×

মুক্তচিন্তা

টাইমস, টেলিগ্রাফ ও রেডিও প্রাগের একাত্তর প্রতিবেদন

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০১:৫২ এএম

একাত্তরের এপ্রিল। লন্ডন টাইমস-এর প্রতিবেদক লিখেছেন, প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের ঢাকা ত্যাগের পর পাকিস্তানের দুই ভাগের ঐক্য সংহত করতে আরও ১০০০০ সৈন্য পূর্বাঞ্চলে পাঠানো হয়েছে। সরকারি অফিস খোলা, তবে ‘ফিস ফিস’-এর চেয়ে জোর শব্দে কেউ কথা বলছেন না, তবুও মনে হচ্ছে পাকিস্তান নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে। আগস্টে সরজমিন দেখে ক্লেয়ার হোলিংওয়ার্থ টেলিগ্রাফে লিখেছেন, দুর্ভিক্ষ আসন্ন। বন্যায় তলিয়ে গেল লাখ লাখ একর জমি। চেকোসেøাভাকিয়ার রেডিও প্রাগ সম্প্রচার করেছে একটি দীর্ঘ বিশ্লেষণধর্মী প্রতিবেদন। মস্কো-দিল্লি সম্পর্কের নৈকট্যে নতুন রাষ্ট্রের অভ্যুদ্বয় সহজ হবে- এই ইঙ্গিত দিয়েছে। হাজার হাজার আতঙ্কিত মানুষ ঢাকা ছেড়ে পালাচ্ছে লন্ডনের দৈনিক দ্য টাইমস-এর প্রতিবেদনটি লিখেছেন ডেনিস নিল্ড, প্রকাশিত হয়েছে ১৩ এপ্রিল ১৯৭১: ঢাকা, ১১ এপ্রিল : সবুজ ও সাদা পাকিস্তানি পতাকার অরণ্য আজ সন্ত্রস্ত শহরের বিনীত বাড়িঘরের ওপর। সাড়ে সাত কোটি বাঙালির প্রত্যাশিত স্বাধীন বাংলাদেশের যে পতাকা উড়ানো হয়েছিল তা নামানো কিংবা আগুনে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। এরকম একটি পতাকা প্রদর্শনের অপরাধে সংক্ষিপ্ত বিচারে এমনকি জীবন চলে যাওয়ার ঝুঁকিও রয়েছে। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের সৈন্যরা জিপ ও সাঁজোয়া ট্রাকে শহরে পেট্রল দিচ্ছে, তাদের সাব মেশিনগান সব সময়ই প্রস্তুত। শ্রমিক ঘনবসতি এলাকায় তারা যখন টহল দেয় তারা এগোয় কালো ভষ্ম আর পোড়া বাঁশের গুঁড়ির পাশ দিয়ে। ২৫ মার্চ রাতে আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনকে গুঁড়িয়ে দিতে সেনাবাহিনী যখন ঝাঁপিয়ে পড়েছে এই কুঁড়েঘরগুলো দেশলাইর কাঠির মতো জ¦লে উঠেছে। ঢাকায় অবস্থানরত কূটনীতিবিদরা মনে করেন পূর্ণ প্রস্তুতি নেয়া এই আক্রমণে ৬০০০ মানুষ হত্যা করা হয়েছে। এখনো সেনাবাহিনী যখন আওয়ামী লীগ কর্মকর্তা, বুদ্ধিজীবী এবং বিশিষ্ট বাঙালিদের ধরে আনতে যায় রাইফেলের গুলির শব্দে রাতের নির্জনতায় ছেদ পড়ে। একজন পশ্চিমা কূটনীতিবিদ বললেন, ‘এটা গেস্টাপো শাসন, সেনাবাহিনী গণহত্যা চালাচ্ছে। পশ্চিম পাকিস্তানের অবাঙালিরা যখন সমানে লুটতরাজ করে যাচ্ছে সেনাবাহিনী অন্যদিকে চোখ ফিরিয়ে রাখছে- এটা এখন নিত্যকার ঘটনা। হাজার হাজার পরিবার এখনো শহর ছেড়ে নিজ গ্রামের দিকে পালিয়ে যাচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ। ছাত্রাবাসগুলো সহিংসতার জঞ্জাল