সুনামগঞ্জের ছাতকে একটি হত্যা মামলার আসামিকে থানায় জিজ্ঞাসাবাদের দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ‘লাইভে’ প্রচারের ঘটনা ভাইরাল হওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে আলোচনা তৈরি হয়েছে। কোন আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদের ঘটনা প্রচারের সুযোগ না থাকলেও গত বৃহস্পতিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) রাতে ছাতক থানার এই ঘটনা লাইভে প্রচার করা হয়েছে।

ঘটনাটি নজরে আসার পর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে (জগন্নাথপুর সার্কেল) সদস্য করে ২ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করে সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান বলেছেন, ‘শুক্রবার বিকেলে আমি ঘটনাটি অবগত হয়েছি। কোনোভাবেই এভাবে গ্রেপ্তারকৃত আসামির জবানবন্দি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারের সুযোগ নেই। গতকাল শনিবার তদন্ত কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে তিন দিনের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তদন্ত রিপোর্ট পাওয়ার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ১৯ সেপ্টেম্বর রাতে ছাতকের গোবিন্দগঞ্জ বাজার থেকে দোকান বন্ধ করে বাড়িতে যাওয়ার পথে খুন হন ছাতকের গোবিন্দগঞ্জ-সৈদেরগাঁও ইউনিয়নের মোল্লাআতা গ্রামের মুদি ব্যবসায়ী আখলাকুর রহমান আখলাদ (৩৫)। গ্রামের পাশে জমিতে তার লাশ পাওয়া যায়। পরিবার ও স্থানীয়দের ধারনা ব্যবসার টাকা হাতিয়ে নিতে তাকে খুন করা হয়। ঘটনার দুইদিন পর ২১ সেপ্টেম্বর নিহতের বড় ভাই আশিক আলী বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে ছাতক থানায় মামলা দায়ের করেন। ২২ সেপ্টেম্বর বুধবার রাতে গোবিন্দনগর গ্রামের ফজলু মিয়ার ছেলে আবু সুফিয়ান সোহাগ (২৬) ও সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার দিঘলী-চাকলপাড়া গ্রামের আশরাফুল আলমের ছেলে আলীম উদ্দিনকে (২৪) আটক করে পুলিশ। পরদিন বৃহস্পতিবার রাতে এ মামলায় আবু সুফিয়ান সোহাগকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে আটক দুজন ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা ‘স্বীকার করেছেন’ দাবি করে ওসি জানান, তারা আদালতেও জবানবন্দি দিয়েছেন। হত্যার ঘটনায় জড়িত পরিকল্পনাকারীসহ অন্যদেরও গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

একই দিন রাত ১২টা ৪০ মিনিটে ছাতক থানার ওসি নাজিম উদ্দিনের কক্ষে গ্রেপ্তার আসামি আবু সুফিয়ান সোহাগকে জিজ্ঞাসাবাদের দৃশ্য ‘ছাতক টু সুনামগঞ্জ’ নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে ‘লাইভ’ করা হয়। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদের দৃশ্য লাইভে প্রচার করা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হলে ‘ছাতক টু সুনামগঞ্জ’ পেজটি থেকে লাইভের এক ঘণ্টা পর ভিডিওটি সরিয়ে ফেলা হয়। তবে ইতোমধ্যেই ৫ সহস্রাধিক মানুষ ভিডিওটি দেখে ফেলেছেন। ছাতকের অনেকেই সেটি ফেসবুকে শেয়ারও করেন। ফেসবুকে থানার জিজ্ঞাসাবাদের ঘটনা প্রচার হওয়ার পর অনেকেই সমালোচনা করে বিভিন্ন মন্তব্য করেন। ঘটনাটি প্রচার হওয়ার পর পুলিশের মধ্যেও ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে। ছাতক থানার ওসির কক্ষে আসামি সোহাগকে জিজ্ঞাসাবাদের সময় ওসি নাজিম উদ্দিনসহ কয়েকজন পুলিশ সদস্য এবং গোবিন্দগঞ্জ-সৈদেরগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আখলাকুর রহমান উপস্থিত ছিলেন। এ বিষয়ে চেয়ারম্যান আখলাকুর রহমান বলেন, জিজ্ঞাসাবাদের ভিডিও কিভাবে ফেসবুকে প্রচার হয়েছে জানি না। শুক্রবার রাত ২ টায় আমি সেটি দেখেছি। ঘটনার সাথে ৫ জন জড়িত থাকার বিষয়টি সোহাগ জানিয়েছে বলে শুনেছি।

ছাতক থানার ওসি নাজিমউদ্দিন বলেন,‘কে বা কারা গোপনে আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করেছে তাদের খোঁজে বের করা হবে এবং অইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ তবে আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদ ফেসবুক লাইভ প্রচার করা হয়নি বলে দাবি করেন তিনি।

এ ব্যাপারে সুনামগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাড. নজরুল ইসলাম সেফু বললেন, আসামিকেই জিজ্ঞাসাবাদ, রিমান্ড বা তার জবানবন্দি প্রকাশ্যে বা অনলাইনে লাইভে প্রচার করার কোনো ধরনের সুযোগ নেই। এটা একটা জঘন্য অপরাধমূলক কাজ। যারা এসব কাজ করেছে তাদের বিরুদ্ধে প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নেওয়ার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে।