×

জাতীয়

সময় উপযোগী শিক্ষানীতি করেন শেখ হাসিনা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১১:১৮ পিএম

দীর্ঘ সময় ধরে তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করে চলেছেন, একই সঙ্গে তিনি জাতীয় সংসদের বিরোধী দলের নেত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন এবং এখন প্রজাতন্ত্রের সরকারপ্রধান বা প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন। দীর্ঘ সময়ের বহু চড়াই-উতরাই পেরিয়ে, বহু বাধা পেরিয়ে, বহু প্রতিকূলতা মোকাবিলা করে আজকের বাংলাদেশের এ অবস্থান তৈরি করেছেন। সারা পৃথিবীর টেকসই (এসডিজি) লক্ষ্যমাত্রার অগ্রযাত্রার পুরস্কার গ্রহণ করেছেন। মাত্র কয়েক দিন আগে জাতিসংঘের এ পুরস্কার তিনি গ্রহণ করেছেন। এ পুরস্কার বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষকে উৎসর্গ করেছেন। জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ভাষণদানকালে তিনি সারা পৃথিবীর মানুষের করোনা থেকে মুক্তির জন্য টিকা সমতার কথা জোরালোভাবে বলেছেন। সার্বিকভাবে আমরা দেখি, বঙ্গবন্ধু যেভাবে মুক্তির পাশাপাশি মানবতার কথা বলেছেন, ঠিক একইভাবে তার কন্যা শেখ হাসিনাও একই লক্ষ্যে মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে বারবার মানুষের মুক্তির আহ্বান জানাচ্ছেন। এর মূল জায়গাটি হচ্ছে শিক্ষা। শিক্ষা ছাড়া মানব মুক্তি অসম্ভব। বঙ্গবন্ধুর যে জীবন দর্শন আমরা দেখেছি, শেখ হাসিনা সেই লক্ষ্যে আমাদের দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। সম্প্রতি আমরা দেখলাম প্রাথমিক শিক্ষা কাঠামো ও মাধ্যমিক শিক্ষা কাঠামো ব্যবস্থায় কিছু পরিবর্তন তিনি নিয়ে এসেছেন। এ পরিবর্তন প্রয়োজন ছিল এবং কুদরত-ই-খুদা শিক্ষা কমিশন যা বঙ্গবন্ধু গঠন করেছিলেন, সেই শিক্ষা কমিশনে এটি অন্তর্ভুক্ত ছিল। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত পুরোটা সময় বাংলাদেশ শিক্ষানীতি ছাড়াই চলেছে। যখন একটা জাতি শিক্ষানীতি ছাড়া এগিয়ে যায়, তখন বোঝা যায় মতো অন্ধের মতো এগিয়ে যাচ্ছে। একজন ব্যক্তির ভেতরে যদি শিক্ষার আলো প্রজ্বলিত না থাকে, তিনি যেমন চোখ থাকার পরও অন্ধ থাকেন, ঠিক তেমনি একটি জাতি যখন শিক্ষানীতি ছাড়া এগিয়ে যায়, তখন অন্ধের মতো হাতড়ে হাতড়ে এগিয়ে যায়, এতে কোনো সন্দেহ নেই।

শেখ হাসিনা প্রশাসন ২০১০ সালে শিক্ষানীতি প্রণয়ন করে জাতিকে উপহার দিয়েছে। আমরা সেই শিক্ষানীতি গ্রহণ করে এগিয়ে যাচ্ছি। সময়ের প্রেক্ষিতে, পরিবর্তনে, যুগের পরিবর্তনে নানা পরিবর্তন আনতে হয় এবং সেই কারণে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত কোনো বার্ষিক পরীক্ষা থাকবে না। নবম এবং দশম শ্রেণী পর্যন্ত বিজ্ঞান-মানবিক-কলা বিভাজন থাকবে না এবং পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণীতে যে বার্ষিক পরীক্ষা ছিল, তা উঠিয়ে দেয়া হলো। সবকিছু আসলে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিশুদের কল্যাণে করা হয়েছে। এ পরিবর্তনে আমরা উন্নত বিশে^র সঙ্গে আছি। শিক্ষাকে আনন্দের উপকরণে রূপান্তর করা হয়েছে। পরীক্ষাভীতি থেকে মুক্ত করা, এটি হচ্ছে।