ও বুলেটবিদ্ধ অবয়ব নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষকরা মনে করেন ছাত্ররা যখন সেনাবাহিনীর শহর দখল প্রতিহত করতে চেষ্টা করেছে তখন তাদের গুলিতে ৩০০ থেকে ৫০০ ছাত্র নিহত হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি- তারা দেখেছেন বহুসংখ্যক ছাত্রকে দেয়ালের সঙ্গে লাইন ধরে দাঁড় করিয়ে মেশিনগানের গুলিতে ঝাঁঝরা করে ফেলা হয়েছে। অন্তত আটজন প্রখ্যাত অধ্যাপককে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্ট ও পূর্ব পাকিস্তান রাইফেলের সঙ্গে পাকিস্তানি সৈন্যদের প্রতিহত করার লড়াইয়ের পর বেঁচে থাকা অবশিষ্ট পূর্ব পাকিস্তান পুলিশকে নিরস্ত্র করা হয়েছে। অনেককেই কারাবন্দি অবস্থায় রাখা হয়েছে। রাত ৯টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত ঢাকায় কারফিউ বহাল থাকছে। ক্ষেপা সৈন্য আর অবাঙালি লুটেরাদের গ্যাং এড়িয়ে চলতে অধিকাংশ পরিবার ঘরের বাতি নিভিয়ে সেখানেই চুপচাপ থেকে যায়। অত্যন্ত জ্যেষ্ঠ সিভিল সার্ভেন্টরা তাদের অফিসের ডেস্কে ফিরে এলেও তাদের কর্মচারীরা কাজ থেকে সরে আছেন। দোকান আবার খুলেছে, নিত্যকার জরুরি সেবা কার্যক্রম আবার চালু হয়েছে। এখনো যেসব এলাকা বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দখলে সেসব জায়গায় জোরদার অপারেশন চালাতে আকাশপথে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে সৈন্য আসা অব্যাহত রয়েছে। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের দেশকে অখণ্ড রাখার ঘোষণার পর প্রায় ১০,০০০ সৈন্য এসে পৌঁছেছে। এতে সৈন্য সংখ্যা ৩৫,০০০-এ পৌঁছেছে। ইতোপূর্বে প্রদেশে পশ্চিম পাকিস্তানি ৭০,০০০ সৈন্যের উপস্থিতির কথা বলা হয়েছে, তা অতিরঞ্জিত। রাস্তার ফেরিওয়ালারা পাকিস্তানি পতাকার রমরমা ব্যবসা করছে, এটা এক ধরনের আত্মসমর্পণের প্রতীক। ফিসফিসে কণ্ঠের চেয়ে একটু জোরে কেউ বাংলাদেশে কথা বলছে না। বাংলাদেশি এক কৃষক বলেছে, বন্দুকের ভয়ে আমাদের পাকিস্তানি পতাকা তুলে রাখতে হয় কিন্তু আমাদের অন্তরে ঠিকই বীর বাংলাদেশ। এসোসিয়েটেড প্রেস-এর মাইকেল হর্নবি লিখেছেন : পূর্ব বাংলার পশ্চিম সীমান্ত শহরে যেখানে বাংলাদেশ স্বাধীনতা আন্দোলনকারীদের কিছুটা নিয়ন্ত্রণ রয়েছে সেখানে পাকিস্তানি আর্মি ইউনিট চাপ প্রদান অব্যাহত রেখেছে। মনে হচ্ছে অল্পদিনের মধ্যে সেনাবাহিনী এ অঞ্চলে নিজেদের অবস্থান দৃঢ় করতে সমর্থ হবে, তাতে পূর্ব পাকিস্তানের প্রায় সব প্রধান শহরে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হবে। একাত্তরের শীতে দুর্ভিক্ষ অনিবার্য ঢাকা থেকে পাঠানো ক্লেয়ার হোলিংওয়ার্থ-এর ডেসপাচটি ৩১ আগস্ট ১৯৭১ লন্ডনের ডেইলি টেলিগ্রাফ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। পূর্ব