×

খেলা

শিরোপা জয়ের স্বপ্নে বিভোর জামাল-অস্কার

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৯:০৮ এএম

শিরোপা জয়ের স্বপ্নে বিভোর জামাল-অস্কার

কোচ অস্কার ব্রুজনের সঙ্গে অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া

শিরোপা জয়ের স্বপ্নে বিভোর জামাল-অস্কার

সোমবার সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে শিষ্যদের তালিম দিচ্ছেন স্প্যানিশ কোচ অস্কার ব্রুজন

শিরোপা জয়ের স্বপ্নে বিভোর জামাল-অস্কার

অনুশীলনে ব্যস্ত জামালরা

পাঁচ দেশের অংশগ্রহণে ১ থেকে ১৬ অক্টোবর মালদ্বীপে অনুষ্ঠিত হবে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ। এবার শিরোপা জয়ের লক্ষ্য নিয়ে আজ মঙ্গলবার মালে যাচ্ছে বাংলাদেশ দল। যাওয়ার আগে সোমবার (২৭ সেপ্টেম্বর) সংবাদ সম্মেলনে কোচ অস্কার ব্রুজন ও অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া চ্যাম্পিয়ন হওয়ার লক্ষ্যের কথাই শোনিয়েছেন। ২০০৩ সালে প্রথম সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের ট্রফি জিতেছিল বাংলাদেশ। এরপর কেটে গেছে ১৮টি বছর। এই সময়ে সাফের ট্রফি যেন সোনার হরিণই হয়ে আছে লাল-সবুজের প্রতিনিধিদের কাছে। অথচ প্রতিবারই দক্ষিণ এশিয়ার সেরা এই প্রতিযোগিতায় ট্রফি জয়ের স্বপ্ন থাকে বাংলাদেশ ফুটবল দলের। এবারো ব্যতিক্রম নয়। বাংলাদেশ অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়াও একই স্বপ্নে বিভোর। সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের গত চার আসরে ১২ ম্যাচে বাংলাদেশের জয় ৩টি, ড্র দুটি এবং হার ৭টি।

সাফে এবার অংশ নেয়া পাঁচ দলের মধ্যে ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে সবার চেয়ে এগিয়ে ভারত (১০৭), এরপর মালদ্বীপ (১৬০) ও নেপাল (১৬৮)। বাংলাদেশের (১৮৯) চেয়ে পিছিয়ে কেবল শ্রীলঙ্কা (২০৫)। উদ্বোধনী দিনে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ। ফেভারিটের তালিকায় ভারতকে সবার উপরে রেখে এগিয়ে যাওয়ার ছক কষছেন জামাল ভূঁইয়া।

এবারের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের নতুন দিক হলো ফরম্যাট। পাঁচটি দেশ অংশ নিচ্ছে বলে খেলা হবে রাউন্ড রবিন লিগ ভিত্তিতে। এখানে এক ম্যাচ খারাপ করলে তা পুষিয়ে নেয়ার সুযোগ থাকে। নতুন এই ফরম্যাটও বাংলাদেশকে আশাবাদী করছে ফাইনালে ওঠার।

সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশের প্রথম ও শেষ ট্রফি ২০০৩ সালে ঢাকায়, সর্বশেষ ফাইনাল ২০০৫ সালে করাচিতে এবং সর্বশেষ সেমিফাইনাল ২০০৯ সালে ঢাকায়।

[caption id="attachment_309656" align="aligncenter" width="700"] সোমবার সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে শিষ্যদের তালিম দিচ্ছেন স্প্যানিশ কোচ অস্কার ব্রুজন[/caption]

সর্বশেষ চারটি সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের গ্রুপপর্বই টপকাতে পারেনি বাংলাদেশ। ব্যর্থতা ২০১৮ সালে ঘরের মাঠে গত আসরেও। দক্ষিণ এশিয়ার টুর্নামেন্টে হাবুডুবু খাওয়া বাংলাদেশ এবার চোখ রাখছে শিরোপায়।

