×

জাতীয়

বনভূমি নষ্ট করে প্রশিক্ষণ অ্যাকাডেমি নয়: সংসদীয় কমিটি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৭:৪১ পিএম

বনভূমি নষ্ট করে প্রশিক্ষণ অ্যাকাডেমি নয়: সংসদীয় কমিটি

রবিবার সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা হয়। ছবি: ভোরের কাগজ

পরিবেশ নষ্ট করে কক্সবাজারে বন বিভাগের ৭০০ একর বনভূমিতে সরকারি কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ অ্যাকাডেমি নির্মাণের বিরোধিতা করেছে জাতীয় সংসদের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি। ওই জায়গায় যাতে প্রকল্পটি গ্রহণ না করা হয়, কমিটি সেই ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করেছে।

রবিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা হয়। সংসদীয় কমিটি বলেছে, সংরক্ষিত ওই বিপুল বনভূমি কীভাবে বরাদ্দ দেওয়া হলো, তা খতিয়ে দেখা হবে।

সাবের চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে কমিটি সদস্য পরিবেশন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন, উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার, নাজিম উদ্দিন আহমেদ, তানভীর শাকিল জয়, খোদেজা নাসরিন আক্তার হোসেন এবং মো. শাহীন চাকলাদার বৈঠকে অংশ নেন।

বন অধিদফতর বলছে, বনভূমির মধ্যে প্রস্তাবিত প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে পরিবেশ ও প্রতিবেশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

সংসদীয় কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘আমরা যেখানে বেদখলে থাকা বনভূমি উদ্ধার করছি। সেখানে সরকারের আরেকটি সংস্থা যদি জমি নিয়ে নেয়, এটা তো ঠিক নয়। সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘আমরা বোঝার চেষ্টা করছি— এটা কীভাবে হলো। যদি কেবল জমির দাগ ও খতিয়ান দেওয়া হয় এবং ভূমির আকার ও প্রকৃত বর্ণনা না করে, সেটা হতে পারে কিনা। আমরা মনে করি, সেটাই হয়েছে। এটা আমরা দেখবো। প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে যে অনুমতি এসেছে, সেই দফতরও হয়তো এই বিষয়টি পুরোপুরি জানে না।’

তিনি বলেন, ‘এই জমির বিষয়ে আদালতের নির্দেশনা রয়েছে। সংরক্ষিত বন হিসেবে এই জমির মালিক জেলা প্রশাসন। আর এ জমি কোনও অবস্থাতেই বন্দোবস্তযোগ্য নয় বলে রিমার্ক থাকে। অর্থাৎ, এই জমি কোনও অবস্থাতেই বন্দোবস্ত দেওয়া যাবে না। কাজেই এই জমি বন্দোবস্তো দেওয়ার কোনও সুযোগ নেই।’

তিনি আরও বলেন, জনপ্রশাসনের দক্ষতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধিকে আমরা সমর্থন করি। তবে ওই জায়গায় এটা হওয়ার কোনও সুযোগ নেই। কারণ, আমাদের বিধি-নিয়ম এমনকি এটা সংবিধান পরিপন্থী। এটা অন্য জায়গায় হোক।

ওই প্রকল্প চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়ার জন্য পরিবেশ মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি এসেছে জানিয়ে সভাপতি বলেন, ‘আমরা সেই চূড়ান্ত অনুমতি দিতে না করেছি। পাশাপাশি সঠিক তথ্য তুলে ধরতে বলেছি। আমরা চাই, বিষয়টি যেন পুনর্বিবেচনা করা হয়।

বিষয়টি নিয়ে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয় ভূমি মন্ত্রণালয়কে চিঠি পাঠানো হবে বলেও তিনি জানান।

বনভূমির ওই জমি বরাদ্দ দেওয়া ‘বিধিসম্মত’ হয়নি উল্লেখ করে সাবের হোসেন বলেন, ‘যেহেতু বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এখন তারা প্রকল্প চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের অনাপত্তিপত্র চেয়েছে। আমরা এটা না দিতে বলেছি। পরিবেশমন্ত্রীও আমাদের সঙ্গে একমত।’

বনবিভাগ থেকে আগেই আপত্তি দেওয়া হয়েছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বন বিভাগ থেকে আগেই বলেছিল— এটা দেওয়া যাবে না। কিন্তু পরিবেশ অধিদফতর থেকে একটা ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছিল। তবে তারা জানতো না জমির ধরন কী। তাদের কাছে হয়তো দাগ ও খতিয়ান নম্বর দেওয়া হয়েছে।’

সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য আরেকটি প্রশিক্ষণ অ্যাকাডেমি নির্মাণ করতে সংরক্ষিত বনভূমির ৭০০ একর জায়গা বরাদ্দ দেওয়ার খবর বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়। প্রশিক্ষণ অ্যাকাডেমি নির্মাণের জন্য ওই জমি এক টাকা প্রতীকী মূল্যে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সংলগ্ন ঝিলংজা বনভূমির ওই এলাকা প্রতিবেশগতভাবে সংকটাপন্ন।

এর আগে ২০১৮ সালে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন ‘বঙ্গবন্ধু অ্যাকাডেমি অব পাবলিক অ্যাডমিনিস্টেশন’ নির্মাণের জন্য পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের অধীন পরিবেশ অধিদফতরের কাছে অনাপত্তিপত্র চায়। সংস্থাটি ওই বছরই বিভিন্ন শর্তে অনাপত্তিপত্র দেয়।

ওই এলাকাকে ১৯৩৫ সালে সংরক্ষিত বন হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এরপর ১৯৮০ সালে এটাকে জাতীয় উদ্যান ঘোষণা করা হয়। সর্বশেষ ১৯৯৯ সালে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা ঘোষণা করা হয়। ২০০১ সালে দেশের বনভূমির যে তালিকা করা হয়, তাতেও ঝিলংজা মৌজা বনভূমি হিসেবে উল্লেখ আছে।

সংসদীয় কমিটিতে মন্ত্রণালয়ের দেওয়া এক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, ওই জমিতে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবিলায় উপকূলীয় এলাকায় বনায়ন প্রকল্পের আওতায় সামাজিক বনায়নের মাধ্যমে ১০০ একর সৃজিত বাগান রয়েছে। ২০-২০০ ফুট পর্যন্ত বিভিন্ন উচ্চতার পাহাড় রয়েছে। প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো গর্জন, চাপালিশ, তেলসুরসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ রয়েছে। ওই এলাকা হাতি, বানর, বন্য শুকর, বিভিন্ন প্রজাতির সাপ ও পাখির আবাসস্থল।

মন্ত্রণালয় বলেছে, ওই এলাকায় প্রস্তাবিত প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা হলে পরিবেশ ও প্রতিবেশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এই জমি বরাদ্দ নিয়েছে ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে। পরিবেশ সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী, প্রতিবেশগতভাবে সংকটাপন্ন এ বনভূমিতে কোনও ধরনের স্থাপনা নির্মাণ করা নিষেধ।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App