×

জাতীয়

জঙ্গি টার্গেটে কূটনৈতিক জোন!

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৮:২৭ এএম

রাজধানীর কূটনৈতিক এলাকায় পেট্রোল বোমা হামলার ঘটনায় এক জঙ্গি পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার পর তোলপাড় শুরু হয়েছে। জোরদার করা হয়েছে কূটনৈতিক এলাকার নিরাপত্তা। নেয়া হয়েছে বাড়তি সতর্কতা। আটকের পর দেলোয়ার নামের এই জঙ্গির নেপথ্যে কারা রয়েছে- এ নিয়ে খোঁজখবর শুরু করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক ইউনিট।

বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে আটকের পর বিদেশফেরত ওই জঙ্গিকে হামলার পরিকল্পনা ও নেটওয়ার্ক সম্পর্কে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তবে জবাবে সে অসংলগ্ন কথাবার্তা বলছে। কৌশলে প্রসঙ্গ এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। তার গ্রামের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে একাধিক ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস ও কিছু নথিপত্র উদ্ধার করা হয়েছে। সে আনসার আল ইসলামের সক্রিয় সদস্য বলে পুলিশ জানিয়েছে। অনলাইনে বিভিন্ন অডিও-ভিডিও দেখে এবং শুনে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হয় দেলোয়ার। পরে সাংগঠনিক সিদ্ধান্তে একজন বিদেশি নাগরিকের ওপর হামলার জন্য গুলশানের কূটনৈতিক এলাকায় যায়। তার টার্গেট ছিল মার্কিন নাগরিক। এজন্য এআইইউবির গাড়ি দেখে এটাকে আমেরিকান মনে করে পেট্রোল বোমা হামলা চালায়। জিজ্ঞাসাবাদে জঙ্গি দেলোয়ার জানিয়েছে, সারা বিশ্বে মুসলমানদের ওপর নির্যাতন-নিপীড়ন করার পরও বাংলাদেশের সরকার কেন ব্যবস্থা নেয়নি- এজন্য সে সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলতে হামলার পরিকল্পনা করেছিল। তিন দিনের রিমান্ডের গতকাল শনিবার ছিল প্রথমদিন।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা মহানগর পুলিশের কূটনৈতিক এলাকার উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) আশরাফুল ইসলাম ভোরের কাগজকে বলেন, দেলোয়ার নামে এক জঙ্গি আটকের পর কূটনৈতিক এলাকায় তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে। গোয়েন্দা কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। এছাড়া সব সময়ই নিরাপত্তা থাকে উল্লেখ করে তিনি বলেন, দূতাবাস এবং কূটনৈতিকদের বাসায় বিশেষ নজরদারি রাখা হচ্ছে। মামলার তদন্তকারী সংস্থা সিটিটিসির উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) আবদুল মান্নান বলেছেন, আটক দেলোয়ার সেলফ রেডিকেলাইজড। সে কিছু একটা করে আলোচনায় আসতে চেয়েছিল। যার মাধ্যমে সরকারকে বিব্রত বা বেকায়দায় ফেলতে চেষ্টা করে আসছিল। এডিসি জাহিদুর রহমান বলেছেন, দেলোয়ারকে পুলিশ আটক করেছে। পরে সিটিটিসি তাকে রিমান্ডে নিয়েছে। সে জঙ্গিবাদে জড়িয়ে সরকারকে বিব্রত করতে কিছু একটা করার চেষ্টা করছিল।

গুলশান থানা পুলিশের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কূটনৈতিক এলাকায় টহল ও তল্লাশি জোরদার বাড়ানো হয়েছে। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলেন, রিমান্ডে থাকা জঙ্গি দেলোয়ার এলোমেলো তথ্য দিয়েছে। তার মানসিক সমস্যা রয়েছে বলেও মনে হয়েছে। তবে গ্রেপ্তারের পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রশ্ন এড়াতে সে কৌশল করছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সতর্কতার সঙ্গে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তার সহযোগীদের শনাক্তের চেষ্টা চলছে।

গত বৃহস্পতিবার দুপুর পৌনে ১টার দিকে আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের (এআইইউবি) একটি গাড়িতে হামলার পর ওই জঙ্গিকে আটক করা হয়। পরে পুলিশের মাধ্যমে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম এন্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি) তাকে হেফাজতে নিয়েছে। দেলোয়ার নামের ওই জঙ্গিকে শুক্রবার আদালতে সোপর্দ করে তিন দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। আটকের পর দেলোয়ারের বিরুদ্ধে গুলশান থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলার বাদী কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের এসআই আমির হোসেন। মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলতে জঙ্গি দেলোয়ার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক-স্টাফদের ওপর বড় পরিসরে হামলা চালিয়ে ব্যাপক প্রাণহানির মাধ্যমে ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করেছিল।

আদালত পুলিশ জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা ৪৫ মিনিটে অজ্ঞাত এক ব্যক্তি গুলশানের থাইল্যান্ড অ্যাম্বাসি সংলগ্ন সড়কে একটি মাইক্রোবাসে হামলা চালায়। ওই মাইক্রোবাসটি (ঢাকা মেট্রো চ-৫৬-৫৪২৪) ছিল আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের (এআইইউবি)। গাড়িতে এ সময় এআইইউবির সিনিয়র এক্সিকিউটিভ নজরুল ইসলাম ও জুনিয়র এক্সিকিউটিভ নাজমুল হাসান ছিলেন। সামান্য আহত হলেও তাৎক্ষণিক তারা স্থানীয় পথচারীদের সহায়তায় সেই জঙ্গিকে আটক করেন। পরে গুলশান থানার উপপরিদর্শক নুরুজ্জামান তাকে হেফাজতে নিয়ে তার ব্যাগ তল্লাশি করে। পুলিশ তার ব্যাগ থেকে তাৎক্ষণিক দেড় লিটার তরল পদার্থ, দুটি লোহার তৈরি ছুরি ও জাপানি নাগরিকত্বের একটি কার্ড উদ্ধার করে। পরে গুলশান থানার উপপরিদর্শক নুরুজ্জামান বলেন, গাড়িতে পেট্রলসহ একটি বোতল ঢিল মেরেছিল। পরে গাড়িতে থাকা লোকজনই তাকে আটক করে। খবর পেয়ে পুলিশ সেখানে যায়। কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট এর তদন্ত করছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে দেলোয়ার জানিয়েছে, তার বাড়ি মানিকগঞ্জের সিংগাইর থানাধীন জার্মিত্তা এলাকায়। তার বাবার নাম শাহাজুদ্দিন। সে দীর্ঘদিন জাপানে ছিল। বছর খানেক আগে সে দেশে ফিরে এসে মানিকগঞ্জে গ্রামের বাড়িতে অবস্থান করছিল। আটকের পর দেলোয়ারকে নিয়ে তার গ্রামের বাড়িতেও অভিযান চালায় পুলিশ। ঘটনার সময় গাড়িতে থাকা এআইইউবির সিনিয়র এক্সিকিউটিভ নজরুল ইসলাম পুলিশকে ঘটনার বর্ণনা করেছেন। তিনি মামলার সাক্ষী হলেও এ বিষয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে কোনো কথা বলতে রাজি হননি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App