×

মুক্তচিন্তা

ওজোনস্তর রক্ষা করুন পৃথিবীতে প্রাণ বাঁচান

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৫:০৪ এএম

ওজোনস্তর রক্ষা করুন পৃথিবীতে প্রাণ বাঁচান
জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে পৃথিবীতে শিল্পায়ন, নগরায়ণ বাড়তে থাকে। বাড়তে থাকে রাসায়নিক বহুমাত্রিক বস্তুসামগ্রী। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ওজোনস্তর ক্ষয় যেন বর্তমান সময়ে মহামারি আকার ধারণ করেছে। আমাদের বসবাস করা পৃথিবী পৃষ্ঠ থেকে প্রায় ২০-৩০ কি.মি. উপরে অবস্থিত এই ওজোনস্তর পৃথিবীর প্রতিরক্ষা ছাতা হিসেবে কাজ করে। কিন্তু বায়ুমণ্ডলে ক্রমাগত সিএফসি গ্যাস বৃদ্ধির ফলে ওজোনস্তর ক্ষয় হচ্ছে। শিল্পবিপ্লবের জন্য ব্যবহৃত রাসায়নিক থেকে নির্গত হচ্ছে সিএফসি। এই সিএফসিগুলো ধোঁয়া সৃষ্টিতে, বিভিন্ন শীতলীকরণ বস্তুতে, ফল ও সবজির কীটনাশক রোধে, তাপমাত্রা নিরোধক হিসেবে বেশি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। পৃথিবীর ছাতা-খ্যাত ওজোনস্তর সংরক্ষণ করা না গেলে সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মির প্রভাবে মানুষের ত্বকে ক্যান্সার, চর্মরোগ, চোখে ছানি পড়াসহ সমগ্র জীবনকে ধ্বংস করতে পারে বলেন আশঙ্কা রয়েছে। ভিটামিন-ডি-এর উৎপাদন বৃদ্ধি করে দেবে। জীবের প্রজনন ক্ষমতাকে নষ্ট করে দেবে। প্রাণের স্পন্দনের একমাত্র গ্রহ পৃথিবীকে ক্রমান্বয়ে থামিয়ে দেবে। এ পরিস্থিতি এখন বাংলাদেশসহ বিশ্বের সব দেশকেই ভাবিয়ে তুলছে। প্রসঙ্গত সত্তরের দশকে প্রথমবার ওজোনস্তর ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার বিষয়টি ধরা পড়ে। উল্লেখ্য, ১৯৯০-এর দশকের শেষ দিকে সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় ছিল পৃথিবী সুরক্ষাকারী এই ওজোনস্তর। এরই প্রেক্ষাপটে, ১৯৮৭ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর বায়ুমণ্ডলের ওজোনস্তর ক্ষয়ের জন্য দায়ী দ্রব্যগুলোর ব্যবহার সীমিত করার লক্ষ্যে মন্ট্রিল প্রটোকল গৃহীত হয়। দীর্ঘদিন ধরে চলমান এ মহাসংকট সম্পর্কে বিশ্বব্যাপী গণসচেতনতা তৈরিতে প্রতি বছর ১৬ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক ওজোনস্তর দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। মন্ট্রিল প্রটোকলে স্বাক্ষরকারী অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও হাত গুটিয়ে বসে নেই। নিয়েছে ওজোনস্তর সংরক্ষণের কার্যকরী সব পদক্ষেপ। এয়ার কন্ডিশনার, মশা তাড়ানোর স্প্রে, ইনহেলারসহ বিভিন্ন যন্ত্রে সিএফসির বদলে এইচএফসি ব্যবহার শুরু করেছে বাংলাদেশ। ইতোমধ্যে ওজোনস্তর সুরক্ষায় বাংলাদেশের পরিবেশ অধিদপ্তর পাঁচটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। সরকারি জরিপ মোতাবেক, ২০১০ সাল থেকেই সিএফসি এখন শূন্যের কোটায়। বলাবাহুল্য, ওষুধ শিল্পে মিটার ডোজ ইনহেলার প্রস্তুতিতে সিএফসি সম্পূর্ণরূপে ফেজ আউট করা হয়েছে। আশার কথা হলো, এইচসিএফসি ফেজ আউটের জন্য এমন সব বিকল্প প্রযুক্তিকে উৎসাহিত করা হচ্ছে, যা একই সঙ্গে ওজোনস্তর এবং জলবায়ুবান্ধব হবে। ওজোনস্তর রক্ষায় টেকসই ভূমিকা রেখে জাতিসংঘ পরিবেশ কর্তৃক বাংলাদেশ এ পর্যন্ত ৩ বার পুরস্কৃত ও প্রশংসিত হয়েছে। করোনা মহামারির কারণে যখন সারাবিশ্বে অর্থনৈতিক কার্যক্রমে স্থবিরতা নেমে আসে তখন কার্বন নিঃসরণ কিছুটা কমেছে। কিন্তু দুর্ভাবনার বিষয়, ওজোনস্তর সংরক্ষণের ৩৬ বছর হতে চললেও পৃথিবী ধ্বংসের আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। জাতিসংঘের একটি প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, প্রতি দশকে ৪ শতাংশ হারে ওজোনস্তর ক্ষয় হচ্ছে। টঘউচ, টঘঊচ প্রভৃতি আন্তর্জাতিক সংস্থার সরাসরি পৃষ্ঠপোষকতা থাকা সত্ত্বেও উন্নয়নশীল ও উন্নত অনেক দেশেই শিল্পসামগ্রী এবং বিভিন্ন ম্যানুফেকচারিং-এ সিএফসি প্রচুর পরিমাণে ব্যবহৃত হচ্ছে। গবেষকদের মতে, যদি মন্ট্রিল প্রটোকল অনুসৃত না হতো, তবে ২০৫০ সাল নাগাদ ওজোনস্তর সে সময়ের তুলনায় ১০ গুণ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতো। প্রাণের এ পৃথিবী পরিণত হতো মৃত্যুপুরীতে। তাই ওজোনস্তর ক্ষয় এখনই রোধ না করলে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হবে। ভবিষ্যৎকে সিএফসি মুক্ত রাখতে ক্ষতিকর সব রাসায়নিকের ব্যবহার কমানো এখন সময়ের দাবি। সর্বোপরি, পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর ও ওজোনস্তর মেরামতে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে বাংলাদেশও ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবে- কোভিড-১৯ মহামারির এই সময় এমনটি অঙ্গীকার হোক। সাইদুন্নিছা তোহ্ফা শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম কলেজ। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App