×

জাতীয়

এলপিজির দাম বোতল প্রতি ৬৫ টাকা দাম বাড়ানোর সুপারিশ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৯:০৭ পিএম

অবশেষে এলপিজির দাম নির্ধারণে গণশুনানি করেছে জ্বালানীর দাম নির্ধারণী সংস্থা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। এ সময় ব্যাবসয়ীরা এলপিজির ‘যুক্তিসঙ্গত দাম’ নির্ধারণ করা না হলে ব্যবসা বন্ধের আশঙ্কা প্রকাশ করেন। তারা দাম বাড়ানোর পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেছে। বিইআরসির কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি এলপিজির বোতল প্রতি ৬৫ টাকা দাম বাড়ানোর সুপারিশ করেছে।

অন্যদিকে এলপিজির দাম কার্যকরের বিষয়টি আদালতের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করার দাবি জানিয়েছেন কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এর জ্বালানি উপদেষ্টা এবং জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শামসুল আলম। শুনানী অনুষ্ঠিত হলেও বিইআরসি দাম নির্ধারণ করেনি। আগামী ১৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিইআরসি আরও মতামত নেবে। পরবর্তীতে দামের বিষয়ে আদেশ দেওয়া হবে বলে জানায়।

সোমবার (১৩ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর ইস্কাটনে বিয়াম ফাউন্ডেশনের শহীদ এ কে এম শামসুল হক খান মেমোরিয়াল হলে এই গণশুনানী অনুষ্ঠিত হয়। সকাল ১১টায় শুরু হয়ে বিকাল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত গণশুনানী চলে।

শুনানিতে বেসরকারি এলপিজি কোম্পানিগুলোর পক্ষে বক্তব্য রাখেন বেক্সিমকোর চিফ কমার্শিয়াল অফিসার মুনতাসির আলম, বসুন্ধরা গ্রুপের সেলস হেড জাকারিয়া জালাল, ওমেরার চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার শামসুল হক আহমেদ, পেট্রোম্যাক্সের পরিচালক নাফিস কামাল, টোটাল গ্যাসের মনজুর মোর্শেদ।

তারা বলেন, সৌদি সিপির দাম সমন্বয় করে কমিশন এলপিজির যে দাম নির্ধারণ করেছে সেই বিষয়ে কিছুই বলার নেই। কিন্তু এলপিজি আমদানির পর দেশে পরিবহন, বোতলজাতকরণ, মজুতকরণ এবং পরিচালন ব্যয়গুলোর যে চার্জ কমিশন নির্ধারণ করেছে তা অনেক কম। একারনে ব্যবসায়ীরা লোকসানে পড়ছে। এই লোকসান বড় কোম্পানীগুলো সামাল দিতে পারলেও ছোট কোম্পানিগুলো প্রায় বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে।

এলপিজি মজুত করা ও বোতলজাত করার চার্জের ক্ষেত্রে কমিশন প্রতি কেজি ১১ টাকা ৯৩ টাকা হারে ১২ কেজির জন্য চার্জ মাত্র ১৪৩ টাকা নির্ধারণ করেছে-এটা অযৌক্তিক। এতে অপারেটররা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। একইভাবে ডিস্ট্রিবিউটরের ব্যয় ধরা হয়েছে প্রতি কেজি ২ টাকা হারে ১২ কেজির জন্য ২৪ টাকা এবং খুচরা বিক্রেতার ব্যয় ধরা হয়েছে প্রতি কেজি ২ টাকা ২৫ পয়সা হারে ২৭ টাকা- যা প্রকৃত ব্যয়ের চেয়ে অনেক কম। প্রকৃতপক্ষে এই ব্যয় যথাক্রমে ৫০+৮০= ১৩০ টাকা হওয়া প্রয়োজন। বিইআরসির কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি এলপি গ্যাসের ১২ কেজি বোতলের দাম ৬৪ দশমিক ৭৬ টাকা বাড়ানোর জন্য সুপারিশ করেছে।

বাজারে এখন ১২ কেজি এলপিজি বোতলের দাম ১ হাজার ৩৩ টাকা নির্ধারিত করেছে বিইআরসি। সেখানে কারিগরি কমিটি তা বাড়িয়ে ১ হাজার ৯৭ টাকা ৭৬ পয়সা করার সুপারিশ করেছে। বিইআরসির কারিগরি মূল্যায়ন কমিটির সদস্য সচিব কামরুজ্জামান শুনানিতে বলেন, সৌদি সিপি অনুযায়ী সেপ্টেম্বর মাসের এলপিজির সরবরাহ ব্যয় ৯১ দশমিক ৪৮ টাকা প্রতি কেজি হিসেবে ১২ কেজির বোতলের দাম ১ হাজার ৯৭ টাকা ৭৬ পয়সা করার সুপারিশ করা হয়েছে। তবে বিইআরসি এলপিজি বোতলজাতকরণ এবং মজুদকরণের চার্জ অপরিবর্তীত রাখতে চায়। কারিগরি কমিটি পরিবেশক এবং খুচরা বিক্রেতার কমিশন বাড়ানোর পক্ষে মত দেয়।

এদিকে এলপিজির দাম নির্ধারনে গণশুনানীর এবং দাম বাড়াতে ব্যবসায়ীদের প্রস্তাবের বিরোধিতা করে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এর জ্বালানি উপদেষ্টা এবং জ্বালানি বিশেষজ্ঞ শামসুল আলম বলেন, দাম কার্যকরের বিষয়টি আদালতের মাধ্যমে নিষ্পত্তি হলে ভোক্তা ও ব্যবসায়ী উভয় পক্ষই উপকৃত হবে। তিনি বলেন, ব্যবসায়ীদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এই শুনানি অনুষ্ঠিত হচ্ছে। মানুষ আগেও উপকার পায়নি, এবারো উপকার হবে বলে মনে করি না। ঘোষিত দামে এলপিজি বিক্রিতে বিইআরসি কোম্পানিগুলোকে বাধ্য করতে পারে, সেই আইন আছে। কমিশনের আইন দিয়েই দামের কার্যকারিতা বাস্তবায়ন করা সম্ভব। কিন্তু কমিশন তা করতে পারছে না। কমিশনের নির্দেশ ব্যবসায়ীরাও মানছে না। এখন দাম সমন্বয়ের মাধ্যমে ব্যবসায়ীদের দাবি পূরণ হবে। বিইআরসি আদেশ দিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু বাজারে আদেশ কার্যকর হচ্ছে না। আমি মনে করি এখন দামের আদেশ আদালতের মাধ্যমে কার্যকর হওয়া ভালো। এতে মানুষ ও ব্যাবসায়ী উভয়েই উপকৃত হবে।

উল্লেখ্য, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে প্রথমবারের মতো এলপিজির দাম নিয়ে গণশুনানি হয়। গত ১২ এপ্রিল প্রথমবারের মতো এলপিজির দাম নির্ধারণ করে দেয় বিইআরসি। ব্যবসায়ীদের আবেদনের মুখে মাত্র ৭ মাসের মাথায় সোমবার আবারও গণশুনানী অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে দুই দফায় তারিখ দিয়েও প্রথমবার লকডাউন এবং পরবর্তীতে হাইকোর্টের আদেশের কারণে গণশুনানী স্থগিত হয়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App