×

জাতীয়

এম এন লারমা ছিলেন নিপীড়িত মানুষের কণ্ঠস্বর, আলোচনায় বক্তারা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৯:২৮ পিএম

এম এন লারমা ছিলেন নিপীড়িত মানুষের কণ্ঠস্বর, আলোচনায় বক্তারা

এম এন লারমা

আমৃত্যু পাহাড়ি জনগোষ্ঠী মানুষের ন্যায্য অধিকারের জন্য লড়াই করেছিলেন মানবেন্দ্র নারায়ণ (এম এন লারমা) লারমা। তবে তিনি শুধু পাহাড়ের মানুষের নেতা ছিলেন না; তার সংগ্রাম ছিল দেশের সব নিপীড়িত মানুষের পক্ষে, শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে। বঞ্চনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তার আদর্শ তাই এখনো প্রেরণা হিসেবে কাজ করে।

বুধবার (১৫ সেপ্টেম্বর) সকালে বিপ্লবী মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার ৮২তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে এক অনলাইন আলোচনার আয়োজন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানটি বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের ফেসবুক পেইজ থেকে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং এর সঞ্চালনায় ও সভাপতিত্বে ওই অনলাইন আলোচনায় শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সহ সাধারণ সম্পাদক পল্লব চাকমা। ভার্চুয়াল আলোচনায় অন্যদের মধ্যে আলোচক হিসেবে যুক্ত ছিলেন বরেণ্যে রাজনীতিবিদ ও ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য, তত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও বিশিষ্ট মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল, পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সহ সভাপতি ও সাবেক সাংসদ ঊষাতন তালুকদার, কবি ও লেখক সোহরাব হাসান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক ড. মেসবাহ কামাল, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. রানাদাশ গুপ্ত, এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, আদিবাসী বিষয়ক সংসদীয় ককাসের টেকনোক্রেট সদস্য জান্নাত ই ফেরদৌসী, বিএনপিএস এর উপ-পরিচালক শাহানাজ সুমি, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সদস্য চঞ্চনা চাকমা, বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সাধরণ সম্পাদক অলিক মৃ প্রমূখ।

বক্তারা বলেছেন, মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা সকল আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন। তিনি ছিলেন নিপীড়িত মানুষের কণ্ঠস্বর।

পঙ্কজ ভট্টাচার্য বলেন, এম এন লারমা একজন ব্যতিক্রমধর্মী জাতীয় নেতা ছিলেন। তিনি সমগ্র জুম্ম জাতিকে সংগ্রামে উদ্বুদ্ধ হওয়ার পাশাপাশি দেশের গোটা বৃহৎ বাঙালি সমাজকেও প্রভাবিত করেছিল। একটি সমতাভিত্তিক সমাজ গড়তে নারীদেরকে সংগ্রামে উদ্বুদ্ধকরণের মধ্য দিয়ে তিনি গড়ে তুলেছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম মহিলা সমিতি।

সুলতানা কামাল বলেন, মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার আদর্শ ধারণ করে তরুণ প্রজন্মকে আরো বেশি উজ্জীবিত হতে হবে। এম এন লারমা নিপীড়িত মানুষের কণ্ঠস্বর ছিলেন। আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতির দাবি জানিয়ে তিনি আরো বলেন, আদিবাসী এদেশে সবচেয়ে পশ্চাৎপদ, সবচেয়ে অনগ্রগামী। তাই তাদেরকে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়া অত্যন্ত জুরুরী। এ কারণে মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা সকল মেহনতি মানুষের কথা সংবিধানে অর্ন্তভূক্তির জন্য স্বোচ্চারভাবে দাবি তুলেছিলেন।

রানাদাশ গুপ্ত বলেন, এদেশের মানবাধিকারের লড়াই যতদিন থাকবে ততদিন এমএন লারমা আমাদের মাঝে থাকবেন। তিনি ছিলেন নিপীড়িত মানুষের নেতা।

মেসবাহ কামাল বলেন, সারা বিশ্ব আধুনিকতার ৫০০ বছরে অতিক্রান্ত করছে। বিশ্বের বড় বড় রাষ্ট্রগুলো সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠির বৈচিত্র্যতাকে অস্বীকার করছে। বিশেষ করে আদিবাসীদের অধিকার ও তাদের বৈচিত্র্যতাকে অস্বীকার করা বৃহৎ রাষ্ট্রের কাছে এটা অভিশাপ বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষক। বাংলাদেশর ক্ষেত্রেও সেটা পুরোপরি লক্ষ্যনীয়। কেননা যে আশা আকাঙ্খা নিয়ে এদেশের আদিবাসীরা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল সে আশা আকাঙ্খা পুরোপুরি উপেক্ষিত।

সোহরাব হাসান বলেন, মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা একজন ভিন্ন প্রকৃতির নেতা ছিলেন। তিনি শুধু পাহাড়ী মানুষের অধিকারের কথা বলেননি, তিনি সকল জাতিসত্তার কথা বলেছেন। একটি সমতাভিত্তিক বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে এম এন লারমা সংগ্রাম করেছেন। পাশাপাশি আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন বলেও মন্তব্য করেছেন এই সাংবাদিক।

শামসুল হুদা বলেন, এদেশ বহু ভাষার, বহু বর্ণের, বহু জাতি ও বহু সংস্কৃতির বৈচিত্র্যপূর্ণ দেশ। স্বাধিনতার ৫০ বছরেও এদেশে আদিবাসীদের অধিকার স্বীকৃতি মেলেনি। এ কারনে এমএন লারমা সংবিধান রচনার প্রাক্কালে সকল মানুষের অধিকারের কথা সংবিধানে লিপিবদ্ধ করার দাবি জানিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রীর কাছে পার্বত্য চুক্তি পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের দাবি জানিয়ে ঊষাতন তালুকদার বলেন, প্রগতিশীল পরিবারের জন্ম নেয়া এই ক্ষণজন্মা মহাপুরুষটি ছিলেন প্রতিবাদী, সাহসী, সংগ্রামী, দৃঢ়চেতা ও বিচক্ষণ প্রতিভাবান। প্রতিবাদী ছিলেন বলে তিনিই প্রথম কাপ্তাই বাঁধের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ সংগ্রাম করেছিলেন। যার কারণে পাাকিস্তান সরকার কর্তৃক তিনি গ্রেপ্তার হন। কাপ্তাই বাধের ফলে ৫৪ হাজার একর ধানি জমি পানিতে তলিয়ে যায়, প্রায় ৬০ হাজার পাহাড়ী উদ্বাস্তু হয়ে পাশের দেশ অরুনাঞ্চলে নাগরিকত্বহীন অবস্থায় বসবাস করছেন। যা তাদেরকে এখনো সে দেশের নাগরিক হিসেবে স্বীকার করা হয়নি। ১৯৯৭ সালে সম্পাদিত পার্বত্য চুক্তি এখনো পুরোপুরি বাস্তবায়ন না হওয়ায় পাহাড়ীদের মধ্যে হতাশা ও উৎকন্ঠা বিরাজ করছে।

প্রসঙ্গত, এই মহান নেতা মানবেন্দ্র নারায়ন লারমা ১৯৩৯ সালের এই দিনে রাঙামাটি শহরের অনতিদূরে মহাপূরমে পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার উদ্যোগে ১৯৭২ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি গঠিত হয়। ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। ১৯৭৩ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App