×

জাতীয়

কিশোর অপরাধীদের বয়স নিয়ে ভাববার সময় এসেছে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৩:৪৪ পিএম

কিশোর অপরাধীদের বয়স নিয়ে ভাববার সময় এসেছে

মধুবাগে বক্তব্য রাখছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।

কিশোর অপরাধীদের বয়স নিয়ে ভাববার সময় এসেছে

বক্তব্য রাখছেন বেনজীর আহমেদ।

কিশোর অপরাধীদের বয়স নিয়ে ভাববার সময় এসেছে

মধুবাগে টিভিসি উদ্বোধন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল এবং অন্যরা।

কিশোর অপরাধীদের বয়স নির্ধারণের বিষয় নিয়ে ভাববার সময় এসেছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। সবার হোক একটাই পণ কিশোর অপরাধ করবো দমন স্লোগানে কিশোর অপরাধ বিরোধী সামাজিক প্রচারণা কার্যক্রম ও র‍্যাব নির্মিত বিজ্ঞাপনের (টিভিসি) উদ্ধোধন অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি।

বৃহস্পতিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে হাতিরঝিল থানা সংলগ্ন মধুবাগ এলাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা আসাদুজ্জামান খাঁন কমপ্লেক্সে টিভিসি উদ্ধোধন অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।

ওই অনুষ্ঠানে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান নাছিমা বেগম, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দীন, ইন্সপেক্টর জেনারেল পুলিশ (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ, র‍্যাব মহাপরিচালক অতিরিক্ত আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, র‍্যাব মহাপরিচালক অপারেশন্স কর্ণেল কে এম আজাদসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

[caption id="attachment_308747" align="aligncenter" width="700"] স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল[/caption]

আন্তর্জাতিক নিয়মে এখনো ১৮ বছরের নিচে বয়সীরা শিশু। তাই কিশোর অপরাধীদের আইন প্রয়োগের বিষয়ে কিছু বাধ্যবাধকতা থাকে। এ প্রেক্ষাপটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, আমি যখন এসএসসি পাশ করেছি তখন বয়স ছিলো ১৫ বছর। বর্তমানে যারা নিয়মিত পড়াশোনা করেন ১৮ বছর বয়সে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে যায়। আমাদের মনে হয় ১৮ বছরের এই সময়সীমা নিয়ে চিন্তাভাবনা করার সময় এসেছে। আন্তর্জাতিক একটি আইনের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হওয়ায় আমাদের সমন্বয় করতে হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলছে, এটি ধরে রাখার প্রথম শর্ত হচ্ছে নিরাপত্তা। কিন্তু আমাদের কিশোররা নানান অপরাধে জড়িয়ে যাচ্ছে। আমাদের শঙ্কার বিষয় ছিলো কোভিডকালীন স্কুল, কলেজ বন্ধ থাকবে, সবাই বসে থাকবে। তবে এই সময়ে কিশোরদের নিয়ে যে শঙ্কাটা ছিলো ঠিক ততোটা হয়নি, আমাদের দেশ অনেক দেশের তুলনায় ভালো আছে।

মন্ত্রী বলেন, পুলিশ-র‍্যাব, শিক্ষক ও সমাজ তার কার্যক্রম চালচ্ছে। তারপরেও অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি কেন? তাই বিষয়টি নিয়ে খেয়াল না করলে আমাদের সন্তানকে হারিয়ে ফেলবো, দেশ-জাতির সবাই নিগৃহীত হবে। সমাজের শাসন যদি সুপ্রতিষ্ঠিত করতে না পারি, আইন শৃঙ্খলা বাহিনী যতোই কড়াকড়ি হোক আমরা হারিয়ে যাবো। তাই সময় থাকতে সন্তানকে উপযুক্ত শিক্ষা দিন, তাদের সঙ্গে কথা বলুন। সন্তানরা কোথায় যাচ্ছে, কি করছে খেয়াল করুন। আমাদের আইন শৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছে। তবে আপনার সন্তানদের প্রতি যদি খেয়াল না রাখেন এটি আমরা কখনোই পারবো না।

[caption id="attachment_308749" align="aligncenter" width="700"] বক্তব্য রাখছেন বেনজীর আহমেদ[/caption]

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, এক সময় আট বছর পর্যন্ত বয়সীদের শিশু ধরা হতো। কিন্তু পরবর্তীতে কিশোর আইন হালনাগাদ করা হয়েছে, এখন ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত শিশু ধরা হয়। আইন পরিবর্তনের ফলে যখন একজন পূর্ণ যুবকের পর্যায়ে পৌঁছে যায় তাকেও শিশু ধরা হয়।

বেনজীর আরও বলেন, এর ফলে কিশোর অপরাধের বিরুদ্ধে আমরা যেভাবে আইনানুগ ব্যবস্থা নিয়েছি, সেভাবে করা হচ্ছে না। তাদের ক্ষেত্রে বিচার পদ্ধতি, গ্রেপ্তার পদ্ধতি সবকিছুই আলাদা। তাদেরকে গ্রেপ্তারের সঙ্গে সঙ্গে একজন অফিসারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। কিন্তু সেই প্রফেশন অফিসাররা কাজ করেন সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের আওতায়, আর আমরা কাজ করি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের। আমরা তাদের সঙ্গে সমন্বয়ের চেষ্টা করে যাচ্ছি। এছাড়া, প্রয়োজনীয় সংখ্যক প্রফেশন অফিসার না থাকার বিষয়টিও রয়েছে। বললেই সেই সংখ্যক কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়ে দেওয়া যায়না, এটি দীর্ঘমেয়াদী একটা প্রক্রিয়া। কিশোর অপরাধীদের গ্রেপ্তারের পর জেলে পাঠানো যাবে না, সংশোধনগারে পাঠাতে হয়। সেই সংশোধনাগারের সংখ্যাও পর্যাপ্ত নয়। যেসব গ্যাপ রয়েছে পূর্ণ করতে কাজ করতে হবে। নয়তো বাড়বাড়ন্ত কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণ করা কঠোর হয়ে যাবে।

পুলিশ প্রধান বলেন, কিশোর ছেলে-মেয়েরা কি করছে, কোথায় যাচ্ছে এখানে প্যারেন্টাল কন্ট্রোলের বিষয়টাও রয়েছে। প্রতিটা পরিরিবারকে খেয়াল রাখতে হবে বাচ্চারা কোথায় যায়, কার সঙ্গে মেশে এবং কী করছে। দেশ প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে এগিয়ে যাচ্ছে। সে দেশের উপযোগী একটা জেনারেশন আমাদেরকেই তৈরি করতে হবে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দীন বলেন, কারা কিশোরদেরকে অপরাধী বানাচ্ছে, তাদের হাতে কারা মাদক তুলে দিচ্ছে, তাদেরকেও আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। অপরাধ শুধু নিয়ন্ত্রণ না, প্রতিরোধ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে আমাদের সমাজবিজ্ঞানীদের এগিয়ে আসতে হবে।

র‍্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেন, কিশোর গ্যাংয়ের মধ্যে ছোটদের সঙ্গে বড়রাও থাকে। ছোট-বড় মিলে বিরোধ হয়, পরে আলাদা গ্রুপ সৃষ্টি হয়। আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে মারামারির মতো ঘটনা ঘটে। কিশোর অপরাধ দমনে সচেতনতা কার্যক্রম শুরু হয়েছে মানে এই নয়, আভিযানিক কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাবে। যদি কেউ সচেতনতার মাধ্যমে সুপথে না আসে, তার বিরুদ্ধে আইনানুগ কঠোর ব্যবস্থা চলমান থাকবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App