×

মুক্তচিন্তা

অপার সম্ভাবনার ব্লু ইকোনমি

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১২ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১২:২৭ এএম

ব্লু ইকোনমি বা সুনীল অর্থনীতি হলো সমুদ্রনির্ভর অর্থনীতি। সাগরের বিশাল জলরাশি এবং সমুদ্র তলদেশে বিদ্যমান সম্পদ ব্যবহার করে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন। বিশ্বব্যাংকের মতে, সমুদ্র ও সমুদ্র তলদেশে যে পরিমাণ সম্পদ রয়েছে ওইসব সম্পদের টেকসই উন্নয়ন, যথাযথ ব্যবহার হলো সুনীল অর্থনীতি। ব্লু ইকোনমি সম্পর্কে সর্বপ্রথম ধারণা দেন অধ্যাপক গুন্টার পাউলি। দিন দিন এই সুনীল অর্থনীতির ধারণা জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। সমুদ্রকে বলা হয় সম্পদের ভাণ্ডার। তেল, গ্যাস, শৈবাল, ইউরেনিয়াম, জিরকন, শামুক, ৪৭৫ প্রজাতির মাছসহ রয়েছে অফুরন্ত খনিজসম্পদ। সমুদ্রের এসব সম্পদকে আহরণ করে রপ্তানির মাধ্যমে আয় করা সম্ভব মিলিয়ন মিলিয়ন বৈদেশিক মুদ্রা। বাংলাদেশের জন্য ব্লু ইকোনমি হতে পারে অপার সম্ভাবনাময় খাত। বাংলাদেশ মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে সমুদ্র বিরোধ নিষ্পত্তির শেষে ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটার এলাকা নতুন করে যুক্ত হয়েছে বাংলাদেশের মানচিত্রে। ২০১২ সালে মিয়ানমার থেকে ৭০ হাজার বর্গকিলোমিটার এবং ২০১৪ সালে নেদারল্যান্ডসের স্থায়ী সালিশি আদালত রায় শেষে বাংলাদেশ বঙ্গোপসাগরে ভারতের থেকে ১৯ হাজার ৪৬৭ বর্গকিলোমিটার এলাকা পেয়েছে। ২০০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত মৎস্য আহরণ ও সমুদ্র তলদেশে প্রাকৃতিক সম্পদ অনুসন্ধান এবং উত্তোলনে অধিকার প্রতিষ্ঠা করে বাংলাদেশ। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) বলছে, ২০২২ সাল নাগাদ বিশ্বে যে চারটি দেশ মাছ চাষে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করবে, তার শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ। বর্তমানে গড়ে ৬ লাখ টন মাছ সমুদ্র থেকে আহরণ করা হয়। বাংলাদেশের জিডিপির মাত্র ৪-৫ শতাংশ ব্লু ইকোনমি বা সুনীল অর্থনীতি থেকে আসে। বর্তমানে আমাদের জেলেরা ৩৫-৪০ নটিক্যাল মাইলের মধ্যে থেকে মাছ আহরণ করেন, কিন্তু আমাদের সমুদ্রে অর্থনৈতিক অঞ্চল ২০০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত বিস্তৃত। গভীর সমুদ্র পর্যন্ত গিয়ে মাছ আহরণ করতে পারলে বাংলাদেশের মৎস্য রপ্তানিতে সৃষ্টি হবে নতুন মাইলফলক। বঙ্গোপসাগরকে বলা হয় সম্পদের ভাণ্ডার। তেল, গ্যাসসহ নানা মূল্যবান পদার্থের খোঁজ মিলেছে বঙ্গোপসাগরে। বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় এতসব সম্পদ থাকা সত্ত্বেও এই সম্পদের যথাযথ ব্যবহার হচ্ছে না নানা সীমাবদ্ধতার কারণে। ব্লু ইকোনমিতে নেই পর্যাপ্ত সরকারি-বেসরকারি বিনিয়োগ। মাছ ধরার ট্রলার, সমুদ্র ভ্রমণে পর্যটন, মালামাল পরিবহন ছাড়া তেমন বিনিয়োগ হচ্ছে না। এই খাতকে বিনিয়োগকারীদের কাছে আকর্ষণীয় করে তুলতে হবে বিশেষ করে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে। ইন্দোনেশিয়া, অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশগুলোতে জাতীয় আয়ের সিংহভাগ আসে সমুদ্রসম্পদের টেকসই ব্যবহারের কল্যাণে। ভিশন-২০৪১ বাস্তবায়ন করতে হলে সমুদ্রকে গুরুত্ব দিতে হবে। সমুদ্রের তলদেশে যে মূল্যবান সম্পদ রয়েছে সেসব সম্পদের যথাযথ ব্যবহার করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা জরুরি। দেশের সামুদ্রিক জলসীমায় মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, সামুদ্রিক মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ এবং টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য পদক্ষেপ নিতে হবে। সমুদ্রসম্পদের এই ভাণ্ডার আমাদের দেশের বিপুল পরিমাণ জনসংখ্যার চাহিদা মেটাতে ও প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা এনে দিতে সক্ষম, কিন্তু সিংহভাগ সমুদ্রসম্পদ এখনো প্রায় অনাবিষ্কৃত ও অব্যবহৃত। সমুদ্রসম্পদ ব্যবহার করে দারিদ্র্য বিমোচন, খাদ্য ও জ্বালানি নিরাপত্তাসহ বিপুল কর্মসংস্থান সৃষ্টির সুযোগ রয়েছে এ খাতে। ব্লু ইকোনমিকে আরো শক্তিশালী এবং এর টেকসই উন্নয়নের জন্য ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠিত করা হয় ‘ইন্ডিয়ান ওসান রিম এসোসিয়েশন (ওঙজঅ)’। ভারত মহাসাগরের বাংলাদেশসহ ২১টি দেশ নিয়ে আন্তর্জাতিক সংস্থা আইওআরএ গঠিত হয়। সমুদ্রসম্পদকে যথাযথ ব্যবহার ও ২১ দেশের মধ্যে সমুদ্রবিষয়ক পারস্পরিক সহযোগিতা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে আইওআরএ। বাংলাদেশ সরকার ব্লু ইকোনমিকে গুরুত্ব দিয়ে ইতোমধ্যে বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। সমুদ্র গবেষণা, খনিজসম্পদ অনুসন্ধান, সঠিক পরিসংখ্যান বিনিয়োগের পরিবেশ, মেগা প্রকল্প, নৌ ও বন্দর ব্যবহার সুবিধা ইত্যাদি। ব্লু ইকোনমিতে বাংলাদেশ পিছিয়ে থাকলেও যথাযথ উদ্যোগ নিয়ে বিনিয়োগের পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারলে ব্লু ইকোনমি হতে পারে বাংলাদেশের অর্থনীতির আরো একটি উল্লেখযোগ্য খাত। বাংলাদেশের এই বিশাল সমুদ্রসীমাকে সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে পারলে ব্লু ইকোনমি হতে পারে বাংলাদেশের অর্থনীতির চালিকাশক্তি। সুনীল অর্থনীতির হাত ধরে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে আসুক আরো একটি অর্থনৈতিক বিপ্লব।

কাজী মোহাম্মদ হাসান : শিক্ষার্থী, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App