×

মুক্তচিন্তা

পুলিশের ছুটি যেন অমাবস্যার চাঁদ!

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১২:৩১ এএম

আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য উপমহাদেশে প্রথম পুলিশ ব্যবস্থা চালু করে ব্রিটিশরা। ১৮৬১ সালে ‘ভারতীয় পুলিশ আইন’-এর মাধ্যমে লর্ড ক্যানিং ভারতীয় উপমহাদেশে পুলিশ ব্যবস্থা চালু করেন। ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহের পর ব্রিটিশরা পুলিশ বাহিনী গঠনের সিদ্ধান্ত নেয় এবং রাজস্ব আদায় ও ব্রিটিশদের বাণিজ্যিক স্বার্থ সংরক্ষণের হাতিয়ার হিসেবে তৈরি করা হয় পুলিশ বাহিনী। ১৯৪৭ সালের পূর্বে এদেশের পুলিশকে বলা হতো ‘ইস্ট বেঙ্গল পুলিশ’ আর দেশ ভাগের পর এর নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘ইস্ট পাকিস্তান পুলিশ’। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে এই বাহিনীর আছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। পাকিস্তানি সৈন্যদের বিরুদ্ধে তারা রাজারবাগে প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তোলে। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা লাভের পর এই বাহিনীর নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘বাংলাদেশ পুলিশ’। সাত জন বীরশ্রেষ্ঠের মধ্যে দুজন সদস্য ছিলেন তৎকালীন ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলসের সদস্য। এছাড়াও জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে সফলতার সঙ্গে অংশগ্রহণ করে বাংলাদেশ পুলিশের সদস্যরা জাতির জন্য সম্মান বয়ে নিয়ে এসেছেন। ব্রিটিশরা উপমহাদেশ ত্যাগ করেছে তাও প্রায় ৭৪ বছর, এরপর পাকিস্তান থেকে স্বাধীনতা অর্জন, কেটে গেছে অনেক বছর, তবে পরিবর্তন হয়নি ১৮৬১ সালে ব্রিটিশদের তৈরি করা পুলিশ আইন। পুলিশ আইন-১৮৬১-এর ২২ নম্বর ধারায় বলা আছে- ‘এই আইনের উদ্দেশ্য প্রত্যেক পুলিশ কর্মচারী সর্বদা কার্যে রত (ড়হ ফঁঃু) বলিয়া বিবেচিত হইবে এবং যে কোনো সময় জেলার যে কোনো স্থানে তাহাকে পুলিশ অফিসার হিসেবে নিযুক্ত করা যাইবে’। অর্থাৎ একজন পুলিশ সদস্য সবসময় দায়িত্বরত অবস্থায় থাকবেন। বাস্তবতা হচ্ছে অন্যান্য সরকারি চাকরিজীবীর মতো পুলিশের সদস্যরা সাপ্তাহিক কোনো ছুটি ভোগ করতে পারেন না। এছাড়াও অন্যান্য সরকারি বন্ধের দিনও দায়িত্ব পালন করতে হয়। বিভিন্ন সময়ে পুলিশ আইনের সংস্কারের কথা উঠলেও এখনো সেই ১৫০ বছর আগের আইনের মাধ্যমেই পরিচালিত হচ্ছে বাংলাদেশ পুলিশ। তবে পুলিশের অতিরিক্ত ডিউটি কিংবা সাপ্তাহিক ছুটির বিষয়গুলো নিয়ে খুব বেশি আলোচনা হয় না। যদিও ১৫০ বছর আগের ব্রিটিশদের সেই আইনের ২২ ধারাটি আন্তর্জাতিক শ্রম আইনের সঙ্গে কিছুটা সাংঘর্ষিক। আন্তর্জাতিক শ্রম আইন অনুযায়ী একজন কর্মচারী সর্বোচ্চ ৮ ঘণ্টা দায়িত্ব পালন করবেন, এর বেশি কাউকে জোর করা যাবে না বরং স্বেচ্ছায় এর বেশি ডিউটি করলে তাকে ওভার টাইম দিতে হবে। একজন পুলিশের সদস্যকে কমপক্ষে ১২ ঘণ্টা ডিউটি করতে হয়; কিন্তু শ্রম আইন অনুযায়ী ওভারটাইম পাওয়ার কথা থাকলে পুলিশের জন্য তেমন কোনো ব্যবস্থা নেই। সাপ্তাহিক ছুটি, সরকারি অন্য বন্ধগুলোতেও ডিউটি করতে হয় এমনকি ধর্মীয় উৎসব যেমন ঈদ, কুরবানি কিংবা পূজাতেও ছুটি কাটানো কঠিন হয়ে যায়, হয়তো দুটি ঈদের যে কোনো একটিতে ছুটি পাওয়া যায় অনেক সময় তাও সম্ভব হয় না। ২০ দিনের যে নৈমিত্তিক ছুটির কথা কাগজে-কলমে আছে বাস্তবে তার অর্ধেক ছুটি পাওয়াও কঠিন হয়ে পড়ে। আর এতে মানসিক অবসাদে ভোগা কঠিন কিছু নয়। যেহেতু নিজ জেলাতে পোস্টিং হওয়ার সুযোগ নেই, তার পাশাপাশি ছুটি পাওয়াও কঠিন, তাই অনেকটা বাধ্য হয়েই জীবনের অধিকাংশ সময় পরিবারের বাইরে কাটাতে হয়। এতে তাদের মধ্যে একটা চাপা কষ্ট কিন্তু থেকে যায়, যা কিনা তার কর্মজীবনে প্রভাব রাখে। এমন অবস্থায় যদি চাহিদামতো ছুটি পাওয়া না যায় তবে তার কাছ থেকে কাক্সিক্ষত সেবা আশা করা কঠিন। এবং আচর-আচরণেও তখন বিরক্ত ভাব হওয়া স্বাভাবিক। বিভিন্ন সময়ে পুলিশ আইন সংস্কারের কথা উঠলেও তা আলোর মুখ এখনো দেখেনি। পুলিশ আইন-১৮৬১-এর ২২ ধারা পরিবর্তন বা সংস্কার করা যায় কিনা সেদিকও ভেবে দেখা উচিত নীতি-নির্ধারকদের। যদিও পুলিশের দায়িত্ব জরুরি সেবার মধ্যে পড়ে তারপরও পুলিশের জনবল বাড়াতে পারলে ডিউটির সময় কমিয়ে নিয়ে আসা সম্ভব। এছাড়াও জনবল বাড়াতে পারলে বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসবগুলোতে রোস্টারিং ডিউটির মাধ্যমে ছুটির বিষয়টি বিবেচনা করাও সম্ভব। এছাড়াও নৈমিত্তিক ছুটি ২০ দিন থেকে বাড়ানো যেতে পারে। এতে পুলিশ সদস্যদের মানসিক স্বাস্থ্য যেমন ভালো থাকবে তেমনি সাধারণ মানুষ পুলিশের কাছ থেকেও আরো ভালো সেবা পাবে।

কে এম মাসুম বিল্লাহ : ব্যাংক কর্মকর্তা ও লেখক। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App