×

সারাদেশ

মেঘমুক্ত আকাশে বছরের প্রথম কাঞ্চনজঙ্ঘার উঁকি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১২ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৭:২২ পিএম

মেঘমুক্ত আকাশে বছরের প্রথম কাঞ্চনজঙ্ঘার উঁকি

রবিবার জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে খালি চোখে দেখা মিলেছে কাঞ্চনজঙ্ঘার অপরূপ দৃশ্য। ছবি: ভোরের কাগজ

দেশের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় এ বছরের প্রথমবারের মত হিমালয় পর্বতমালার সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ কাঞ্চনজঙ্ঘার দেখা মিলেছে। প্রতি বছর অক্টোবরের শেষ দিকে কিংবা নভেম্বরের শুরুর দিকে কাঞ্চনজঙ্ঘার দেখা মিললেও এবার আগেভাগে সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি দিকে দেখা মিলেছে কাঞ্চনজঙ্ঘার অপরুপ মনোরম দৃশ্য। মেঘমুক্ত আকাঁশে জেগে উঠেছে বিশ্বের তৃতীয় সর্বোচ্চ শৃঙ্গ কাঞ্চনজঙ্ঘা।

রবিবার (১২ সেপ্টেম্বর) সকালে জেলার তেঁতুলিয়া পিকনিক কর্নার এলাকাসহ জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে খালি চোখে দেখা মিলেছে কাঞ্চনজঙ্ঘার অপরূপ দৃশ্য। দুই মেরু রেখার বাইরে সবচেয়ে বেশি বরফ ধারণ করে রেখেছে হিমালয় পর্বতমালা। আর সূর্যের সব রঙেই যেন নিজের মধ্যে ধারণ করে রেখেছে হিমালয়ের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ কাঞ্চনজঙ্ঘা। তাই সূর্যের আলো বাড়ার সঙ্গে ক্ষণে ক্ষণে রং পাল্টাতে থাকে হিমালয় ও কাঞ্চনজঙ্ঘার রুপ।

প্রথমে টুকটুকে লাল রং দেখা গেলেও সূর্যের আলো পড়ে সেই রং লাল থেকে পাল্টে গিয়ে কমলা রঙের হয়। তারপর হলুদ রঙ হয়ে সর্বশেষ সাদা দেখা যায় কাঞ্চনজঙ্ঘার অপরূপ সৌন্দর্য। কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখার জন্য প্রতিবছর দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে পর্যটকরা তেঁতুলিয়ায় এসে ভিড় জমালেও এবার আগেই শুরু হয়েছে পর্যটকদের আগমন। তবে স্থানীয়দের দাবি চলতি বছরে প্রথমবারের মত দেখা মিলেছে কাঞ্চনজঙ্ঘার।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, সাধারণত অক্টোবর থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত শীতের আগে মেঘমুক্ত নীলাকাশে ভেসে ওঠে তুষার শুভ্র হিমালয় পর্বত ও কাঞ্চনজঙ্ঘা। তবে এবার চলতি বছরে নির্দিষ্ট সময়ের আগেই সেপ্টেম্বরের প্রথম দিকে দেখা মিলছে কাঞ্চনজঙ্ঘার।

ভোরে থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘার নয়নাভিরাম নৈসর্গিক মনোরম দৃশ্য দেখতে জেলার বাসিন্দরা ছাড়াও দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ভ্রমণপিপাসু পর্যটকরা এখানে আসেন। অনেকে পরিবার নিয়ে তেঁতুলিয়া সদরের ডাকবাংলো অথবা স্থানীয় সরকারি বেসরকারি রেস্ট হাউসে রাত যাপনের চেষ্টা করেন। এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি।

