×

মুক্তচিন্তা

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও দারিদ্র্যের কশাঘাত

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২১ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১২:৫৬ এএম

বাংলাদেশের বাজার ব্যবস্থাপনা মোটেই সংগঠিত নয়। করোনার নিদারুণ কশাঘাতে সাগরের ঢেউয়ের মতো ক্ষুধার জ্বালা আছড়ে পড়ছে। করোনার প্রভাবে কাজের ক্ষেত্র সীমিত হওয়ায় আয়ের পরিমাণ কমে গেছে, অনেকে কর্মহীন। এ অবস্থায় নিয়ন্ত্রণহীন মাত্রাতিরিক্ত পণ্যমূল্য মানুষকে দারুণভাবে হতাশ করেছে। নিম্নবিত্ত-মধ্যবিত্তের কাছে এখন বাজারে যাওয়া মানেই আতঙ্ক আর অস্থিরতা। দরিদ্র ও কর্মহীন হয়ে পড়া মানুষের মাঝে ত্রাণ কার্যক্রমের মধ্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি চরম অমানবিক ও ভোক্তা অধিকার লঙ্ঘন। বাজার যেন লাগামহীন, দেখার কেউ নেই। কালোবাজারি, মুনাফাখোর, মজুতদার প্রভৃতির কারণে খাদ্যদ্রব্য, চাল, ডাল, তেল, লবণ, মরিচ, চিনি, দুধ থেকে শুরু করে নিত্যপ্রয়োজনীয় ও অপরিহার্য দ্রব্যগুলোর মূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে প্রতিদিন এবং ক্রমে এসব পণ্য সংগ্রহ কঠিনতর হচ্ছে দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত মানুষগুলোর জন্য। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের বাজারের এ দুর্বিষহ অবস্থা দু-একদিনে সৃষ্টি হয়নি। দীর্ঘদিন ধরে অযৌক্তিকভাবে দাম বাড়ানোর যে সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে তা থেকে দেশের সব পর্যায়ের ভোক্তা-ক্রেতা শ্রেণির যেন পরিত্রাণ নেই। আয়ের তুলনায় দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন উল্লম্ফন ঘটায় মধ্য ও নিম্ন আয়ের মানুষ সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছে। চাল, ডাল, তেলসহ অন্যান্য নিত্যপণ্যের মূল্য হরদম বেড়েই চলেছে। বাজার মনিটরিং টিম থেকে দাম নিয়ন্ত্রণের সরকারি বিভিন্ন সংস্থা থাকলেও মাঠের বাস্তবতা ভিন্ন। খেয়াল রাখতে হবে, ব্যবসায়ী যেন সিন্ডিকেট করতে না পারে। সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তাদের অবশ্যই মাঠ পর্যায়ে যেতে হবে। আরো কিছু বিষয়ে নজর দিতে হবে। যেমন পণ্যবাহী ট্রাক থেকে পুলিশের বখরা আদায় বন্ধ করতে হবে। পথে পথে মাস্তানদের চাঁদাবাজিও বন্ধ করতে হবে। বাজারে সব পণ্যের পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিতের পাশাপাশি কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে অধিক মূল্যে পণ্য বিক্রেতা এবং নকল ও মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য বিক্রয়ের সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় আনাসহ নিত্যপণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। পণ্যমূল্য যাতে ভোক্তাদের সাধ্যের মধ্যে থাকে তার জন্য সরকারকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা এখনই নিতে হবে। মনিটরিং বাড়াতে হবে। পণ্য যেন ভোক্তাসাধারণের কাছে সহজলভ্য হয়, সে ব্যবস্থা নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকারের। এজন্য সরকারকে সতর্কভাবে গোটা পরিস্থিতি মনিটরিং করতে হবে এবং দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে ত্বরিত ব্যবস্থা নিতে হবে। অসাধু ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে একাধিক বৈঠক করে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো। কঠোর হুঁশিয়ারিও দেয়া হয়, নেয়া হয় নানা উদ্যোগও। কিন্তু অসাধু ব্যবসায়ীরা খুবই শক্তিমান, তারা সব সময়ই থাকেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। সরকার বারবার বলার পরও কিছু অসাধু ব্যবসায়ী পণ্যের দাম বাড়িয়েছে। বাজার অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। এজন্য সরকারের আরো নজরদারি বাড়াতে হবে। সরকার যদি ব্যবসায়ীদের কঠোর হস্তে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, তাহলে সাধারণ মানুষ নিশ্চিন্তে জীবনযাপন করতে পারবে। সাধারণ মানুষের ওপর দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির ক্রমবর্ধমান চাপ যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রোধ করা প্রয়োজন। এজন্য দেশের মজুতদারি, পণ্যের কৃত্রিম সংকট ও চোরাচালানি-কালোবাজারি রোধ করতে হবে সবার আগে। দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে হতে হবে আরো কঠোর ও দায়িত্বশীল। গ্রামীণ পর্যায়ে কৃষকদের ঋণদানসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করতে হবে। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন করতে হবে যাতে তারা সহজে পণ্য বাজারজাত করতে পারে এবং ন্যায্য মূল্যে উৎপাদিত পণ্য বিক্রয় করতে পারে। বাজারের নিয়ন্ত্রণ সরকার নিতে না পারলে কোনোভাবেই পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ করা সম্ভব হবে না। কাজেই সরকারকে মূল ভূমিকা নিতে হবে।

সুরাইয়া ইয়াসমিন তিথী :শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App