×

জাতীয়

স্কুলে স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিত

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৮:৩৮ এএম

গত সপ্তাহে স্কুল খুলে দেওয়ার পর শ্রীমঙ্গলের ভোজপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক প্রশান্ত চক্রবর্তী ও মামুনুর রশীদ করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। তারা এখন নিভৃতবাসে আছেন। ওই স্কুলের কয়েক শিক্ষার্থীর অভিভাবকও করোনাক্রান্ত বলে খবর পাওয়া গেছে। কিন্তু এই বিষয় নিয়ে কেউ মুখ খুলছেন না। স্বাস্থ্যবিধি ‘যথাযথভাবে’ মেনে চলার একগুচ্ছ নির্দেশনা দিয়ে মহামারির মধ্যেই দেড় বছর পর গত রবিবার স্কুল-কলেজ খুলে দিলেও এক সপ্তাহের মধ্যেই ঢিলেমি দেখা দেয়ায় অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একাধিক শিক্ষক করোনা আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানা গেছে। কিন্তু বিষয়টিকে প্রকাশ্যে আনা হচ্ছে না।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে যাওয়ার পর প্রথম সপ্তাহে অনেক স্কুলে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিও ছিল কম। তবু বেশ কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঘুরে দেখা গেছে, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মচারীদের অনেকেই স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। ক্লাস চলাকালে দূরত্ববিধি মানছে শিক্ষার্থীরা। মাস্ক ছাড়া জটলা করে আড্ডা দিতে দেখা যাচ্ছে তাদের। শিক্ষক, কর্মচারীদেরও কখনো কখনো মাস্ক ছাড়া দেখা গেছে। এমনকি ক্লাস শেষে শিক্ষার্থীরা দলবেঁধে ফুটপাতের দোকান থেকে ফুচকা কিনে খাচ্ছে।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে কিনা তা দেখতে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি আজ বেলা ১১টায় রাজধানীর যাত্রাবাড়ী আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজে যাবেন। অন্যদিকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব জি এম হাসিবুল হাসান গত দুদিন ধরে মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জের বেশ কয়েকটি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শন করেন।

আজিমপুর গভার্নমেন্ট গার্লস স্কুল এন্ড কলেজে গিয়ে দেখা যায়, ক্লাসের সময় নিয়ম মানলেও বাইরে জটলা করছে শিক্ষার্থীরা। প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষকরা নিজেরাই মাস্ক পরছেন না। অথচ স্কুল খোলার প্রথম দিন অর্থাৎ গত রবিবারে শিক্ষামন্ত্রী ক্লাসরুম অপরিষ্কার থাকার কারণে প্রতিষ্ঠান প্রধানকে সাময়িক বরখাস্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন। পরে শিক্ষা প্রশাসন তাকে শোকজ করে। শোকজের জবাবে তিনি বলেন, মন্ত্রী যে রুমকে অপরিষ্কার দেখেছিলেন সেটি ক্লাসরুম ছিল না, স্টোররুম ছিল।

গতকাল শনিবার দুপুরে মতিঝিল মডেল হাই স্কুল এন্ড কলেজের ছুটির পর শিক্ষার্থীদের দলবেঁধে আড্ডা মারতে দেখা গেছে। এ সময় শিশুদের মুখে মাস্ক পরা থাকলেও কিশোরদের মুখে মাস্ক ছিল না। কারো আবার থুঁতুনিতে মাস্ক ঝুলানো ছিল। ওই স্কুলে দশম শ্রেণির একজন ছাত্র বলল, অনেকে মাস্ক খুলে ফেলে মাঝে মাঝে। তবে ক্লাসের বাইরেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য বলে দিয়েছেন স্যাররা। স্কুলে ঢোকার সময় আমাদের হাত স্যানিটাইজ করা হয়। হাত ধোয়ারও ব্যবস্থা আছে। তবে সবাই হাত ধুতে চায় না।

সিরাজগঞ্জের বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্লাস করলেও স্বাস্থ্য বিধি মানছেন না অভিভাবকরা। খোলার পর থেকেই প্রতিটি বিদ্যালয়েই শিক্ষার্থীরা বিপুল উৎসাহ নিয়ে উপস্থিত হয়। সেই সঙ্গে উপস্থিত হন অভিভাবকরাও। কর্তৃপক্ষের নির্দেশমতো শিক্ষার্থীরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্লাসে উপস্থিত হলেও স্বাস্থ্যবিধি মানার বালাই নেই অভিভাবকদের মাঝে। শহরের প্রায় প্রতিটি বিদ্যালয়ের সামনেই অভিভাবকদের ভিড়। সেখানে গাদাগাদি করে একে অপরের সঙ্গে গল্পে মত্ত থাকে। এ অবস্থায় আবারো করোনা সংক্রমণের শঙ্কায় সচেতন মহল।

মানিকগঞ্জের ধল্লা ইউনিয়ন কাউন্সিল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমরা ছাত্রদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিয়েছি। শিক্ষার্থীদের হাত ধোয়ার জন্য স্কুলগেটে দুটি বেসিন বসানো হয়েছে। মাস্ক ছাড়া কোনো ছাত্রকেই স্কুলে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না জানিয়ে তিনি বলেন যেসব শিক্ষার্থী মাস্ক ছাড়া স্কুলে এসেছে তাদের জন্য আমরা স্কুল থেকেই মাস্কের ব্যবস্থা করেছি। শিক্ষার্থীদের শরীরের তাপমাত্রা মাপার পর তাদের ক্লাস করার অনুমতি দেয়া হচ্ছে।

কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, বিভিন্ন শ্রেণিকক্ষে প্রতি বেঞ্চে গাদাগাদি করে শিক্ষার্থীরা ক্লাস করছেন। অনেক শিক্ষার্থী এমনকি শিক্ষকদের মুখেও নেই মাস্ক। সাংবাদিকদের দেখে তড়িঘড়ি করে মাস্ক পরেন অনেকে। নির্দেশনায় থাকলেও হাতের নাগালে নেই হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও হাত ধোয়ার আলাদা ব্যবস্থা। এমনকি মাপা হয়নি শিক্ষার্থীদের শরীরের তাপমাত্রা।

শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, পাঠদান শুরুর দিন থেকেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৯ দফা নির্দেশনা মেনে চলার কথা। এরই মধ্যে জনস্বাস্থ্য ও স্বাস্থ্যবিধি মানতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের করণীয় নির্ধারণ করে পরিপত্র জারিও করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ওই পরিপত্রে বলা হয়েছিল, কোভিড-১৯ অতিমারির কারণে গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার নির্দেশনা দেয়া হলেও সেটি পুরোপুরি বলবৎ হয়নি। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরও (মাউশি) জোরেশোরে তদারকি করছে না। দপ্তরটি শুধু নির্দেশ দিয়েই দায় সারতে চাইছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App