×

সারাদেশ

নোয়াখালীতে প্রধান আসামিকে বাদ দিয়ে তদন্ত রিপোর্ট

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১১:০৮ এএম

নোয়াখালীতে প্রধান আসামিকে বাদ দিয়ে তদন্ত রিপোর্ট

জাহাঙ্গীর আলম।

নোয়াখালী বেগমগঞ্জ উপজেলার মহবুল্লাপুর গ্রামে চাঁদার দাবিতে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় আদালতে দায়েরকৃত মামলার তদন্তে প্রধান আসামি জাহাঙ্গীর আলমের নাম বাদ দিয়ে তদন্ত রিপোর্ট দেওয়ায় চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন মামলার বাদি মোশারফ হোসেন রতন ও সাক্ষীরা। মামলার বাদী ও সাক্ষীরা বলছেন, মামলার তদন্তকালে সিআইডি কর্মকর্তার নিকট ঘটনায় প্রধান আসামি জাহাঙ্গীর আলমের জড়িত থাকার বিষয়টি তারা বর্ণনা করেছেন। তারপরেও সিআইডির তদন্ত প্রতিবেদন থেকে জাহাঙ্গীর আলমের নাম বাদ দেয়া হয়। ভুক্তভোগী মো. মোশারফ হোসেন রতন বলেন, স্থানীয় পল্লী চিকিৎসক জাহাঙ্গীর আলম সরকারি চাকরির তথ্য গোপন করে আর্ন্তজাতিক মানের আমেরিকা লাইফ ইনস্যুরেন্স বীমা কোম্পানিতে ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাসোসিয়েট পদে চাকরি করেন। বিষয়টি আলিকোর উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানাতে পারলে তাকে কোম্পানীর চাকরী থেকে অব্যাহতি দেয়। ওই ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে জাহাঙ্গীর আলম আমার কাছ থেকে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। আমি তার দাবিকৃত চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে ২০১৯ সালের ২০ জানুয়ারী আমার বাড়িতে তার সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে হামলা চালায়। ওই ঘটনায় আমি নোয়াখালীর বিজ্ঞ সিনিয়র ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ৫ জনকে আসামি করে অপহরণমূলক হত্যাচেষ্টা ও চাঁদাবাজির একটি মামলা করি। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে প্রথমে পিবিআই নোয়াখালীকে তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দেয়ার নির্দেশ প্রদান করেন। পিবিআইয়ের তদন্ত রিপোর্টে প্রধান আসামী জাহাঙ্গীর আলমকে ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত না দেখিয়ে তার স্বভাবচরিত্র ভালো নয় মর্মে তদন্তকারী কর্মকর্তা উল্লেখ করেন। ওই তদন্ত প্রতিবেদন পক্ষপাতদুষ্ট হয়েছে মনে করে বাদী আদালতে পিবিআইয়ের রিপোর্টের প্রতি অনাস্থা প্রদান করেন। আদালত পুনরায় অধিকতর তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন জমা দেয়ার জন্য মামলাটি সিআইডি নোয়াখালীকে নির্দেশ প্রদান করেন। ২০২০ সালের ২০ অক্টোবর সিআইডি মামলাটির তদন্তভার গ্রহণ করে দীর্ঘ প্রায় ৯ মাস পর ২০২১ সালের ১৪ জুন আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। ওই প্রতিবেদনেও এজাহারে অভিযুক্ত প্রধান আসামি জাহাঙ্গীর আলমকে বাদ দেয়া হয়। মামলার অপর আসামি জিকু কামাল, খোরশেদ আলম, অজি উল্যাহ ও সেকান্তর আলমের সাথে মীর হোসেন আলী বাবু, মো. হাসিব ও আবদুল্ল্যা আল নোমানের নাম যুক্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। সিআইডি প্রতিবেদনেও প্রধান আসামি জাহাঙ্গীর আলমের নাম বাদ দেয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন মামলার বাদি মোশারফ হোসেন ও সাক্ষীরা। মামলার সাক্ষী জান্নাতুল নাঈম, সালমা আক্তার, সিদরাতুল মুনতাহা সিনহা, নাজমা আকতার, শাহ জাহান সাজু, আনোয়ার পারভেজ, হাফেজ দীন ইসলাম জানান, আমাদের বাড়িতে প্রথমদিন তদন্তকালে সিআইডির পুলিশ সুপার মো. বশির আহম্মদ ও তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মো. আবু নোমান গণমাধ্যম কর্মী ও অন্যান্য কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে এবং পরবর্তীতে একাধিকবার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মো. আবু নোমান আমাদের অধিতর তদন্তের স্বার্থে জবানবন্দী গ্রহণ করার সময় বারবার আমরা মামলার প্রধান আসামী জাহাঙ্গীর আলমসহ অন্যান্য আসামীদের নাম, ঠিকানা ও তাদের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের বিশদভাবে সঠিক বর্ণনা দিয়েছি। কিন্তু সিআইডির তদন্ত রিপোর্টে দেখলাম সকল আসামির নাম ও অপরাধের সঠিক বর্ণনা তুলে ধরলেও ঘটনার প্রধান হোতা জাহাঙ্গীর আলমের নাম নেই। অথচ পুরো ঘটনাটি ঘটিয়েছে জাহাঙ্গীর আলম। ভুক্তভোগী মোশারফ হোসেন রতন জানান, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এ ঘটনার তদন্তকালে সত্যতা পেয়েছেন। তাছাড়া সকল সাক্ষী তাদের জবানবন্দীতে প্রধান আসামী জাহাঙ্গীর আলমের নাম ও তার অপরাধের বিবরণ দিয়েছেন। তার সকল কমিশন ব্যাংক একাউন্টে প্রেরণ করা হতো। যার প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ এজেন্ট হিসেবে যে ৩টি পলিসি সাবমিট করেছিল তার হিসাবসহ আমি সিআইডির তদন্ত কর্মকর্তার নিকট জমা দিয়েছি এবং সেগুলো সিআইডি কর্মকর্তা জব্দ তালিকায় নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন। অথচ তিনি সেসব কাগজপত্র বিজ্ঞ আদালতে জমা দেননি। সিআইডির এই তদন্তের প্রতি আমি পূর্ণ আস্থা রাখতে পারছিনা। এদিকে মামলার বাদী মোশারফ হোসেন রতন এবং সাক্ষীরা জানান, প্রতিবেদন থেকে প্রধান আসামি জাহাঙ্গীর আলমের নাম বাদ দেওয়ার পর থেকে সে আমাদের দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়ে আসছে। তার হুমকিতে আমরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। অভিযুক্ত জাহাঙ্গীর আলম জানান, এ ঘটনার সাথে আমি জড়িত নয়, তা গয়েন্দা সংস্থার তদন্তের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে। আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে। আমি কাউকে হুমকি কিংবা মতবিরোধেও জড়ায়নি। ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্টের (সিআইডি) নোয়াখালী জেলা বিশেষ পুলিশ সুপার মো. বশির আহম্মদ জানান, এ ঘটনায় আমরা অধিকতর তদন্তের মাধ্যমে চেষ্টা করেছি সকল আসামীর সংগঠিত অপরাধগুলোর সঠিক ও নির্ভুল তথ্য তুলে ধরতে। সাক্ষী প্রমাণের ভিত্তিতে পর্যালোচনা করে আমরা তদন্ত প্রতিবেদন প্রেরণ করেছি। মামলার বাদী যদি মনে করেন আমাদের প্রতিবেদন সঠিক হয়নি, তাহলে তিনি ন্যায় বিচারের স্বার্থে বিজ্ঞ আদালতে নারাজি দিতে পারবেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App