×

জাতীয়

বেশি বিনিয়োগে কম মুনাফা: দুশ্চিন্তায় সঞ্চয়পত্রে নির্ভরশীলরা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২২ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৮:৩২ এএম

করোনার প্রকোপ এখনো চলমান। কমেছে সাধারণ মানুষের আয়। প্রতিনিয়ত বাড়ছে জীবনযাত্রার ব্যয়। এমন এক সংকটময় সময়ে দুশ্চিন্তার ভাঁজ সঞ্চয়কারীদের কপালে। আর যারা সম্পূর্ণভাবে সঞ্চয়পত্রের আয়ের উপর নির্ভরশীল তাদের জন্য আরো বেশি দুঃসংবাদ। রাজস্ব আয় কমে যাওয়া এবং সরকারের ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ইতোমধ্যে এই সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপনও জারি করা হয়েছে। এতে নতুন করে যারা সঞ্চয়পত্র কিনবেন বা নবায়ন করবেন তাদের আগের তুলনায় কম মুনাফা পাবেন। যদিও অর্থনীতিবিদরা সরকারের ব্যয় কমানোর বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন।

সরকারি চাকরি শেষে পেনশনের টাকায় সঞ্চয়পত্র কিনেছেন আব্দুল আলীম। ইতোমধ্যে তার সঞ্চয়পত্রের মেয়াদ শেষের দিকে। এবার নবায়ন করলে কমবে আয়। জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় পেনশনের টাকায় কেনা সঞ্চয়পত্রের টাকা দিয়ে কোনোমতে দিন চলত এই অবসরপ্রাপ্ত সরকারি চাকরিজীবীর। এবার সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার কমে যাওয়ায় চরম বিপাকে পড়েছেন তিনি। কারণ, তার কাছে টাকা থাকলেও আয়ের পথ নেই। এসব মানুষের জন্যই সাধারণত সরকার সঞ্চয়পত্র সুবিধা অব্যাহত রেখেছে। কিন্তু মুনাফা কমে যাওয়ায় চিন্তার অন্ত নেই আব্দুল আলীমের। এমনি হাজার হাজার সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগকারীরা চরম দুশ্চিন্তায় ভুগছেন। তাদের সামনে একটাই প্রশ্ন, কিভাবে চলবে তাদের সংসার?

অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের জারিকৃত প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র, ৩ মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র, পেনশনার সঞ্চয়পত্র এবং পরিবার সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার কমেছে। ডাকঘর সঞ্চয়পত্রের মধ্যে ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংক সাধারণ হিসাবের মুনাফার হার অপরিবর্তিত থাকলেও, মেয়াদি হিসাবের মুনাফার হার কমেছে। তিন মাস অন্তর অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রে সাধারণত বিনিয়োগ করেন নারী, বয়স্ক নাগরিক এবং অবসরে যাওয়া চাকরিজীবীদের একটি বড় অংশ। পারিবারিক আয়ের ক্ষেত্রে সঞ্চয়পত্রের ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল এসব মানুষ।

জারিকৃত নতুন নিয়ম অনুযায়ী, তিন বছর মেয়াদি সঞ্চয়পত্রে বর্তমানে মেয়াদ শেষে মুনাফার হার ১১ দশমিক ০৪ শতাংশ। সেটি এখন ১৫ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কমিয়ে করা হয়েছে ১০ শতাংশ। আর এই সঞ্চয়পত্রে যাদের বিনিয়োগ ৩০ লাখ টাকার বেশি তারা মেয়াদ শেষে মুনাফা পাবেন ৯ শতাংশ হারে।

ব্যয় সংকোচনের এই নীতিকে স্বাগত জানিয়ে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, রাজস্ব আয় কমে যাওয়া এবং ঋণ বেড়ে যাওয়ায় সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার কমিয়েছে সরকার। তবে সঞ্চয়পত্রে কিছু কিছু উচ্চবিত্ত সুবিধা নিচ্ছেন তা বন্ধ করারও পরামর্শ তাদের। এ বিষয়ে সাবেক তত্ত্বাবাধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম ভোরের কাগজকে বলেন, সরকারের ব্যয় আগের তুলনায় অনেক বেড়ে গেছে। বিশেষ করে সরকার প্রতি বছর সঞ্চয়পত্র থেকে যে পরিমাণ ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নেয়, তার তুলনায় অনেকগুণ বেশি বিক্রি হয় সঞ্চয়পত্র। এতে সরকারের সুদের বোঝা বাড়তে থাকে। এসব ব্যয় কমানোর জন্য সরকার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিষয়টি ইতিবাচক।

সঞ্চয়পত্রের মুনাফা হার নিয়ে সরকারের জারি করা নতুন নিয়ম অনুযায়ী, ৫ বছর মেয়াদি সঞ্চয়পত্রে বর্তমানে মেয়াদ শেষে ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ মুনাফা পাওয়া যায়। নতুন নিয়মে যাদের এই সঞ্চয়পত্রে ১৫ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগ রয়েছে তারা মেয়াদ শেষে মুনাফা পাবেন ১০ দশমিক ৩০ শতাংশ হারে। আর ৩০ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগ থাকলে মুনাফার হার হবে সাড়ে ৯ দশমিক ৩০ শতাংশ। আর অবসরভোগীদের জন্য নির্ধারিত ৫ বছর মেয়াদি পেনশনার সঞ্চয়পত্রে মেয়াদ শেষে এতদিন ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ হারে মুনাফা পাওয়া যেত। এখন এই সঞ্চয়পত্রে যাদের বিনিয়োগ ১৫ লাখ টাকার বেশি তারা মেয়াদ শেষে মুনাফা পাবেন ১০ দশমিক ৭৫ শতাংশ হারে। আর ৩০ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগ থাকলে এই হার হবে ৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ। এছাড়া ৫ বছর মেয়াদি এই সঞ্চয়পত্রে মেয়াদ শেষে মুনাফার হার ১১ দশমিক ৫২ শতাংশ। এখন এই সঞ্চয়পত্রে ১৫ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগে মুনাফার হার কমিয়ে করা হয়েছে ১০ দশমিক ৫০ শতাংশ। আর ৩০ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এই হার ৯ দশমিক ৫০ শতাংশ। ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংকের সাধারণ হিসাবে বর্তমানে মুনাফার সাড়ে ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ, এতে কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি। ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংকে তিন বছর মেয়াদি হিসাবে বর্তমানে মুনাফার হার ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ। এখন ১৫ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগে মুনাফার হার হবে ১০ দশমিক ৩০ শতাংশ। আর ৩০ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগে হবে ৯ দশমিক ৩০ শতাংশ।

এসব বিষয়ে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম ভোরের কাগজকে বলেন, সরকার ব্যয় কমানোর জন্য সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার কমিয়েছে। এটি ইতিবাচক। বিশেষ করে, সঞ্চয়পত্রে যাদের বিনিয়োগ ১৫ লাখের বেশি তাদের মুনাফা কমবে। এতে যারা নিম্ন আয়ের মানুষ তারা সরকারের এই সুবিধা পাবেন। আমরা মনে করি, সঞ্চয়পত্রে যাদের বিনিয়োগ তারা কোনোভাবেই নিম্ন আয়ের মানুষের তালিকায় পড়েন না। সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে উচ্চবিত্তরা যে সুবিধা নিচ্ছেন তা সরকারের বন্ধ করা উচিত বলেও মনে করেন তিনি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App