এক দশক ধরে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে গ্রুপ পর্বের বৈতরণীই পেরুতে পারছে না বাংলাদেশ। আসরের হিসেবে চারটিতে এই হতাশা সঙ্গী। ব্যর্থতার এই বৃত্তে জামাল ভূঁইয়া ঘুরপাক খাচ্ছেন ২০১৩ সাল থেকে, তিন আসর ধরে। এবার গণ্ডিটি ভাঙতে আশাবাদী এই মিডফিল্ডার। সতীর্থদের ওপর আস্থাও আছে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের অধিনায়কের। ২০০৫ আসরে সবশেষ ফাইনাল খেলার পর বাংলাদেশ ২০০৯ সালে সবশেষ উঠেছিল সেমিফাইনালে। পরের চার আসরে কোনোবারই গ্রুপ পর্বের গেরো ছোটেনি। এবার জামাল আশাবাদী।

মিডফিল্ডার জামাল বলেন, আমাদের লক্ষ্য সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ। সেখানে চ্যাম্পিয়ন হতে চাই। অনুশীলন সেশনে খেলোয়াড়রা কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছে। খেলোয়াড়রা নিজেদের সেরাটা দিতে চাইছে। আমরা কিছু একটা করে দেখাতে চাই।

শেষ চার সাফে গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নিয়েছে বাংলাদেশ। জামাল অবশ্য এবারের আসর নিয়ে ভীষণ আত্মবিশ্বাসী, এটা ভালো গ্রুপ, আমরা আত্মবিশ্বাসী। ম্যাচ বাই এগিয়ে যেতে চাই। অবশ্যই আমাদের লক্ষ্য চ্যাম্পিয়ন হওয়া। আশা করছি, সেই লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারব। এখানে সবাই সবাইকে জানে। একে অন্যের সঙ্গে খেলেছে। আমার আত্মবিশ্বাস আছে এই দলটি কিছু করতে পারে। সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের জন্য সোমবার সন্ধ্যায় ২৩ সদস্যের স্কোয়াড ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। তবে দলে রাখা হয়নি এলিটা কিংসলেকে। ফিফা ও এএফসি থেকে ছাড়পত্র না পাওয়ায় নাইজেরিয়ান বংশোদ্ভূত এই ফরোয়ার্ডকে পাচ্ছে না বাংলাদেশ। শেষ দিন পর্যন্ত ট্রেনিংয়ে থাকলেও তাকে ছাড়াই মালদ্বীপের উদ্দেশে যাত্রা করতে হচ্ছে জামাল ভূঁইয়াদের।

বাংলাদেশ স্কোয়াড

শহীদুল আলম, আনিসুর রহমান, আশরাফুল ইসলাম রানা, রহমত মিয়া, বিশ^নাথ ঘোষ, তপু বর্মণ, রিয়াদুল হাসান, ইয়াসিন আরাফাত, রাজাউল করিম, সোহেল রানা, সাদউদ্দিন, বিপ্লব আহমেদ, জামাল ভূঁইয়া, রাকিব হোসেন, সুমন রেজা, তারিক রায়হান কাজী, মাহবুবুর রহমান, মোহাম্মদ ইব্রাহিম, মতিন মিয়া, মোহাম্মদ আতিকুর রহমান ফাহাদ, জুয়েল রানা, টুটুল হোসেন বাদশা ও হৃদয়।

মালদ্বীপে অনুষ্ঠিত সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে নেই গ্রুপপর্ব। পাঁচ দলের এ টুর্নামেন্টে প্রতিটি দল একে অপরের সঙ্গে খেলবে। পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষ দুই দল যাবে ফাইনালে। পহেলা অক্টোবর উদ্বোধনী দিনের দ্বিতীয় ম্যাচে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কা। র‌্যাঙ্কিংয়ে শ্রীলঙ্কার চেয়ে এগিয়ে থাকা লাল-সবুজের দল জয় দিয়ে মিশন শুরু করতে আশাবাদী।

বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচ ১ অক্টোবর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। তবে প্রতিযোগিতায় ভারতকেই ফেভারিট মানছেন জামাল, কোচ আমাদের মতোই ট্রফি জিততে চাইছে। শ্রীলঙ্কা আমাদের প্রথম প্রতিপক্ষ। শক্তিশালী দল ওরা। প্রথম ম্যাচ কঠিন হবে। র‌্যাঙ্কিংয়ের দিকে তাকালে ভারত ফেভারিট অবশ্যই।

