স্বাস্থ্যের গাড়িচালক মালেকের অস্ত্র মামলার রায় সোমবার
কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১০:৫৩ পিএম
ফাইল ছবি
যাবজ্জীবন চায় রাষ্ট্রপক্ষ
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গাড়িচালক হয়ে দুর্নীতির মাধ্যমে শত শত কোটি টাকার মালিক বনে যাওয়া আবদুল মালেক ওরফে বাদলের অস্ত্র আইনের মামলার রায় আগামীকাল সোমবার ঘোষণা করবেন আদালত।
এর আগে গত ১৩ সেপ্টেম্বর ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ রবিউল আলম মামলার যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে রায়ের জন্য ২০ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য করেছিলেন।
রায়ে দুর্নীতিবাজ মালেকের অস্ত্র আইনের সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন প্রত্যাশা করছেন রাষ্ট্রপক্ষ। অন্যদিকে মালেককে নির্দোষ দাবি করে তিনি খালাস পাবেন বলে মনে করছেন তার আইনজীবীরা।
রায়ের বিষয়ে মালেকের আইনজীবী শাহিন-উর রহমান বলেন, মালেকের অস্ত্র মামলার রায় আগামীকাল সোমবার ঘোষণা করা হবে। এরআগে তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ অভিযোগ প্রমাণে সক্ষম হয়নি। তাই এ মামলা থেকে তিনি খালাস পাবেন বলে আমরা মনে করছি।
আন্যদিকে আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি সালাউদ্দিন হাওলাদার বলেন, আমরা আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণে সক্ষম হয়েছি। এ আইনের সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীন কারাদণ্ড। আদালত তাকে সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীন কারাদণ্ড দেবেন বলে আমাদের প্রত্যাশা।
উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ২০ সেপ্টেম্বর ভোরে রাজধানীর তুরাগ থানাধীন কামারপাড়াস্থ ৪২ নম্বর বামনেরটেক হাজী কমপ্লেক্সের তৃতীয় তলার বাসা থেকে মালেককে গ্রেফতার করে র্যাব-১। এ সময় তার কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন, পাঁচ রাউন্ড গুলি, এক লাখ ৫০ হাজার বাংলাদেশি জাল টাকা, একটি ল্যাপটপ ও মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।
গ্রেফতারের পর র্যাব জানায়, ড্রাইভার মালেকের বিরুদ্ধে অবৈধ অস্ত্র ব্যবসা, জাল টাকার ব্যবসা, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ রয়েছে। সে তার এলাকায় সাধারণ মানুষকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে শক্তির মহড়া ও দাপট প্রদর্শনের মাধ্যমে ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করে। এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে র্যাব-১ এর পুলিশ পরিদর্শক আলমগীর হোসেন বাদী হয়ে অস্ত্র আইনসহ পৃথক দুইটি মামলা দায়ের করেন।
এরপর গত ১১ জানুয়ারি অস্ত্র আইনের মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা র্যাব-১ এর উপ-পরিদর্শক মেহেদী হাসান চৌধুরী ১৩ জনকে সাক্ষী করে আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। ১৪ ফেব্রুয়ারি আদালত মামলাটির অভিযোগপত্র গ্রহণ করেন। এরপর গত ৪ এপ্রিল মালেকের অব্যাহতির আবেদন করা হলে সেটি খারিজ করে অভিযোগ গঠন করে মামলাটির আনুষ্ঠানিক বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত। এরপর মামলাটিতে মোট ১৩ সাক্ষীর সকলের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়।
সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হলে গত ৬ সেপ্টেম্বর ৩৪২ ধারায় আত্মপক্ষ সমর্থনের সময় গাড়িচালক মালেক নিজেকে নির্দোষ দাবি করে আদালতে ন্যায় বিচার দাবি করেন। এরপর যুক্তিতর্ক উপস্থাপনে রাষ্ট্রপক্ষ আসামিকে অস্ত্র আইনের সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন দাবি করেন। অন্যদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী আসামির খালাস চান।
উল্লেখ্য, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ড্রাইভার হওয়ায় ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে দুর্নীতির মাধ্যমে মালেক শত শত কোটি টাকা অবৈধভাবে আয় ও বিদেশে পাচার এবং জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। মালেকের স্ত্রীর নামে দক্ষিণ কামারপাড়ায় ২টি সাততলা বিলাসবহুল ভবনসহ ধানমন্ডির হাতিরপুল এলাকায় ৪.৫ কাঠা জমিতে একটি নির্মাণাধীন ১০ তলা ভবন এবং দক্ষিণ কামারপাড়ায় ১৫ কাঠা জমিতে একটি ডেইরি ফার্ম আছে। এছাড়াও বিভিন্ন ব্যাংকে নামে-বেনামে বিপুল পরিমাণ অর্থ গচ্ছিত আছে বলেও জানা যায়। এছাড়া স্বাস্থ্য অধিদফতরে ড্রাইভার্স অ্যাসোসিয়েশন নামে একটি সংগঠন তৈরি করে নিজেই সেই সংগঠনের সভাপতি হওয়ায় নিয়োগ বাণিজ্যের মাধ্যমে বিপুল টাকা হাতিয়ে নেন।