×

সারাদেশ

বানানো নিয়মে স্কুলে গুগল মিটে নেওয়া হচ্ছে ক্লাস

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২২ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৮:৩৬ পিএম

বানানো নিয়মে স্কুলে গুগল মিটে নেওয়া হচ্ছে ক্লাস

কোমলমতি শিক্ষার্থীদের স্কুলে ডেকে এনে গুগল মিটে ক্লাস নেওয়া হচ্ছে।

সুনামগঞ্জের ১১টি উপজেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এক নিয়মে পাঠদান চললেও সদর উপজেলার দুটি স্কুলে পাঠদান চলছে দুই সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তার মনগড়া বানানো নিয়মে। সরকারের সর্বশেষ নির্দেশনায় সপ্তাহে একদিন করে প্রথম শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদানের স্পষ্ট নির্দেশনা থাকলেও ‘গুগল মিট’এ কোমলমতি শিক্ষার্থীদের স্কুলে ডেকে এনে শিক্ষকদের ব্যক্তিগত মোবাইল দিয়ে বাধ্য করে ক্লাস নেওয়া হচ্ছে। কেউ অমান্য করলে দেখানো হচ্ছে শাস্তির ভয়।

সরেজমিনে কয়েকটি স্কুল পরিদর্শন করে এই সত্যতা পাওয়া গেছে। মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১২টায় সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার রাজগোবিন্দ সরকার প্রাথমিক বিদ্যালয় ক্লাস্টারের আওতাধীন হালুয়ারগাও সরকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায় স্কুল ছুটি হয়ে গেছে। অফিস কক্ষে বসে আছেন শিক্ষকরা। তাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেল গুগল মিটে তারা ক্লাস নেননা। তাদের এ সংক্রান্ত নির্দেশনাও নেই। কিছুক্ষণ পরেই শাখাইতি ক্লাস্টারের আরএনটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, অফিস কক্ষ থেকে ব্যক্তিগত মোবাইলে গুগল মিটে ক্লাসে যুক্ত হয়েছেন একজন শিক্ষক। তিনিসহ ওই ক্লাস্টারের বিদ্যালয়ের মাত্র ৬জন শিক্ষার্থী ছিলেন গুগল মিট ক্লাসে। তিনি জানালেন, গুগল মিট প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের জন্য উপযুক্ত নয়। আর সর্বশেষ সরকারি নির্দেশনায়ও এটি নেই। তারপরও তাদেরকে বাধ্য হয়ে নিতে হচ্ছে।

এরপরে গোবিন্দপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, অফিস কক্ষে বসে সহকারি শিক্ষা কর্মকর্তা অলিউল্লার নির্দেশে গুগল মিটে ক্লাস নেওয়া হচ্ছে। তানিশা আক্তার নামক তৃতীয় শ্রেণির এক ছাত্রীকে স্কুলে ডেকে এনে তাকে মোবাইল দিয়ে ক্লাস নেওয়া হচ্ছে। এভাবে ওই ক্লাস্টারসহ মাইজবাড়ি ক্লাস্টারের প্রতিটি বিদ্যালয়েও সহকারি শিক্ষা কর্মকর্তা এনামুল হক মোল্লার বানানো নিয়মে গুগল মিটে শিক্ষার্থীদের স্কুলে ডেকে এনে ক্লাস নেওয়া হচ্ছে। গোবিন্দপুর স্কুলের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী তানিশা আক্তার বলে, ম্যাডাম আর স্যার তারারে কইছইন আমরারে বাড়ি তনি ইস্কুলে আনিয়া মোবাইলে ক্লাস নিতে। আমরা পরতিদিন ইস্কুলে আসি মোবাইলে ক্লাস করি।’

এদিকে জেলার শান্তিগঞ্জ, জামালগঞ্জ, জগন্নাথপুর, তাহিরপুর, দিরাই, শাল্লা, ধর্মপাশা, ছাতক, দোয়ারা, বিশ্বম্ভরপুর, মধ্যনগর উপজেলার কোথাও গুগল মিটে ক্লাস হচ্ছেনা। সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার পৌরসভাসহ জেলার অন্য ক্লাস্টারগুলোতেও গুগল মিটে ক্লাস নেওয়া হচ্ছেনা। দুটি ক্লাস্টারে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের স্কুলে ডেকে এনে ক্লাস নেওয়ানোর সরকারি কোন নির্দেশনা না থাকলেও কেন এমনটি হচ্ছে তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠেছে।

জেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষক সমতির সভাপতি হারুন রশিদ বলেন, সরকারের সর্বশেষ নির্দেশনায় গুগল মিটে ক্লাস নেওয়ার কোন নির্দেশনা নেই। আমরা শুনতে পেরেছি সদর উপজেলার দুটি ক্লাস্টারে এটি করা হচ্ছে। কেন করা হচ্ছে কর্তৃপক্ষই বলতে পারবে।

সহকারি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. অলিউল্লাহ বলেন, গুগল মিটে স্কুলে শিক্ষার্থীদের ডেকে এনে ক্লাস নেওয়ার বিষয়টি তিনি জানেননা। মৌখিকভাবে শিক্ষাকদের গুগল মিটে ক্লাস নেওয়ার জন্য বলেছেন। যদি কেউ স্কুলে শিক্ষার্থীদের ডেকে এনে গুগল মিটে ক্লাস নেওয়ায় তাহলে সে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। অন্য ক্লাস্টারে এই নিয়ম না থাকলেও তার ক্লাস্টারে নেওয়া ওই পদ্ধতি নিজের বানানো কি না এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেননি।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এসএম আব্দুর রহমান বলেন, করোনায় বিপর্যস্ত শিক্ষা ব্যবস্থার ক্ষতি পুষিয়ে ওঠতে আমরা গুগল মিটে ক্লাস নিতে মৌখিকভাবে বলেছি। এটি বাধ্যতামূলক নয়। শিক্ষার্থী বা অভিভাবকদের মোবাইল না থাকায় হয়তো কোথাও কোথাও শিক্ষকরা স্কুলে শিক্ষার্থীদের ডেকে আনছেন। তবে শিক্ষার্থীদের গুগল মিট ক্লাসের জন্য শ্রেণি কক্ষে নিয়ে আসা উচিত নয়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App