জেমি ডের অধীনে রক্ষণ সামলে আক্রমণে যাওয়ার চেষ্টা করেছে বাংলাদেশ। তবে অস্কার ব্রুজনের অধীনে ৪-৩-৩ ফর্মেশনে বল পায়ে রেখে খেলার চেষ্টা থাকবে। শুরু থেকে কোচের নির্দেশনা পরিষ্কার। জামালরা তাই সেই নির্দেশনাই অনুসরণ করছেন, সবকিছুই তো একদিনে তৈরি হবে না। কোচ প্রথম দিন যোগ দিয়েই বলেছে কীভাবে দলকে খেলাতে চায়। সবকিছু পরিষ্কার করে দিয়েছে। যেই ফর্মেশন দিয়েছে সেটা লিগে বেশির ভাগ দলই খেলে থাকে। তাতে মানিয়ে নিচ্ছি।

[caption id="attachment_309659" align="aligncenter" width="700"] অনুশীলনে ব্যস্ত জামালরা[/caption]

জেমি ডে টুর্নামেন্ট শুরুর আগে সুনির্দিষ্টভাবে খেলার ধরন নিয়ে কিছু বলতেন না। জাতীয় দলে দায়িত্ব নিয়ে অস্কার সরাসরি বলেছেন তিনি আক্রমণাত্মক ফুটবল এবং ৪-৩-৩ ছকে খেলাতে চান। মাত্র এক সপ্তাহের কম সময়ে অস্কারের এই কৌশল রপ্ত করতে সমস্যা হয়নি বলে জানান জামাল, জেমি ৩-৪-৩ এ খেলাতেন। বাংলাদেশের অধিকাংশ ক্লাব ৪-৩-৩ এ খেলে। নতুন কোচও সেটি খেলাতে চাইছেন। ফলে আশা করি কোনো সমস্যা হবে না।

জাতীয় দলের নতুন কোচ অস্কার ব্রুজন প্রথম ম্যাচকে বড় টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে দেখছেন, আমাদের প্রথম ম্যাচ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। ওই ম্যাচে বাংলাদেশ জয় দিয়ে শুরু করলে দারুণ এক সূচনা হবে।

ম্যাচ জিততে প্রয়োজন গোল। বাংলাদেশের সমস্যা স্কোরিং। বাংলাদেশের ফরোয়ার্ডরা ঘরোয়া পর্যায়ে সেভাবে গোল করতে পারেন না। ফলে আন্তর্জাতিক ম্যাচে একটা চাপ থেকেই যায়। স্কোরিং প্রসঙ্গে অস্কার বলেন, তাহলে আমাকে মাঠে নামতে হবে (হাসি)। স্কোরারদের ওপর আমার বিশ্বাস আছে। আশা করি তারা গোল করতে সক্ষম হবে।

কিছুদিন আগে মালদ্বীপ থেকে ফিরেছেন অস্কার ব্রুজন। বাংলাদেশি ক্লাব বসুন্ধরা কিংস এএফসি কাপের পরের রাউন্ডে যেতে পারেনি ভারতীয় ক্লাবের কাছে ড্র করে। মালদ্বীপ ও ভারতই শক্তিমত্তায় এগিয়ে। এই দুই দল প্রসঙ্গে বলেন, এই দুই দলের ব্যাপারে আমার পূর্ণ ধারণা আছে। আমার সেই অভিজ্ঞতা বাংলাদেশ দলে কাজে লাগাতে চেষ্টা করব।

এই টুর্নামেন্টে ফেভারিট কারা? জামাল ভূঁইয়ার জবাব, ফিফা র‌্যাঙ্কিং বলছে ভারতই ফেভারিট। তবে আমাদের কাছে সব প্রতিপক্ষই সমান। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম ম্যাচ, তাদের নিয়েই ভাবছি। প্রথম ম্যাচটা কঠিন হবে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জিততে হবে। তারপর ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ। ওই ম্যাচটি না হারলেই ভালো।

নতুন কোচের অধীনে মাত্র কয়েকদিনের অনুশীলন হলো, খেলোয়াড়রা কি মানিয়ে নিতে পারবেন নতুন কৌশলে? জামাল ভূঁইয়ার কথা, কোনো কিছুই একদিনে তৈরি হয় না, একটা প্রক্রিয়া আছে। কোচ প্রথম দিন যোগ দিয়েই বলেছেন কিভাবে দলকে খেলাতে চান। তিনি সবকিছু পরিষ্কার করে দিয়েছেন। যে ফরমেশন দিয়েছেন, সেভাবে লিগে বেশির ভাগ দলই খেলে থাকে। তা মানিয়ে নিচ্ছি। আমরা কোচের অধীনে নতুন ফরমেশনে ধাতস্ত হওয়ার চেষ্টা করছি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App