×

অর্থনীতি

সয়াবিন মিল রপ্তানি বন্ধের দাবি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২২ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৯:০১ পিএম

সয়াবিন মিল রপ্তানি বন্ধের দাবি
সয়াবিন মিল রপ্তানি বন্ধের দাবি

বুধবার কারওয়ান বাজারে একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলন করে ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ।

সাশ্রয়ী মূল্যে ডিম, দুধ ও মাংসের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে সয়াবিন মিল রপ্তানি বন্ধের দাবি জানিয়েছে ফিড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ (এফআইএবি)। দাবি মানা না হলে খামারি, উদ্যোক্তা ও সংশ্লিষ্ট খাতগুলোর সবাইকে সাথে নিয়ে বৃহত্তর কর্মসূচি নেয়ার কথা জানান ব্যবসায়ীরা।

বুধবার (২২ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর কারওয়ান বাজারে একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলন করে এ দাবি জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য দেন ফিড ইন্ডাষ্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারন সম্পাদক মো. আহসানুজ্জামান।

আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাষ্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল (বিপিআইসিসি) সভাপতি মসিউর রহমান, ফিড ইন্ডাষ্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ (এফআইএবি)’র সভাপতি এহতেশাম বি. শাহজাহান, বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাষ্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল (বিপিআইসিসি) সহ-সভাপতি শামসুল আরেফিন খালেদ, ফিড ইন্ডাষ্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ (এফআইএবি)’র সদস্য সাইফুল আলম খান, ফিড ইন্ডাষ্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ (এফআইএবি)’র আবু লুৎফে ফজলে রহিম খান।

অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, হাঁস, মুরগি, মৎস্য ও গবাদি পশুর খাদ্য তৈরিতে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত উপকরণ সয়াবিন মিল। সাম্প্রতিক সময়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এ সয়াবিন মিল রপ্তানির অনুমতি দেয়ায় উদ্বেগ উৎকণ্ঠায় পড়েছেন খামারি ও উদ্যোক্তারা। দেশেরই চাহিদা যখন পূরণ হচ্ছে না তখন সরকার কেন এই সয়াবিন মিল রপ্তানির সিদ্ধান্ত নিল? এমন প্রশ্ন তোলা হয় সংবাদ সম্মেলনে। ভারতে সয়াবিন মিলের দাম বেড়ে যাওয়ায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয় অযৌক্তিকভাবে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলেও অভিযোগ করা হয়। বর্তমানে বছরে দেশে ৭০ থেকে ৮০ লক্ষ মেট্রিক টন সয়াবিন মিল তৈরী হলেও আমদানি করতে হয় প্রায় বিশ লাখ মেট্রিক টন।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, দেশের ফিড মিলগুলোতে ব্যবহৃত কাঁচামালের অধিকাংশই বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করতে হয়। বর্তমানে চাহিদাকৃত ‘সয়াবিন মিল’ দেশীয় সয়াবিন তৈল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ছাড়াও ভারত, আমেরিকা, ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা প্রভৃতি দেশ থেকে আমদানি করা হয়ে থাকে। দেশে ‘সয়াবিন মিল’ এর মোট চাহিদা বছরে প্রায় ১৮-২০ লক্ষ মেট্রিক টন। এর মধ্যে ৭৫-৮০ ভাগ দেশীয় সয়াবিন তেল উৎপাদকারি প্রতিষ্ঠান হতে এবং অবশিষ্ট ২০-২৫ ভাগ আমদানির মাধ্যমে সংগ্রহ করা হয়। এখানে আরও একটি বিষয় উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, দেশে উৎপাদিত সয়াবিন মিলের একমাত্র ক্রেতা হচ্ছে পোল্ট্রি, মৎস্য, ক্যাটল ও ফিড উৎপাদনকারি প্রতিষ্ঠান ও সাধারন খামারিবৃন্দ।

সয়াবিন মিলের রপ্তানির সিদ্ধান্তে খামারিরা উদ্বিগ্ন উল্লেখ করে ফিড ইন্ডাষ্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. আহসানুজ্জামান বলেন, ডিম, মাছ, মুরগি উৎপাদনে মোট খরচের প্রায় ৭০-৭৫ শতাংশ খরচই হয় ফিড ক্রয় বাবদ। তাই ফিডের মূল্য বৃদ্ধি পেলে খামারিদের উৎপাদন খরচ বাড়ে; অন্যদিকে খরচের বিপরীতে পণ্যের নায্য দাম না পাওয়ায় বড় অংকের লোকসানের মুখে পড়তে হয় তাদের। অতীতে চাহিদা মেটাতে সিংহভাগ সয়াবিন মিল বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা হলেও এলসি করা, অতিরিক্ত জাহাজ ভাড়া, চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য খালাসে জটিলতা, ল্যাব টেস্টের জটিলতা, বিলম্ব মাশুল, ইত্যাদি নানাবিধ জটিলতার কারণে সয়াবিন মিল আমদানির পরিমান সাম্প্রতিক বছরগুলো ক্রমান্বয়ে হ্রাস পেয়েছে।

বর্তমানে ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা থেকে সয়াবিন মিল আমদানি করতে হলে এলসি করা থেকে শুরু করে বন্দরে মাল এসে পৌঁছানো পর্যন্ত সময় লাগে প্রায় ৫০ দিন। যুক্তরাষ্ট্র থেকে সময় লাগে ৭০ দিন। ভারত থেকে সড়কে ৭-১০ দিন, কনটেইনারে ১৫-২০ দিন। বিশ্ববাজারে এবং সেই সাথে পাশ্ববর্তী রাষ্ট্র ভারতে সয়াবিন মিলের দাম বেড়ে যাওয়ায় সে দেশের পোল্ট্রি, ডেইরি ও মৎস শিল্প রক্ষা করতে এবং স্বল্পতম সময়ে বাংলাদেশ থেকে সয়াবিন মিল আমদানির জন্য আগ্রহ বেড়েছে ভারত, নেপাল প্রভৃতি দেশের ফিড প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর।

আমাদের উদ্বৃত্ত থাকলে রপ্তানি করতে কোন অসুবিধাই ছিলনা কিন্তু দেশের চাহিদা যখন দেশীয়ভাবে পূরণ করা যাচ্ছে না; তখন রপ্তানির সিদ্ধান্ত কেন? সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয় হতে সয়াবিন মিল রপ্তানি বন্ধের সুস্পষ্ট মতামতসহ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি প্রদান করলে এগুলোর কোন কিছুই আমলে না নিয়ে একতরফা ভাবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় রপ্তানির সিদ্ধান্তে অনঢ় রয়েছে। ভারত ও নেপালে সয়াবিন মিলের রপ্তানি চালু রয়েছে। শুধু তাই নয়, কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর সয়াবিন মিল বন্ধের আদেশ প্রদান করলেও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপের কারণে তা পুনরায় প্রত্যাহার করা হয়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App