×

মুক্তচিন্তা

শিক্ষা খাতের পরবর্তী চ্যালেঞ্জগুলো নিয়ে ভাবতে হবে!

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০১:৫০ এএম

করোনা মহামারির কারণে গত দেড় বছর ধরে বন্ধ ছিল স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষা ক্ষেত্রে বড় ধরনের ধাক্কা লেগেছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। বিশেষজ্ঞদের মতে, করোনায় শিক্ষার ক্ষতি হয়েছে সব থেকে বেশি। শিক্ষার্থীদের মানসিক অবস্থারও পরিবর্তন হয়েছে। অনেকেই ঝুঁকে পড়েছে মোবাইল ও ইন্টারনেটের প্রতি। তবে আশার কথা হচ্ছে দীর্ঘ দেড় বছর পর এ মাসের ১২ তারিখ খুলেছে স্কুল ও কলেজ। প্রাথমিকভাবে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের প্রতিদিন ক্লাস থাকলেও অন্যান্য শ্রেণির ক্ষেত্রে প্রতি সপ্তাহে একদিন করে ক্লাস। দীর্ঘদিন পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার আনন্দও দেখা যাচ্ছে শিক্ষার্থীদের মধ্যে। স্কুলে ফিরতে পেরে শিক্ষক শিক্ষার্থীরাও খুশি। তবে শ্রেণিকক্ষে কিংবা শ্রেণিকক্ষের বাইরে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসা-যাওয়ার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি মানানোর বিষয়ে অভিভাবকদের নিতে হবে বাড়তি ভূমিকা। স্কুল-কলেজ খুললেও সরকার ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের জন্য সামনে রয়েছে বেশকিছু চ্যালেঞ্জ! বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রমে ফিরিয়ে নিয়ে আসাই হবে বড় চ্যালেঞ্জ। করোনা মহামারি পরে আবারো বেড়ে গেলে করণীয় কী হবে তা এখন থেকেই ভাবতে হবে, কারণ গত দেড় বছরে বিভিন্ন সময়ে অনলাইন ক্লাস কিংবা অ্যাসাইনমেন্টের যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল তা খুব বেশি কাজে আসেনি বলে মনে করছেন শিক্ষাবিদরা। করোনা মহামারির পরিপ্রেক্ষিতে দীর্ঘদিন ক্লাস কার্যক্রম বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের অটোপাস দেয়ার বিকল্প যদিও ছিল না, তারপরও বলতে হয় এই অটোপাসও শিক্ষার্থীদের হয়তো কোনো কাজে আসবে না। যেহেতু ২০২০ সালের মার্চ মাসে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়, সেক্ষেত্রে ওই বছরের নির্দিষ্ট ক্লাসের বইগুলো শেষ না করেই পরের শ্রেণিতে অটোপাস দেয়া এবং এ বছরও প্রায় ৯ মাস অতিবাহিত হয়ে যাওয়ায় এই দুই শ্রেণির বইগুলো অধরাই থেকে যাচ্ছে শিক্ষার্থীদের। অর্থাৎ কোনো শিক্ষার্থী করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র ছিল, তার জন্য পঞ্চম শ্রেণি ও ষষ্ঠ শ্রেণির বইগুলো প্রায় অদেখাই থেকে যাচ্ছে। এ রকম সমস্যায় পড়তে যাচ্ছে সব শিক্ষার্থীকে। যদিও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত হচ্ছে কারিকুলামের যে অংশটুকু না জানলেই নয়, কেবল সে অংশটুকুই শিক্ষার্থীদের সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত থাকবে। অনেক সচেতন অভিভাবকই হয়তো তার সন্তানদের কথা চিন্তা করে প্রাইভেট টিউটরের ব্যবস্থা করেছিলেন, তবে এখানেও একটা বৈষম্য তৈরি হয়ে যাচ্ছে, যেহেতু গ্রামের অনেক অভিভাবকই অসচেতন কিংবা তাদের আর্থিক অবস্থা ভালো না, এরপর আবার করোনা সংক্রমণ ও লকডাউনে আয়-রোজগার কমে যাওয়ার বিষয় তো থাকছেই, তাদের সন্তানরা কিন্তু অন্যদের মতো সেই সুযোগটা পায়নি। এমনকি এদের অনেকেরই স্কুল-কলেজ থেকে ঝরে পড়ার আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে! ব্যক্তি মালিকানাধীন ও বেসরকারি উদ্যোগে পরিচালিত অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গিয়েছে। শিক্ষকদের বেতন দিতে না পারা, বাড়ি ভাড়া বকেয়া ইত্যাদি কারণে বন্ধ হয়ে গেছে অনেকগুলো প্রতিষ্ঠান। এতে সমস্যায় পড়তে যাচ্ছে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তিকৃত শিক্ষার্থীরা। এদের ব্যাপারেও সরকারকে ভাবতে হবে। একটি জাতীয় দৈনিকের তথ্যমতে দেশের বিভিন্ন স্থানে গড়ে ওঠা কিন্ডারগার্টেন, প্রি-প্রাইমারি, প্রি-ক্যাডেট ও প্রিপারেটরি স্কুলগুলোর ১০ লক্ষাধিক শিক্ষক-কর্মচারী মানবেতর জীবনযাপন করছেন। করোনার কারণে শিক্ষার্থীরা পড়তে যাচ্ছে সেশনজটে। সেশনজট কমিয়ে আনা হবে আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ। দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকা, সময়মতো এসএসসি, এইচএসসি পরীক্ষা না হওয়া কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সময়মতো ভর্তি পরীক্ষা না হওয়ায় সেশনজট যে বৃদ্ধি পাবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা একই সেমিস্টারে আছে দীর্ঘদিন থেকে, তাদের জন্য সঠিক পরিকল্পনা না থাকলে পরবর্তী সেশনজট আরো প্রকট আকার ধারণ করতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খোলার পর বন্ধের দিনগুলোতেও ক্লাস কার্যক্রম চালানো যেতে পারে। যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে বছরে দুটি করে সেমিস্টার হয় তারা চাইলে প্রতি সেমিস্টারে কোর্স কারিকুলামে কিছুটা পরিবর্তন এনে সেমিস্টারগুলো ৪ মাস করে বছরে তিনটি সেমিস্টার শেষ করে দ্রুত এই সময়টা কমিয়ে আনতে পারে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ে সেশনজট ও ক্ষতি হওয়া সময়ের কিছুটা হলেও পূরণ হতে পারে। শিক্ষার যে ক্ষতি হয়েছে সেই ক্ষতি হয়তো অপূরণীয়, তবে সঠিক ও কার্যকর পরিকল্পনা গ্রহণ করতে পারলে সেই ক্ষতি কমিয়ে আনা সম্ভব। কে এম মাসুম বিল্লাহ দুমকি, পটুয়াখালী। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App