তেঁতুলিয়া আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, তেঁতুলিয়া থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘার দূরত্ব প্রায় ১৭৪ কিলোমিটার। হিমালয়ের পাদদেশে তেঁতুলিয়া অবস্থিত হওয়ায় প্রতি বছরই খালি চোখে দেখা যায় কাঞ্চনজঙ্ঘার। প্রতিবছর অক্টোবর মাসের শেষে কিংবা নভেম্বরের শুরু অথবা মাঝামাঝিতে দেখা গেলেও আকাশ পরিস্কার হওয়ার কারনে গতকাল সকালে হঠাৎ করে দেখা গেছে কাঞ্চনজঙ্ঘার অপরুপ  দৃশ্য।

বর্তমানে বিভিন্ন স্থান থেকে এ কাঞ্চনজঙ্ঘার অপরুপ দৃশ্য দেখা যাচ্ছে। এখন থেকেই দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পর্যটকেরা পঞ্চগড়ে আসছেন একনজরে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখার জন্য। অনেকে পরিবার নিয়ে তেঁতুলিয়ায় থেকে আগাম শীতের আমেজে রুপালী কাঞ্চনজঙ্ঘার দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হচ্ছেন। এখানকার মানুষজন বেশ আন্তরিক এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিও ভালো। তাই ভ্রমণপিাসু আর পর্যটকরা অনায়াসেই এসে ঘুরে যেতে পারেন উত্তরের শুরুর এলাকা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া।

তেঁতুলিয়া বাংলাবান্ধা এলাকার বাসিন্দা নাইবুল ইসলাম জানান, তেঁতুলিয়া থেকে প্রতিবছর খালি চোখে দেখা যায় কাঞ্চনজঙ্ঘা। নভেম্বর মাসে আমরা দেখতে পেতাম কিন্তু এবার সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝিতে আজ সকালে দেখতে পেলাম।

তেঁতুলিয়া উপজেলার ভজনপুর এলাকার বাসিন্দা জাহিদুল ইসলাম জানান, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে খালি চোখে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যাচ্ছে। মেঘ পরিষ্কার থাকার কারনে বাইরে থেকে অনেক মানুষ দেখতে আসেতেছে দেখার জন্য।

যেভাবে আসবেন:

ঢাকা থেকে পঞ্চগড় কিংবা তেঁতুলিয়া অথবা বাংলাবান্ধায় সরাসরি দূরপাল্লার (দিবারাত্রি) বাস রয়েছে। রাজধানী থেকে সরাসরি তেঁতুলিয়ায় যাওয়ার একাধিক পরিবহন রয়েছে। এছাড়া ঢাকা থেকে বিমানে নীলফামারীর সৈয়দপুর হয়ে বাস, মাইক্রোবাস বা প্রাইভেট কারে চড়েও তেঁতুলিয়া যাওয়া যায়। ট্রেনে যেতে চাইলে ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে পঞ্চগড় এক্সপ্রেস, একতা বা দ্রুতযান এক্সপ্রেসে করে সরাসরি পঞ্চগড় নামতে পারবেন। যাত্রাপথে ৮ থেকে ১০ ঘণ্টার ভ্রমন। ভাড়া পড়বে ৫০০ থেকে ১৫০০ টাকা পর্যন্ত।

আবাসন ব্যবস্থা:

রাত্রি যাপনের জন্য তেঁতুলিয়ায় সরকারি ৩টি ডাকবাংলোর পাশাপাশি বেরং, কাঞ্চনজঙ্ঘা, কাজী এন্ড ব্রাদার্স, সীমান্তের পাড় সহ বেশ কিছু বেসরকারী আবাসিক হোটেল রয়েছে। ডাকবাংলো গুলোতে অবস্থান করতে হলে আপনাকে আগে ভাগেই উপজেলা বা জেলা প্রশাসনের অনুমতি নিতে হবে। তবে তেঁতুলিয়া ডাকবাংলোতে থাকলে সেখান থেকেই ভালভাবে আপনি দেখতে পাবেন কাঞ্চনজঙ্ঘার অপরূপ রূপ। ডাকবাংলোর রুম ভাড়া সিঙ্গেল ৬০০ টাকা এবং ডাবল ৮০০ টাকা। এছাড়া বেসরকারী আবাসিক হোটেল গুলোতে ৪০০ থেকে ১২০০ টাকা পর্যন্ত ভাড়া পড়তে পারে। এসি কিংবা নন এসি যে কোনটাতেই থাকতে পারেন। তবে হোটেলে ওঠার আগে রুম ভাড়া ঠিক করে নিবেন।

