×

সারাদেশ

মহারশি নদীর রাবারড্যামে ৫ হাজার কৃষক পরিবারের ভাগ্য বদল

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১২:১৪ পিএম

মহারশি নদীর রাবারড্যামে ৫ হাজার কৃষক পরিবারের ভাগ্য বদল

শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলা সীমান্তের মহারশি নদীর ওপর নির্মিত রাবারড্যাম। ছবি: ভোরের কাগজ

শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলা সীমান্তের মহারশি নদীর রাবারড্যামে ৫ হাজার কৃষক পরিবারের ভাগ্য বদলে গেছে। যুগযুগ ধরে যেসব জমিতে বোরো আবাদ হতো না, এখন সেসব জমিতে অনায়াসে বোরো আবাদ হচ্ছে। আর বোরো আবাদ করে গত ক'বছরেই ভাগ্য ফিরিয়েছেন শতশত কৃষক পরিবার।

কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর ও কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সেচ সংকটের অভাবে যুগযুগ ধরে ঝিনাইগাতী উপজেলার সীমান্তের নলকুড়া ও গৌরিপুর ইউনিয়নের ১৫টি গ্রামের শতশত কৃষক পরিবারের শতশত একর জমিতে ইরি-বোরো চাষ হতো না। এসব জমিতে বছরে শুধু আমনের এক ফসল ফলাতে হতো তাদের। বোরো মৌসুমে অনাবাদি হয়ে পরে থাকতে শতশত কৃষকের শতশত একর জমি।

কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এসব এলাকার মাটির নিচে প্রচুর পরিমানে পাথর থাকায় গভীর- অগভীর নলকূপ স্থাপন করা সম্ভব হতো না। ফলে এলাকার কৃষকরা তাদের জমিতে বোরো ফসল করতে না পারায় অতিকষ্টে দিনাতিপাত করার পাশাপাশি দিনেদিনে তারা ভূমিহীনে পরিনত হতে থাকে। বর্তমান শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় আসার পর কৃষিক্ষেত্রে উন্নয়নের লক্ষ্যে জাইকা’র অর্থায়নে ২০১৬ সালে  মহারশি নদীর শালচুড়া এলাকায় একটি রাবারড্যাম নির্মাণ কাজ হাতে নেয়।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর এলজিইডি’র তত্ত্বাবধানে প্রায় ১২কোটি টাকা ব্যয়ে মহারশি নদীর শালচুড়ায় নির্মাণ করা হয় একটি রাবারড্যাম। ২০১৭ সাল থেকে এ রাবারড্যামের পানিতে এলাকার শতশত কৃষক সেচ সুবিধা ভোগ করতে শুরু করে। সেচ সুবিধার আওতাভুক্ত এলাকাগুলো হচ্ছে রাংটিয়া, শালচুড়া, নলকুড়া, ডেফলাই, মরিয়মনগর, ফাকরাবাদ, সন্ধাকুড়া, বাঐবাধা, ভারুয়া, গজারীকুড়া, বনকালি, কুসাইকুড়া ও হলদিগ্রামসহ আশেপাশের আরো প্রায় ১৫টি গ্রাম। অতিতে এসব জমিগুলো অনাবাদি হয়ে পরে থাকতো।

ঝিনাইগাতী উপজেলা প্রকৌশলী মোজাম্মেল হক বলেন, রাবারড্যাম নির্মাণ করায় এসব এলাকার অনাবাদি জমিতে এখন অনায়াসে বোরো চাষ হচ্ছে। বেড়েছে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা। ফলে এসব এলাকার কৃষকদের ভাগ্যের পরিবর্তন হতে শুরু করেছে। এছাড়া রাবারড্যামের সৌন্দর্য উপভোগ করতে বিভিন্ন স্থান থেকে দর্শণার্থীরাও ভীড় করছেন এখানে। এ রাবারড্যামের পানি ব্যবস্থাপনা পরিচালনার জন্যে গঠণ করা হয়েছে একটি সমিতি। এ সমিতির সদস্য সংখ্যা ১২শ’।

প্রথম থেকে সেচ সুবিধার আওতায় কৃষক পরিবারের সংখ্যা কম হলেও বর্তমানে তা বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় ৫  হাজার কৃষক পরিবার সেচ সুবিধা ভোগ করছেন। সমিতি পরিচালনার লক্ষ্যে প্রতি একর জমি থেকে সেচ মূল্য ২শ’ টাকা নেওয়া হয়। স্বল্পমূল্যে সেচ সুবিধা পাওয়ায় দিনে দিনে কৃষকের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। মহারশি নদীর পানি ব্যবস্থাপনা পরিচালনা কমিটির সাধারন সম্পাদক চিন্তারঞ্জন হাজং বলেন, যুগযুগ ধরে এসব এলাকার জমিগুলোতে সেচ সংকটের কারনে পতিত থাকতো। এখন পুরোদমে চাষাবাদ হচ্ছে। জমিগুলোতে বেড়েছে উৎপাদন লক্ষমাত্রা।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা হুমায়ূন কবীর বলেন, রাবারড্যামের পানি সেচ কাজে ব্যবহার করে প্রায় ৪ হাজার একর জমিতে বোরো চাষ হচ্ছে। সুবিধাভোগী কৃষকের সংখ্যা প্রায় ৫ হাজার। তিনি বলেন, রাবারড্যামের পরিকল্পিতভাবে ড্রেন নির্মাণ করা হলে সুবিধাভোগী কৃষকের সংখ্যা আরো দ্বিগুণ বৃদ্ধি পাবে। কৃষিক্ষেত্রে আসবে বৈপ্লবিক পরিবর্তন।

মহারশি নদীর রাবারড্যাম পানি ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি শাহিনুর ইসলাম বলেন, সেচ সুবিধা বাড়াতে পরিকল্পিতভাবে ড্রেন নির্মাণ, রাস্তা নির্মাণের দাবী জানানো হয়েছে। কৃষকদের দাবি অনুয়াযী ইতিমধ্যেই জাইকা বেশকিছু প্রকল্প গ্রহন করেছে বলে জানানো হয়েছে।

ঝিনাইগাতী উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব এসএম আব্দুল্লাহেল ওয়ারেজ নাইম বলেন, কৃষকদের সেচ সুবিধার স্বার্থে মাটির নিচ দিয়ে ড্রেন নির্মাণ ও রাবারড্যামটির চারপাশ আরো সৌন্দর্য বর্ধন করে পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে বেশকিছু প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যেই জাইকা'র কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক করে কর্মপরিকল্পনা ও গ্রহন করা হয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে তা বাস্তবায়নের লক্ষে কাজ শুরু করা হয়েছে।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর এলজিইডি'র শেরপুরের নির্বাহী প্রকৌশী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এ রাবারড্যামের আওতায় কৃষকদের পর্যাপ্ত সুযোগসুবিধা আরো বৃদ্ধির লক্ষে বেশকিছু প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। চলতি বছরেই কাজ গুলো শুরু হয়ার কথা। কাজগুলো সম্পূর্ন হলে রাবারড্যামের সৌন্দর্য বর্ধ্বনের পাশাপাশি দিগুণ কৃষক রাবারড্যামের সুফল ভোগ করতেও সক্ষম হবে। রাবারড্যাম এলাকাটি হবে পর্যটকদের ভ্রমনের ও একটি স্থান।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App