×

সারাদেশ

মিয়ানমারের অনুমোদন মেলেনি : কক্সবাজার-গুনদুম রেলপথ নির্মাণ অনিশ্চিত!

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৮:৪৫ এএম

দোহাজারী থেকে গুনদুম পর্যন্ত রেলপথ আপাতত হচ্ছে না। মিয়ানমার সরকারের অনুমতি না মেলায় অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে প্রকল্পটি। বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারের গুনদুম হয়ে চীন পর্যন্ত ট্রান্সএশিয়ান রেলরুট বাস্তবায়নের আলোচনা ও সম্ভাব্যতা সমীক্ষা হয় ২০০১ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে। আবার ২০০৯ সালে শেখ হাসিনার সরকার পুনরায় ক্ষমতায় আসার পর চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার এবং কক্সবাজার থেকে রামু হয়ে গুনদুম পর্যন্ত রেল লাইনের অবকাঠামো নির্মাণের অনুমোদন দেয় সরকার। সম্ভাব্যতা যাচাই, রেলরুট নিয়ে আন্তঃদেশীয় সমীক্ষা, রেলপথ নির্মাণের পরিকল্পনা, সময়কাল প্রভৃতি বিষয়ে মিয়ানমার ও চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের ত্রিপক্ষীয় আলোচনা হয়। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মিয়ানমারের সঙ্গে এ বিষয়ে পরবর্তী সময়ে অনুমতি চেয়ে চিঠি দেয় এবং দ্বিপক্ষীয় আলোচনাও করে। কিন্তু রোহিঙ্গা ইস্যু ও মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে দেশটি এখনো রেলপথ নির্মাণের অনুমতি দেয়নি। সে দেশে রেলপথ নির্মাণের কোনো লক্ষণও নেই।

রেল সূত্রে জানা গেছে, ২০১০ সালে থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের এসক্যাপে (এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অর্থনৈতিক ও সামাজিক কমিশন) বাংলাদেশ ট্রান্সএশিয়ান রেলরুট স্থাপনের প্রস্তাব তোলে। যা গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা হয় এবং এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নয়নে এ রেলরুট খুবই গুরুত্ব বহন করবে বলে এসক্যাপভুক্ত দেশগুলো আশা প্রকাশ করে। যার ফলশ্রæতিতে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বেশ কয়েকটি রেলরুট পুনঃসংযোগ হয়। পরবর্তী সময়ে চীনের সঙ্গে বাণিজ্য সম্প্রসারণের লক্ষ্যে বাংলাদেশের কক্সবাজার-গুনদুম থেকে মিয়ানমার হয়ে চীন পর্যন্ত রেল নেটওয়ার্কের প্রস্তাবনা দেয় বাংলাদেশ। এর ফলে মিয়ানমার ও চীনের সঙ্গে সহজে আমদানি-রপ্তানি সম্ভব হবে বলে আশা করা হয়। এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় লিখিত প্রস্তাব পেশ করে মিয়ানমারের কাছে। যার কোনো প্রতিক্রিয়া বা অনুমতি এখনো পর্যন্ত না দেওয়ায় রেলরুটটি ঝুলে আছে।

রেল সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পটি মূলত দোহাজারী-কক্সবাজার-রামু-গুনদুম রেল প্রকল্প হলেও ২০১৭ সালে দোহাজারী-কক্সবাজার-রামু পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণের জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে রেলওয়ের চুক্তি হয়। এর মধ্যে প্রথম প্যাকেজ দোহাজারী থেকে চকরিয়া আর দ্বিতীয় প্যাকেজ চকরিয়া থেকে রামু-কক্সবাজার পর্যন্ত। প্রকল্পটির আওতায় দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০২ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণকাজ চলছে। একই সঙ্গে কাজ শুরুর কথা থাকলেও মিয়ানমারে অনুমতি না মেলায় তৃতীয় প্যাকেজের আওতায় রামু থেকে গুনদুম পর্যন্ত ২৮ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণের দরপত্রই আহ্বান করা হয়নি।

রেল সূত্র জানায়, ট্রান্সএশিয়ান রেলরুটের আওতায় মিয়ানমারের সঙ্গে রেল সংযোগ স্থাপনে দেশটির সীমান্তবর্তী এলাকা গুনদুম পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণের কথা ছিল। এ জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে মিয়ানমারের কাছে অনুমতি চাওয়া হয়। তারাও নিজ দেশে চীন পর্যন্ত রেল সংযোগ স্থাপন করবে- এমন কথা ছিল। তবে আপাতত দেশটি ট্রান্সএশিয়ান রেলরুটে যোগ দিতে কোনো ধরনের প্রকল্প নেয়নি। আদৌ বাংলাদেশ থেকে চীন পর্যন্ত রেলরুটে যুক্ত করা সম্ভব হবে কিনা তা নিয়েও সন্দিহান রেলওয়ে সংশ্লিষ্টরা। অসমাপ্ত অবস্থাতেই শেষ করতে হতে পারে দোহাজারী-কক্সবাজার-গুনদুম রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প।

