×

শিক্ষা

শিক্ষকের ‘ঠ্যাং কেটে দেয়ার’ হুমকি, মাউশিতে অভিযোগ জমা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২১ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৯:৫০ পিএম

নিজের পছন্দমত বিল ভাউচারে সই না করে দেয়ায় রাজধানীর তেজগাঁও সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রেবেকা সুলতানা তার অফিসে গুন্ডা লেলিয়ে ওই স্কুলেরই সহকারী শিক্ষক মেসবাহ উদ্দিনকে ‘ঠ্যাং কেটে দেয়ার’ হুমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

মঙ্গলবার (২১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে প্রধান শিক্ষকের কক্ষে এসব ঘটনা ঘটে। পরে শিক্ষক মেসবাহ উদ্দিন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরে অভিযোগ দেন। অভিযোগ থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে প্রধান শিক্ষক রেবেকা সুলতানা ভোরের কাগজকে বলেছেন, যেখানে আমি শিক্ষক মেসবাহ উদ্দিনকে নিরাপত্তা দেয়ার চেষ্টা করছি সেখানে এমন অভিযোগ শুনে হতবাক। বরং মেসবাহ উদ্দিন যা করেছেন তা অসদাচরণ। এই অসদাচরণের জন্য তার বিচার হওয়া উচিত। তিনি বলেন, আমি যখনই উপ-পরিচালক হওয়ার জন্য আবেদন করি তখনই একটি সিন্ডিকেট আমার বিরুদ্ধে উঠেপড়ে লাগে। এছাড়া আমি চতুর্থ গ্রেডের কর্মকর্তা, সপ্তম গ্রেডের কর্মকর্তার বিরুদ্ধে লাগতে যাব কেন? আমার উপ-পরিচালক হওয়া আটকাতেই সম্ভব এমন নাটক তৈরি করা হয়েছে বলে সন্দেহ প্রকাশ করেন তিনি। সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, ২০১৭ সালে রেবেকা সুলতানা প্রধান শিক্ষক হয়ে রাজধানী তেজগাঁও সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে যোগ দেন। এর পরের বছর ২০১৮ সালে ওই স্কুলে সহকারি শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন মেসবাহ উদ্দিন। এরপরে প্রধান শিক্ষক মেসবাহ উদ্দিনকে দিয়ে স্কুলের যাবতীয় কেনাকাটাসহ বিভিন্ন ফান্ডের অর্থ খরচ করাতেন। তারপর ইচ্ছেমত বিল ভাউচার লিখে দিতে বলেন। কিন্তু মেসবাহ উদ্দিন এমন প্রস্তাবে রাজি হননি। এরপর থেকেই প্রধান শিক্ষক ওই সহকারি শিক্ষকের ওপরে ক্ষেপে যান। কিন্তু দেড় বছর স্কুল বন্ধ থাকায় প্রকাশ্যে আসেনি। এখন স্কুল চালু হওয়ায় সেই দ্বন্দ্বগুলো ফের সামনে চলে আসতে শুরু করে এবং গতকাল এর বহিঃপ্রকাশ ঘটে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক বলেছেন, স্কুলের যাবতীয় ফান্ড খরচ করার জন্য বিভিন্ন কমিটি গঠনের কথা থাকলেও প্রধান শিক্ষক কোনো কমিটিই গঠন করেননি। এরফলে তিনি নিজে নিজেই সব খরচ করেন। পাশাপাশি প্রতি শুক্রবার বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষার জন্য স্কুলের কক্ষ ব্যবহার করা হয়। এজন্য নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ স্কুলকে টাকা দেয়। এই টাকা নিয়োগ পরীক্ষায় দায়িত্বরত শিক্ষকের মধ্যে ভাগ হওয়ার কথা থাকলেও প্রধান শিক্ষক তা করেন না। এসব অভিযোগের কারণে শিক্ষকরা একজোট হয়ে গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে মাউশিতে অভিযোগ দিলে তদন্ত কমিটি হয়। তদন্ত কমিটি রিপোর্টও দিয়েছে। অভিযোগ দেয়ায় পর থেকেই সহকর্মীদের ওপর ক্ষুব্ধ রেবেকা।

এরকম পরিস্থিতিতে সোমবার প্রধান শিক্ষক তিনজন গুন্ডাকে নিয়ে আসেন তার অফিসে। এরপর সহকারি প্রধান শিক্ষক নাহিদ সুলতানা ও শিক্ষক মেসবাহ উদ্দিনকে ডেকে নেন প্রধান শিক্ষক। প্রধান শিক্ষক ও সহকারি প্রধান শিক্ষকের সামনেই ওই গুন্ডারা শিক্ষক মেসবাহ উদ্দিনকে ‘ঠ্যাং কেটে দেয়ার’ হুমকি দিয়েছেন। জানতে চাইলে ওই স্কুলের সহকারি শিক্ষক নাহিদ সুলতানা ভোরের কাগজকে বলেছেন, প্রধান শিক্ষক রেবেকা সুলতানার আচরণ অন্য শিক্ষকদের প্রতি সহযোগিতার মনোভাবের নয়। স্কুলের টাকাপয়সা খরচ করার জন্য কমিটিতে শিক্ষকদের রাখা প্রয়োজন। কিন্তু তিনি কোনো শিক্ষককে কমিটিতে রাখেননি। এরফলে প্রধান শিক্ষক কোথায় কত খরচ করছেন তা শিক্ষকরা জানতেও পারছেন না। তিনি বলেন, মেসবাহ উদ্দিন কথামত কাজ না করার কারনে প্রধান শিক্ষক তার বিরুদ্ধে মানসিক নির্যাতন করছেন।

জানা গেছে, মঙ্গলবার সকালে প্রধান শিক্ষক তার কক্ষে ডেকে নিয়ে এমন হুমকি দেন। এ সময় ওই কক্ষে স্থানীয় কয়েকজন আওয়ামী লীগের কর্মী উপস্থিত ছিলেন। হুমকি পেয়ে শিক্ষক মেসবাহ উদ্দিন বিষয়টি তার ছেলেমেয়েকে জানান। তারা জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে পুলিশে খবর দেয়। তারপর তেজগাঁও থানা থেকে দুইজন পুলিশ সদস্য স্কুলে এসে তথ্য সংগ্রহ করেন। মেসবাহ উদ্দিন ভোরের কাগজকে বলেন, প্রধান শিক্ষক রেবেকা সুলতানার কথামত কাজ না করায় তিনি আজ আমাকে বাইরে থেকে গুন্ডা আনিয়ে আমাকে নির্যাতন করিয়েছেন। এরআগে চাকরিজীবনে এমন অপমানের শিকার হননি বলে তিনি জানিয়েছেন।

মেসবাহ উদ্দিনের ছেলে স্কুলে আসার কারণ কি-এমন প্রশ্ন তুলে প্রধান শিক্ষক রেবেকা সুলতানা বলেন, আমার মনে হচ্ছে ওরা ইচ্ছা করে আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে নেমেছে। নতুবা স্কুলে মেসবাহ উদ্দিনের ছেলে আসবে কেন? সবমিলিয়ে মেসবাহ উদ্দিন তেজগাঁও সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার যোগ্য নয় বলেও জানান তিনি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App