্শিতার পরিচয় দিয়েছেন- সে পরিকল্পনা বাস্তবায়নেও নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাফল্য অর্জনের তালিকা দিনে দিনে দীর্ঘ হচ্ছে। এবারো বদলে যাওয়া বাংলাদেশের জন্য আরেক অর্জন যুক্ত হলো। নিঃসন্দেহে এই পুরস্কার বাংলাদেশ, দেশের জনগণ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য একটি বিরাট স্বীকৃতি। এসডিজির সাফল্য এখন নির্ভর করছে করোনা মহামারি থেকে উত্তরণের ওপর। আজ জাতির সামনে স্বাধীন বাংলাদেশ ছাড়াও সম্ভবত স্বাধীনতার পর সবচেয়ে বড় অর্জন মাথা তুলে সবার সামনে দৃশ্যগোচর হয়েছে। সেটি পদ্মা সেতু, এটির পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন প্রায় এক রূপকথার কাহিনী বিশ্বব্যাংক-এডিবির মতো শক্তিশালী আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিবন্ধকতা দূর করে বাংলাদেশ এত বড় কাজটি নিজের অর্থে সম্পন্ন করতে চলেছে। এ সেতু বাংলাদেশের মাথা উঁচু করেছে, আর এই দৃশ্যমান স্থাপনা দুর্নীতির মিথ্যা অভিযোগকারী আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর মাথা হেট করেছে। শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্ব যে সত্যি সত্যিই বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারে প্রতিষ্ঠিত করতে চায় পদ্মা সেতু নির্মাণের ফলে এদেশের মানুষ সেটা টের পেয়েছে। এখন তারা নেত্রীর জন্য যে কোনো বিজয় ছিনিয়ে আনতে প্রস্তুত। অনেক বাধা-বিপত্তি, প্রতিকূলতা, ষড়যন্ত্র অতিক্রম করে বাংলাদেশ দৃপ্ত পদক্ষেপে এগিয়ে চলেছে। সেই অগ্রগতির ধারা অব্যাহত রাখতে এর পাশাপাশি নতুন নতুন লক্ষ্য অর্জন ও টেকসই উন্নয়নের জন্য দেশের সবাইকে আন্তরিক হতে হবে, ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা চালাতে হবে। এক সময়ের তলাবিহীন ঝুঁড়ি হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশ বিশ্বের একটি উল্লেখযোগ্য অবস্থানে উজ্জ্বলভাবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। এর পুরোটাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কৃতিত্ব। তার এই অনন্য কৃতিত্বে গর্বিত বাংলাদেশ, গর্বিত বাঙালি জাতি। তার যোগ্য নেতৃত্বে সব সংকট মোকাবিলা করে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে আজকের বাংলাদেশ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উষ্ণ অভিনন্দন। তার ৭৫তম জন্মদিনে আন্তরিক শুভেচ্ছা। তিনি দীর্ঘজীবী হোন, তার সুস্বাস্থ্য কামনা করি। রেজাউল করিম খোকন : অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার, কলাম লেখক।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App