এ বিষয়ে রেলওয়ের মহাপরিচালক ধীরেন্দ্র নাথ মজুমদার বলেন, আসলে এটি ট্রান্সএশিয়ান রেলরুট প্রকল্প। যা ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম-দোহাজারী হয়ে কক্সবাজার দিয়ে গুনদুম পর্যন্ত যাওয়ার কথা ছিল। গুনদুম একেবারে মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী এলাকা। ওই এলাকায় কাজ করতে দেশটির অনুমোদন দরকার। তাই রামু থেকে গুনদুম অংশের দরপত্র আহ্বানের আগে মিয়ানমারের অনুমোদন চাওয়া হয়েছিল। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তরফে এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হয়। এ নিয়ে অনেকবার মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের আলোচনাও হয়। তবে তারা এ বিষয়ে এখনো অনুমোদন দেয়নি। যার ফলে আমরাও গুনদুম সীমান্ত পর্যন্ত রেল নিয়ে যেতে পারছি না। যদি তারা অনুমোদন দেয় তবে ওই অংশের দরপত্র আহ্বান করা হবে, কাজ শুরু হবে- যা চীন পর্যন্ত যাবে। মিয়ানমার তার দেশের রেলপথ নির্মাণের কাজ সম্পন্ন করবে এমন কথা ছিল। তবে আপাতত কক্সবাজার থেকে গুনদুম অংশটুকুর টেন্ডার বা কাজ হচ্ছে না।

এবিষয়ে দোহাজারী-কক্সবাজার-রামু-গুনদুম রেল প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) মফিজুর রহমান বলেন, আমি মূলত দোহাজারী থেকে কক্সবাজার-রামু হয়ে মিয়ানমার সীমান্ত গুনদুম পর্যন্ত রেল প্রকল্পের দায়িত্বে আছি। তবে আপাতত দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেল প্রকল্পের কাজ শুরু করেছি। মিয়ানমার সীমান্তের গুনদুম পর্যন্ত রেললাইনের কাজ এখনো শুরু হয়নি। এটির জন্য কোনো টেন্ডারও হয়নি। তবে আমাদের দেশের অভ্যন্তরে গুনদুম পর্যন্ত কাজ করতে গেলে মিয়ানমারের অনুমতি প্রয়োজন কিনা আমি জানি না। এটি নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের বিষয়। তারা এটি ভাববেন। তিনি বলেন, আমরা যেভাবে কাজ শুরু করেছিলাম- তারপর রামু ক্যান্টনমেন্ট হলো; যার জন্য আমাদের প্রকল্পে কিছুট পরিবর্তন করেছি। আরো কিছু কারিগরি ব্যাপার আছে। আমাদের প্রাধান্য দোহাজারী থেকে সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার পর্যন্ত রেলপথ যত দ্রুত সম্ভব শেষ করা। সেটা আপাতত করছি। এছাড়া রামুতে ক্যান্টনমেন্ট হচ্ছে, সেখানে যাতে রেলপথে সেনাবাহিনীর গোলা বারুদ বা সমরাস্ত্র সরঞ্জাম লোড-আনলোড হতে পারে সেজন্য বিশেষ ব্যবস্থা রেখেছি। তবে গুনদুম পর্যন্ত তৃতীয় ফেজের টেন্ডার এখনো হয়নি, সঙ্গত কারণে কাজও শুরু হয়নি।

তথ্য মতে, ২০১০ সালে দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু থেকে মিয়ানমারের কাছে গুনদুম পর্যন্ত ১২৮ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণে ব্যয় ধরা হয় এক হাজার ৮৫২ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। তবে জমি অধিগ্রহণ ব্যয় বেড়ে যাওয়া, সংরক্ষিত বনাঞ্চলের জমি পাওয়া, ডুয়েলগেজ রেলপথ নির্মাণ ও হাতি চলাচলের নিরাপত্তা- প্রভৃতি কারণে ২০১৬ সালে বিস্তারিত নকশা প্রণয়নের জন্য প্রকল্পটি সংশোধন করা হয়। এতে প্রকল্প ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App