×

জাতীয়

সম্মেলন খরা ঢাকা বিভাগে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৯:০০ এএম

তৃণমূলে অভ্যন্তরীণ কোন্দল আর বহিরাগতদের দাপট নিয়ে বারবার আলোচনায় আসছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দীর্ঘদিন ধরে সম্মেলন বা কাউন্সিল না হওয়ায় বিরাজ করছে নেতৃত্বের শূন্যতা ও সাংগঠনিক স্থবিরতা। দলকে আরো গতিশীল করার জন্য নতুন উদ্যোগের কথা বলছেন নেতারা। ৮ বিভাগের সাংগঠনিক অবস্থা নিয়ে আমাদের ধারাবাহিক প্রতিবেদন- লিখেছেন ঝর্ণা মনি

সম্মেলন খরায় ভুগছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের তৃণমূল। টানা তৃতীয়বার দল ক্ষমতায় থাকার কারণে অনেকটাই সরকারে বিলীন হয়ে গেছে দলটি। দীর্ঘদিন কমিটি না হওয়ায় তৃণমূলে বাড়ছে ক্ষোভ। কোথাও কোথাও বিস্ফোরণও ঘটছে। কোন্দল নিরসনে তৃণমূলের সম্মেলন ও সাংগঠনিক তৎপরতা জোরদারে একাধিকবার নির্দেশ দিয়েছে দলীয় হাইকমাণ্ড। তবে করোনাকালীন স্থবির বিশ্বে মানুষের পাশে দাঁড়ানো ছাড়া সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডই স্থবির ছিল। বর্তমানে করোনার প্রকোপ কিছুটা কমে যাওয়ায় ফের গতি বাড়ছে সাংগঠনিক কার্যক্রমে। সারাদেশের তৃণমূলের কাউন্সিল শেষ করার প্রস্তুতি নিয়ে শিগগিরই মাঠে নামছে ক্ষমতাসীনরা। আগামী জাতীয় সম্মেলনের আগেই সব ইউনিটের সম্মেলন সম্ভব বলে আশাবাদী তারা।

আওয়ামী লীগের প্রাণকেন্দ্র ঢাকা বিভাগে সাংগঠনিক জেলা ১৭টি। এ বিভাগে চারটি মহানগরী রয়েছে- ঢাকা উত্তর, দক্ষিণ, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর মহানগরী। বাকি ১৩ জেলা হলো- ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, নরসিংদী, মানিকগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, কিশোরগঞ্জ, শরীয়তপুর, রাজবাড়ী ও টাঙ্গাইল। এর মধ্যে ঢাকা মহানগরী উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ ছাড়া বাকি ১৫ সাংগঠনিক জেলাই মেয়াদোত্তীর্ণ। ঢাকা বিভাগে শতাধিক উপজেলা ও সাংগঠনিক থানা রয়েছে ২ শতাধিক। এর বেশির ভাগই মেয়াদোত্তীর্ণ।

জানতে চাইলে ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম ভোরের কাগজকে বলেন, ইতোমধ্যেই সাংগঠনিক তৎপরতা শুরু হয়েছে। কোভিডে মানুষের পাশে দাঁড়ানোই ছিল একমাত্র রাজনীতি। এখন মানুষের পাশে দাঁড়ানোর পাশাপাশি পুরোদমে সংগঠনকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। মেয়াদোত্তীর্ণ সব কমিটিকে দ্রুত গুছিয়ে কমিটি করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, ওয়ার্ড, থানা, উপজেলা, জেলা সব কমিটি হবে। ২১ সেপ্টেম্বর রাজবাড়িতে বর্ধিত সভা এবং ১৬ অক্টোবর সম্মেলন হবে। ৭ অক্টোবর মুন্সীগঞ্জের টঙ্গীবাড়ি সম্মেলন, টাঙ্গাইলের সফিপুর সম্মেলন ৯ অক্টোবর, ১৫ অক্টোবর শ্রীপুরে সম্মেলন হবে।

তৃণমূলের অভ্যন্তরীন কোন্দল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ বিশাল সংগঠন। কোটি কোটি নেতাকর্মী। কোন্দল থাকবে। তবে তা যেন বাড়াবাড়ি না হয়। সবশেষ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে অনেক জেলার কোন্দল নিয়ে কঠোর হুশিয়ারি করে সমাধানের বিষয়ে দলীয়প্রধান গাইডলাইন দিয়েছেন। এরপর থেকে কোথাও কোন্দল হয়ে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আশার আলো দুই মহানগরী : ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগকে দলের সবচেয়ে বড় শক্তি মনে করা হয়। ২০১৯ সালে শেখ বজলুর রহমানকে সভাপতি ও এস এম মান্নান কচিকে সাধারণ সম্পাদক করে ঢাকা মহানগর উত্তর এবং আবু আহমেদ মন্নাফীকে সভাপতি এবং মো. হুমায়ুন কবিরকে সাধারণ সম্পাদক করে ঢাকা দক্ষিণ মহানগরের আংশিক কমিটি ঘোষণা করে আওয়ামী লীগ। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে পূর্ণাঙ্গ কমিটির প্রস্তাব কেন্দ্রে জমা দেন। ওই বছরের ১৮ নভেম্বর সেই প্রস্তাব অনুমোদন করে ঢাকা উত্তরের জন্য ৯২ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। এর এক দিন পরেই ৭৩ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি পায় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ। তবে মহানগরীর পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠিত হলেও থানা-ওয়ার্ড ও ইউনিট কমিটির বেহাল অবস্থা। পুরনো কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক দিয়েই চলছে থানা ও ওয়ার্ড কমিটিগুলোর কার্যক্রম।