পাকিস্তানের বিভিন্ন অংশে খাদ্যশস্যের ব্যাপক ঘাটতি দেখা দিয়েছে, শীত মওসুমে বিক্ষিপ্ত দুর্ভিক্ষ অনিবার্য হয়ে উঠেছে। গত ছ’মাস ধরে যেসব আমেরিকান ও বিদেশি বিশেষজ্ঞরা প্রদেশের খাদ্য ও পরিবহন পরিস্থিতি নিয়ে কাজ করছেন, এই আশঙ্কা তাদেরই। এই ঘাটতি কতটা দুর্ভিক্ষাবস্থার সৃষ্টি করবে তা নির্ভর করছে বিতরণ ব্যবস্থার দক্ষতার ওপর। পূর্ব পাকিস্তানের সামরিক গভর্নর লেফটেন্যান্ট জেনারেল টিক্কা খান জাতিসংঘের আওতায় কর্মরত বিভিন্ন বিদেশি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে খাদ্য বিতরণের অনুমতি না দেয়া বিদেশিরা তার ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে আছে। তিনি চান খাদ্যের মতো জরুরি রাজনৈতিক হাতিয়ারটি পাকিস্তান প্রশাসনের হাতেই থাকুক- যা স্বাভাবিকভাবে পশ্চিম পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে পরিচালিত হবে। সশস্ত্র স্বেচ্ছাসেবী এর মানে বাস্তবে খাদ্য বণ্টন করা হবে শান্তি কমিটি ও তাদের নিয়োজিত সশস্ত্র স্বেচ্ছাসেবীদের মাধ্যমে। হাতেগোনা কিছু সংখ্যক মানুষ শান্তি কমিটির সদস্য, তারা মুসলিম লীগেরও সদস্য, বর্তমানে নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তার ঢেউয়ে তারা রাজনৈতিকভাবে নিশ্চিহ্ন হওয়ার পথে। তবে তাদের অধিকাংশই সুবিধাবাদী, পশ্চিম পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সহায়তায় তারা খুশি হয়ে স্থানীয় ক্ষমতায় ফিরে আসার চেষ্টা করছে। যে শান্তি কমিটি সশস্ত্র স্বেচ্ছাসেবী, হোমগার্ড রাজাকার নিয়োগ দিচ্ছে তারাও শঠতা ও সহিংসতার জন্য কুখ্যাত হয়ে উঠছে। আশঙ্কাটি যথার্থ যারা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীতে সহযোগিতা করছে তারা অন্যদের তুলনায় বিশেষ করে যারা স্বাধীন পূর্ব পাকিস্তান চায় তাদের চেয়ে বেশি পরিমাণ চাল ও গমের বরাদ্দ পাচ্ছে। জাতিসংঘের কর্মকর্তা বাগাত আল তাবিল ঘটনাস্থলে আছেন, তিনি জানিয়েছেন সঠিক ক্ষুধার্তের মুখে যাতে খাদ্য পৌঁছে সে জন্য শিগগিরই ৭৩ জন কর্মী খাদ্য বিতরণ তত্ত্বাবধানে যোগ দেবে। কিন্তু পূর্ব পাকিস্তানে বসবাস করা সাড়ে ছয় থেকে সাত কোটি মানুষকে খাওয়ার মতো পর্যাপ্ত খাদ্য সেখানে নেই। জাতিসংঘের জিপ বেদখল কোনো কোনো এলাকায় ইউনিসেফের জিপ নিয়ে যাওয়ার পর এখনো সেনাবাহিনীর ব্যবহারেই রয়েছে। ২৫ মার্চের পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির পুনরুদ্ধারের দোহাই দিয়ে তারা এই গাড়িগুলো নিয়ে যায়, সামান্য কয়েকটি কেবল কর্তৃপক্ষের কাছে ফেরত দেয়া হয়েছে। চট্টগ্রাম ও খুলনার গুদামে যথেষ্ট চাল রয়েছে; যুক্তরাষ্ট্র থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ এবং চীন থেকেও কিছু পরিমাণ খাদ্যশস্য পূর্ব পাকিস্তানের দিকে পাঠানো হয়েছে। নদীপথে স্থানীয় বন্দর থেকে খাদ্য সরবরাহ করার জন্য নৌকা ক্রয় ও ভাড়া করা হয়েছে। কিন্তু অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা পরিস্থিতির উপর্যুপরি অবনতি ঘটেছে। মুক্তিফৌজের গেরিলা যোদ্ধারা বিভিন্ন রাস্তায় মাইন পুঁতে রেখেছে, পণ্যবাহী নৌকা আটকে ফেলছে; রাতের বেলা নৌপথে খাদ্যশস্য পরিবহন অসম্ভব হয়ে উঠেছে, এমনকি দিনের বেলাতে তা বিপজ্জনক। সাম্প্রতিক ভয়াবহ বন্যা দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা ও বিপদ বাড়িয়ে তুলেছে। ২৬ লাখ একর জমির ধান বন্যায় তলিয়ে গেছে। ১৯৭১-এর চেকোসেøাভাকিয়া এখন চেক রিপাবলিক ও সেøাভাকিয়া। সোভিয়েত ব্লকের দেশ হিসেবে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে সমর্থন জুগিয়েছে। রেডিও প্রাগের আফ্রো-এশিয়ান সার্ভিস থেকে ১৪ জুন ১৯৭১ প্রচারিত মন্তব্য প্রতিবেদন যখন রাষ্ট্রপ্রধান নিজেই স্বীকার করে নিয়েছেন যে, পূর্ব পাকিস্তানে অভিযান চালনাকালে তার সেনাবাহিনীর আচরণ ছিল ‘রাফলি’- খারাপ, এটাই নিশ্চিত করে পৃথিবীর এ প্রান্তে প্রকাশিত পূর্ব পাকিস্তান সংক্রান্ত প্রতিবেদনগুলো সত্য। তার এই অপ্রত্যাশিত স্বীকারোক্তি বাদ দিলেও পূর্ব পাকিস্তান থেকে ভারতে শরণার্থীর অবিরাম প্রবাহই বলে দেয় আধুনিক ইতিহাসের সবচেয়ে ট্র্যাজিক ঘটনা সেখানে সংঘটিত হচ্ছে। রাজনৈতিক অভিযাত্রী বাদ দিলে কারো পক্ষে তার স্বদেশ ছেড়ে যাওয়া সহজ কাজ নয়। অবশ্যই অনিবার্য কোনো কারণে তাদের দেশ ছাড়তে হয়। পূর্ব পাকিস্তানে আওয়ামী লীগের অসাধারণ নির্বাচন বিজয়ের পর ৫৫ লাখ শরণার্থীকে যদি দেশ ছেড়ে অন্য দেশে আশ্রয় নিতে হয় তাই পরিস্থিতির ভয়াবহতার সাক্ষ্য দেয়। আওয়ামী লীগ পূর্ব পাকিস্তানে প্রায় সব ভোটই পেয়েছে আর গোটা পাকিস্তানে অর্ধেকের বেশি- কারণ তারা জনগণের দাবি ও অভিযোগের কথা তুলে ধরতে পেরেছিল। তাদের প্রধান নির্বাচনী সেøাগানের মধ্যে ছিল জাতীয় আয়ের সুষম বণ্টন এবং অধিকতর স্বায়ত্তশাসন। দুটো বিষয়েই পার্টির নেতৃবৃন্দের বাস্তব দৃষ্টিভঙ্গি ছিল- পূর্ব পাকিস্তান দেশের জনসংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ এবং রাষ্ট্রীয় খাজাঞ্জিখানায় তাদেরই অর্থনৈতিক অবদান সবচেয়ে বেশি। যদিও পার্টির প্রান্তবর্তীদের মধ্যে পূর্ণ স্বাধীনতার দাবিদার কিছু চরমপন্থি রয়েছে, আওয়ামী লীগকে পূর্ব পাকিস্তানের জন্য বিচ্ছিন্নতাবাদী অভিহিত করার সুযোগ নেই। পূর্ব পাকিস্তানের ন্যায্য দাবিকে পশ্চিম পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ যখন পাকিস্তানের অখণ্ডতার প্রতি হুমকি হিসেবে বিবেচনা করতে শুরু