×

মুক্তচিন্তা

শিশুশিক্ষার্থী ঝরে পড়া, কার্যকর ব্যবস্থা নিন

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০১:০৫ এএম

শিশুশিক্ষার্থী ঝরে পড়া, কার্যকর ব্যবস্থা নিন
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান টানা ১৮ মাস ধরে বন্ধ রেখে শিক্ষার্থীদের অনলাইন ক্লাস বা অ্যাসাইনমেন্টের নামে অটো পাস দিয়ে উপরের ক্লাসে ওঠানো হয়েছে। এতে শিশুশিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে। ফলে সংকট তৈরি হয়েছে মহামারি আকারে। করোনায় অনেক শিক্ষক হারিয়েছি এবং শিক্ষার আয়োজন থেকে হারাতে বসেছি শিক্ষার্থীদের। সেই সঙ্গে হতদরিদ্র অসহায় শ্রমজীবীদের সন্তান বই ফেলে কাজের সন্ধানে বেরিয়েছে তাদের ফেরানোর উপায় কী? অনেক পরিবার ধার করে, সঞ্চয় ভেঙে এবং খাদ্য ব্যয় কমিয়ে সংকট মোকাবিলা করেছে। আর এমন পরিস্থিতিতে যেখানে ধার করে সংসার চালাচ্ছেন, সেখানে দরিদ্র পরিবারগুলো তাদের সন্তানদের শিক্ষার সংকট কীভাবে মোকাবিলা করবে? পরিস্থিতি তাদের ঝরে পড়ার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। ঝরে পড়া এসব শিশু সুনির্দিষ্ট সুযোগ-সুবিধা বা নিয়মকানুন না জানার কারণে সমাজের মধ্যে কিশোর গ্যাংসহ বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে অপরাধী হয়ে ওঠে। কোমলমতি শিশুদের হাতে বই, খাতা ও কলম থাকার কথা; কিন্তু তা না হয়ে তারাই সমাজের অনৈতিক কাজের মাধ্যমে অপরাধ জগতে ক্যাডার হয়ে ওঠে। ওইসব শিশু সমাজে অপরাধী হয়ে ওঠার পেছনে কারা দায়ী? পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীদের ভোগবাদী বস্তু হিসেবে দেখা হয়। এ কারণে মেয়ে শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত আছে বলে তা গর্ব করে বলতে পারি না। এজন্য বাবা-মায়ের পাশাপাশি স্কুলের শিক্ষক, স্থানীয় বাসিন্দাসহ সবাইকে মেয়ে শিশুর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এগিয়ে আসতে হবে। সর্বোপরি বাবা-মাকে বুঝতে হবে, ছেলে আর মেয়ে শিশুদের মধ্যে পার্থক্য করার কিছু নেই। প্রতি বছর প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করার আগে প্রায় ১৭ শতাংশ ও মাধ্যমিক শিক্ষা শেষের আগে প্রায় ৩৭ শতাংশ শিক্ষার্থী ঝরে পড়ে। এর পেছনে অন্যতম কারণ দারিদ্র্য ও বাল্যবিয়ে। কিন্তু করোনার কারণে এসব পরিবারে দারিদ্র্য আগের চেয়েও বেড়েছে এমনকি নতুন করে অনেক পরিবার দরিদ্র হয়েছে। স্কুল বা কলেজ জীবন ছেড়ে কল-কারখানায় জীবন বেছে নিয়েছে তাদের কী হবে? বাল্যবিয়ের শিকার হয়ে যে মেয়েটির বিয়ে হলো, তার স্বপ্নগুলো ভেঙে চুরমার হয়ে গেল- এর দায় কার? গত জানুয়ারিতে প্রকাশিত এক জরিপে বলা হয়, করোনা পরিস্থিতির আগে দেশে দারিদ্র্যের হার ছিল ২০.৫ শতাংশ। তবে করোনাকালে এই হার বেড়ে হয়েছে ৪২ শতাংশ। সবচেয়ে বেশি বেড়েছে অতি দারিদ্র্য। তিন গুণ বেড়ে এটি এখন হয়েছে ২৮.৫ শতাংশ। শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে তা কতটা উদ্বেগজনক বলার অপেক্ষা রাখে না। দেশ ও জাতিকে উন্নয়নের পথে নিয়ে আসতে হলে শিক্ষিত জাতি সবার আগে দরকার। প্রকৃতপক্ষে শিক্ষা বলতে কী বোঝায়? শিক্ষা কাদের জন্য? শিক্ষায় রাষ্ট্রের দায়িত্ব কী? শিশু শিক্ষার জন্য কতটুকু আয়োজন আছে? শহর কিংবা গ্রামে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠেছে কিন্ডারগার্টেন স্কুল। করোনাকালীন কিছু কিন্ডারগার্টেন স্কুল বিক্রি করার খবরও এসেছে। ফলে শিক্ষার মৌলিক অধিকার খর্ব করে শিক্ষাকে বাণিজ্যিকীকরণে পরিণত করা হয়েছে। বাজারে আলু পটোলের মতো বিক্রি করা হচ্ছে শিক্ষা। স্বাধীন দেশে শিক্ষা নিয়ে ব্যবসা, এর চেয়ে বড় লজ্জার কথা কিছুই নেই! দেড় বছর পর যখন খুলেছে স্কুল, তখন কুড়িগ্রাম সদরের ধরলা নদীসংলগ্ন চর সারডোবের ‘সারডোব উচ্চ বিদ্যালয়’-এর নবম শ্রেণির ছাত্রী নার্গিস আক্তার। সে অন্য ছাত্র-ছাত্রীদের মতো স্কুলে হাসিমুখেই ক্লাসে ঢোকে। কিন্তু মুহূর্তেই তার সেই মুখের হাসি উবে যায়। উল্টো স্বপ্নভঙ্গের ভয় চেপে ধরে। কারণ তার সহপাঠী ৯ জনের মধ্যে সে একাই ক্লাসে বসে আছে। বাকি ৮ জনের বাল্যবিয়ে হয়েছে। এমন খবর সারা দেশে বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। মানুষ গড়ার কারখানা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। সেখানেই যদি শিক্ষকরা শিশুদের নৃশংসভাবে মারধর করেন তাহলে সেসব শিশু কি সত্যিই একদিন জাতির জন্য ভালো ভবিষ্যৎ হবে? মাদ্রাসায় শিশু বলাৎকারের শেষ কোথায়? একটি শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ, তাই শিশুদের জন্য সুশৃঙ্খল পরিবেশ রাষ্ট্রকে তৈরি করতে হবে। যারা পেটে ক্ষুধার জ্বালায় পথে পথে ঘুরে তাদের জন্য রাষ্ট্রের ব্যবস্থা কী? দারিদ্র্য এবং অভাবের কারণে শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়ে ওঠে। এসব শিশু মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করে। গাড়ি ঠেলা, পাথর ভাঙা থেকে শুরু করে মাল টানা, ওয়েল্ডিং কারখানায় কাজ করে। শিক্ষার্থীদের এই ঝরে পড়া রোধ করাটাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ- যা আমলে নিয়ে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। আমাদের শিক্ষার মধ্যে এমন একটি সম্পদ থাকা চাই। যা শুধু তথ্য নয়, সত্য দেয়। মানবসম্পদ তৈরি করতে হলে সর্বজনীন, সেক্যুলার, বিজ্ঞানমনস্ক, একমুখী শিক্ষানীতি গড়ে তুলতে হবে। রাশেদুজ্জামান রাশেদ সংবাদকর্মী ও লেখক। rashedssf12@gmail. com

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App