বহু আগেই আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, শিশুদেরকে বইয়ের চাপ থেকে মুক্ত রাখতে হবে। বইয়ের সংখ্যা কমাতে হবে। এ কারণে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কার্যক্রম শুরু করেছে। আমার মনে হয়, শিক্ষাকে যতদিন সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে নিয়ে আসতে না পারব, ততদিন পর্যন্ত যত উন্নতির কথা বলি না কেন সেগুলোর সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার পরপরই এটি অনুধাবন করেছিলেন বলেই জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষাকে জাতীয়করণ করেছিলেন, একমুখী করেছিলেন, অবৈতনিক করেছিলেন এবং প্রজাতন্ত্রের সব শিশুর জন্য বাধ্যতামূলক করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পরে প্রাথমিক শিক্ষা নানা ভাগে বিভাজিত হয়ে পড়ে। এখন হয়তো রাতারাতি অনেক কিছুই করা সম্ভব হবে না। তারপরও শেখ হাসিনা যে দৃষ্টিভঙ্গি নিয়েছেন, এটি অত্যন্ত প্রশংসনীয় পদক্ষেপ। আমি মনে করি, পর্যায়ক্রমে বহুধাবিভক্ত শিক্ষা ব্যবস্থাকে অন্ততপক্ষে কোনোভাবে একটা সমন্বয়ের মাঝে আনা দরকার আছে, কারণ একটি বৈষম্যহীন সমাজ যদি আমরা প্রতিষ্ঠিত করতে চাই, ওই চিন্তাচেতনার জায়গাটি হচ্ছে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়। প্রাথমিক পর্যায় ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের যদি একই ধরনের শিক্ষা ব্যবস্থার আওতায় আনা যায়, সংবিধান, বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশের গৌরব অর্জন সেগুলো শেখানো যায়, ভাষা আন্দোলন শেখানো যায়, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস শেখানো যায়, বঙ্গবন্ধুর জীবন দর্শন শেখানো যায়, আমি মনে করি এক ধরনের সমতা আসবে। শিশুরা যখন বৈষম্যহীন পরিবেশে লেখাপড়ার সুযোগ পাবে, পরবর্তীতে তারা শিক্ষার যে দিকেই যাক না কেন, কেউ উচ্চশিক্ষায় যাবে, কেউ কারিগরি শিক্ষায় যাবে, কেউ মাদ্রাসা শিক্ষায় যাবে কিন্তু তাদের চিন্তাচেতনায় থাকবে বাংলাদেশের সুনাগরিক হওয়ার একটা সংকল্প।

বঙ্গবন্ধু ১৯৫২ সালে যখন চীন সফর করেন এবং সেই সময় যে ডায়েরি লিখেছিলেন, বঙ্গবন্ধুকন্যা সেটি গ্রন্থ আকারে প্রকাশ করেছেন। এটি এখন আমাদের হাতে আছে। বঙ্গবন্ধু রচিত সেই গ্রন্থটি পাঠ করলে বোঝা যায়, চীনে দ্বিতীয় বিপ্লবের পর চীন সরকার শিক্ষাকে কতটা গুরুত্ব দিয়েছিল এবং বঙ্গবন্ধু তা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেছেন ও তার ডায়রিতে লিখে রেখেছেন। আজকে আমরা সেটা দেখলেও বুঝতে পারি বঙ্গবন্ধু শিক্ষাকে কেমনভাবে পুনর্বিন্যাস করতে চেয়েছিলেন। আজকে বাংলাদেশে যুগোপযোগী, সময়োপযোগী শিক্ষাব্যবস্থা আনতে গেলে শিক্ষাব্যবস্থার বিপ্লবী পরিবর্তন প্রয়োজন আছে। আমি বিশ্বাস করি, আশা করি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেই লক্ষ্যেই এগিয়ে চলেছেন।

বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিনে তার প্রতি আমাদের আন্তরিক অভিবাদন, অভিনন্দন ও প্রাণঢালা শুভেচ্ছা। সেই সঙ্গে প্রত্যাশা করি, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলার। শেখ হাসিনা আমাদের সেই সোনার বাংলা পৌঁছে দেবেন। তার সুস্থ ও দীর্ঘ জীবন কামনা করি। জয় হোক শেখ হাসিনার।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App