পর্যটন কেন্দ্র:

তেতুঁলিয়া ডাক বাংলোর আশে পাশে গড়ে উঠেছে অসংখ্য ছোট বড় চা বাগান এবং কারখানাও রয়েছে কয়েকটি। ঘুরে আসতে পারেন দেশের সর্ব উত্তরের স্থান বাংলাবান্ধা জিরো পয়েন্ট এবং স্থল বন্দর। এছাড়া তেতুঁলিয়া রওশনপুরে কাজী এন্ড কাজীর চা বাগান এবং আনন্দ ধারা রিসোর্ট। এ রিসোর্টে প্রবেশ করতেমহলে আপনাকে আগে থেকে জেলা-উপজেলা কিংবা উর্ধ্বতন প্রশাসনিক কর্মকর্তা কিংবা রিসোর্টের ব্যবস্থাপকের কাছে অনুমতি নিতে হবে। এ ছাড়াও দেখে যেতে পারেন পঞ্চগড় সরকারী মহিলা কলেজে অবস্থিত দেশের একমাত্র রকস্ মিউজিয়াম। যা পাথরের যাদুঘর নামে পরিচিত। রয়েছে আটোয়ারী উপজেলায় ৪০০ বছরের পুরোনো মুঘল আমলের মসজিদ, সদর উপজেলায় মহারাজার দিঘী, ভিতরগড় দূর্গ নগরী,বোদা উপজেলায় বদেশ^রী মন্দির সহ নানা আকর্ষনীয় স্থান। যাতায়াত ব্যবস্থা বাস, থ্রি-হুইলার, ইজিবাইক কিংবা ব্যাটারী চালিত রিক্সা বা ভ্যানে যেতে পারেন। যাওয়ার আগে ভাড়া আপনাকে ঠিক করে নিতে হবে। তবে কোন পরিবহন বাড়তি ভাড়া নেয়না।

তেতুঁলিয়া আবহাওয়া কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাসেল শাহ্ জানান, দেশের উত্তরের উপজেলা তেতুঁলিয়ার আকাশে মেঘ না থাকায় আজ (গতকাল) কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা গেছে। আবহাওয়া পরিস্কার থাকলে আগামী কয়েকদিনেও এ পর্বত মালার দেখা মিলতে পারে।

তেঁতুলিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী মাহামুদুর রহমান ডাবলু জানান, প্রতিবছর তেঁতুলিয়ার বিভিন্ন  এলাকা থেকে খালি চোখে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যায়। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে পর্যটকরা কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখার জন্য তেঁতুলিয়ায় এসে ভিড় জমায়। তেতুঁলিয়া পিকনিক কর্ণারে এসে পর্যটকরা কাঞ্চনজঙ্ঘার অপরুপ দৃশ্য  উপভোগ করেন। তাই উপজেলা পরিষদ ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে পিকনিক কর্ণারে নতুন করে সাজানো হয়েছে।

তেতুঁলিয়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা সোহাগ চন্দ্র সাহা জানান, এবারে তেতুলিয়া ডাক বাংলোকে আবহমান বাংলার রূপে সাজানো হয়েছে। এখানকার নান্দনিক সৌন্দর্য পর্যটকদের আকর্ষণ বাড়াবে। এখানে পর্যটকদের থাকার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকলেও আবাসন সংকট কাটাতে সরকারী বেসরকারী ভাবে কাজ করা হচ্ছে। যে এখানে এলে সে যদি উপজেলা প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করে তাহলে তার থাকার ব্যবস্থাও আমরা করে দেই। এছাড়া কারো কোন ধরনের সমস্যা কিংবা হয়রানির শিকার হলে তারা আমাদের জানালে সেটা আমরা সে বিষয়ে ব্যবস্থা নিবো।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App