ঢাকা মহানগর উত্তরে ৫৪টি প্রশাসনিক ওয়ার্ড ও ১০টি সাংগঠনিক ওয়ার্ড। থানা ২৬টি। সব ওয়ার্ডে কর্মিসভা হয়েছে। ৬০ শতাংশ সদস্য নবায়ন হয়ে গেছে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই সব ওয়ার্ড ও থানা সম্মেলন শেষ করা সম্ভব বলে জানিয়েছেন সংগঠনটির সভাপতি শেখ বজলুর রহমান। জানতে চাইলে তিনি ভোরের কাগজকে বলেন, সদস্য নবায়ন ও সংগ্রহ করার জন্য কমিটি করা হয়েছে। ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে কর্মিসভা হবে। অনুপ্রবেশকারীদের প্রতি কঠোর নজরদারি থাকবে। এদিকে ঢাকা মহানগর দক্ষিণে ৭৫টি ওয়ার্ড ও ২৪টি থানা রয়েছে। সম্মেলন কবে শুরু হবে এমন প্রশ্নের জবাবে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবীর ভোরের কাগজকে বলেন, মহানগর দক্ষিণের ৮ টি সংসদীয় এলাকার প্রতিটি ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে সদস্য সংগ্রহ শুরু হয়েছে। এরপরই হবে সম্মেলন।

কোনোভাবেই যেন দলে বিএনপি-জামায়াতের অনুপ্রবেশ না ঘটে সেদিকে বিশেষ নজর রয়েছে। সেইসঙ্গে সুবিধাভোগী, ধান্দাবাজরা যেন নৌকায় ঠাঁই না পায় সেজন্য কঠোর বার্তা রয়েছে। দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ একটি বড় সংগঠন। কোন্দল থাকবেই। এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে দল ক্ষমতায়। ফলে মান-অভিমান রয়েছে। কোন্দল মেটাতে আমরা সবসময় সচেষ্ট। কমিটিতে দক্ষ, ত্যাগীদের মূল্যায়ন করা হবে।

কোথাও নেই ‘ঢাকা’ জেলা : ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ দুই মহানগরীর বাইরে ঢাকা জেলা কমিটি নামে একটি কমিটি রয়েছে। কিন্তু রাজনীতির মাঠে কোথাও নেই ‘ঢাকা’ জেলা। জানা গেছে, ২০১৪ সালের ২১ ডিসেম্বর সাভারের অধরচন্দ্র উচ্চবিদ্যালয় মাঠে আওয়ামী লীগের ঢাকা জেলা কমিটির ত্রিবার্ষিক সম্মেলন হয়। সমঝোতার মাধ্যমে বেনজির আহমেদ সভাপতি ও মাহবুবুর রহমান সাধারণ সম্পাদক হন। এর ২১ মাস পর ২০১৬ সালের ১ সেপ্টেম্বর পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। এদিকে ঢাকা জেলার ধামরাইয়ে সর্বশেষ সম্মেলন হয়েছে ২০১৪ সালে। দোহারে ২০০২ সালের পর আর সম্মেলন হয়নি। ২০ বছর ধরে আহ্বায়ক কমিটি দিয়েই চলছে কেরানীগঞ্জের আওয়ামী লীগের রাজনীতি।

এক কমিটিতেই দুই যুগ! : কিশোরগঞ্জ পৌর আওয়ামী লীগের মেয়াদ ২৩ বছর আগে পার হয়েছে। সেখানে ২৫ বছর আগে ১৯৯৫ সালে সর্বশেষ সম্মেলন হয়েছিল। ২৪ বছর আগে সর্বশেষ ১৯৯৭ সালের ২ এপ্রিল সম্মেলন হয়েছিল কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলায়। একই বছরের ২০ সেপ্টেম্বর সম্মেলন হয়েছে কটিয়াদী উপজেলায়। নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থানার সবশেষ সম্মেলন হয়েছিল ১৮ বছর আগে ২০০৩ সালের ২১ নভেম্বর। ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার সম্মেলন হয় ১৭ বছর আগে ২০০৪ সালের ৫ নভেম্বর। মেয়াদোত্তীর্ণ জেলাগুলোর মধ্যে সবশেষ সম্মেলন হয়েছে ২০১৫ সালের ১৪ জানুয়ারি নরসিংদী, ১৭ জানুয়ারি মানিকগঞ্জ, ১৮ অক্টোবর টাঙ্গাইল, ১১ নভেম্বর গোপালগঞ্জ, ১২ নভেম্বর রাজবাড়ী, ২০১৬ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি কিশোরগঞ্জ ও ১৩ অক্টোবর গাজীপুর।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App