করল তখনই ঘটনাপ্রবাহের দুর্ভাগ্যজনক মোড় নিতে দেখা গেল। ২৫ মার্চ তারা রাজনৈতিক যুক্তির সামরিক জবাব দিতে শুরু করল। তারপর যা ঘটল তাতে আলোচনার মাধ্যমে নিষ্পত্তির যে সদিচ্ছা তা তিরোহিত হলো। তাদের প্রতিহত করতে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের অসমন্বিত প্রতিরোধ আন্দোলন শুরু হয়ে গেল, মরিয়া হয়ে স্বাধীনতার ডাক দিতে হলো এবং সাধারণ মানুষ সৈন্যবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামল, যাদের সবাই পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়োগপ্রাপ্ত সৈনিক। এটাও সত্য শরণার্থীদের মধ্যে ১০ লাখ মুসলমানও রয়েছে, কাজেই ধর্মের কারণে তেমন ছাড় দেয়নি সংখ্যাই তা বলে দেয়। শরণার্থীরা নিজের বাড়িতে থাকার ঝুঁকি না নিয়ে অনিশ্চিত অস্তিত্ব, ক্ষুধা ও কলেরার ঝুঁকির মধ্যে ভারতের মাটিতে শরণার্থী শিবিরের জীবন বেছে নিয়েছে, এটা ট্র্যাজেডির একটি দিক মাত্র। কিন্তু আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে তার চেয়ে বেশি ভয়ঙ্কর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধের উত্তেজনা। ভারত ও পাকিস্তানের সীমান্তরক্ষীদের গুলি বিনিময় একটি অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সমস্যাকে ভয়ঙ্কর এক আন্তর্জাতিক যুদ্ধে পরিণত করতে পারে। জাতিসংঘের মহাসচিব উথান্ট আন্তর্জাতিক ত্রাণ সমন্বয়ের যে উদ্যোগ নিয়েছেন তাতে শরণার্থীদের আশু সমস্যা কিছুটা লাঘব হবে। ত্রাণ সহায়তার লক্ষ্য সংকটের ফলে সৃষ্ট পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের উদ্যোগ, কিন্তু সংকটের কারণ, উত্তেজনা ও ভোগান্তির নিরসন করে না। চেকোসেøাভাকিয়ার কমিউনিস্ট পার্টির দৈনিক মুখপাত্র রুদে প্রাভো আজ লিখেছে, ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে পরিস্থিতি অত্যন্ত গুরুতর…একমাত্র সমাধান হচ্ছে শরণার্থীদের নিরাপদে বাড়ি ফেরা। গত সপ্তাহে একটি অদাপ্তরিক সফরে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শরণ সিং মস্কো সফরে এসে সৌভিয়েত প্রধানমন্ত্রী আলেক্সি কোসিগিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন- সোভিয়েত সরকারও মনে করে সমস্যা সমাধানে পাকিস্তান সরকারকেই আশু পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। স্মরণ রাখা ভালো- পাঁচ বছর আগে তাসখন্দ চুক্তির মাধ্যমে ভারত-পাকিস্তান দ্ব›দ্ব নিরসন করতে সোভিয়েত নেতা বিশেষ ভূমিকা রেখেছিলেন। তিনি পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষকে আজ আবার সতর্ক করে দিয়েছেন। ড. এম এ মোমেন : সাবেক সরকারি চাকুরে, নন-ফিকশন ও কলাম লেখক।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App